কারিনা কখনো আমার মা হওয়ার চেষ্টা করেননি

সারা আলী খান
সারা আলী খান
‘স্টার কিড’ শব্দটিতে তাঁর প্রবল আপত্তি। কিন্তু তিনি এটা আবার ঠিকই মানেন— আজ ‘স্টার কিড’ বলেই তাঁর ফিল্মি সফরের শুরুটা এত মসৃণ। শ্রীদেবীকন্যা জাহ্নবীর পর এবার হিন্দি ছবির দুনিয়ায় পা রাখতে চলেছেন সাইফ আলী খান ও অমৃতা সিংয়ের মেয়ে সারা। ৭ ডিসেম্বর মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর অভিনীত ছবি কেদারনাথ। সেই সঙ্গে মুক্তি পেয়েছে তাঁর আরেক ছবি সিম্বার ট্রেলারও। ভারতের মুম্বাইয়ের ফিল্ম সিটি বলিউডে নবাগত সারা আলী খান সম্প্রতি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন কেদারনাথ ছবির প্রচারে। সে সময় সারার সঙ্গে কথা বলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য

বলিউডে আপনার অভিষেক নিয়ে অনেক জল্পনাকল্পনা হয়েছে। কখন সিদ্ধান্ত নিলেন যে এবার সত্যি সত্যি অভিনয় করবেন?

আমি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কে? আমি অপেক্ষায় ছিলাম যে কেউ যেন আমার প্রতিভা খুঁজে বের করে। আমাকে সুযোগ দেয়। ছোটবেলা থেকে আমি চেয়েছিলাম অভিনেত্রী হতে। বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষে দেশে ফেরার পর আমি পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম যে অভিনয় করব। শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। কেদারনাথ-এর মতো চিত্রনাট্য আসার পর সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলি।

আপনি মনে করেন বলিউডে পা রাখার জন্য প্রেমের ছবি সব থেকে নিরাপদ?
আমি মাত্র বলিউডে পা রেখেছি। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য আমি অতটা এক্সপার্ট নই। তবে আমি মনে করি না যে আজকাল কোনো ছবিকেই নিরাপদ বলা যাবে। ছবিটা যদি সততার সঙ্গে নির্মাণ করা হয় এবং ভালো গল্প থাকে তবেই তা নিরাপদ। কেদারনাথ শুধু প্রেমের ছবি বলেই সেফ নয়। আমি, সুশান্ত এবং গাট্টু স্যার (পরিচালক অভিষেক কাপুরের ডাকনাম গাট্টু) অনেক পরিশ্রম করে ছবিটা বানিয়েছি। সেদিক থেকে ছবিটা নিরাপদ হতে পারে।

একজন ‘স্টার কিড’ হিসেবে কতটা চাপে আছেন?
যদিও আমার ‘স্টার কিড’ শব্দটাতে আপত্তি আছি। কিন্তু কিছু করার নেই। আমি তো সত্যিই সাইফ এবং অমৃতার মতো তারকার কন্যা। ‘স্টার কিড’ শব্দটাতে আমার আপত্তির কারণ, সবাই এটার বাইরে আর কিছু দেখতে পান না। কিন্তু সাইফ-অমৃতার কন্যার বাইরে আমার অনেক পরিচয় আছে। আমি একটা মেয়ে। আমি কেদারনাথ ছবির নায়িকা। আমি অস্বীকার করছি না আমার বাবা-মায়ের পরিচয়। বাবা-মায়ের জন্যই আজ আমার শুরুটা এত মসৃণ। আমি কোনো অ্যাপয়েনমেন্ট ছাড়া ধর্ম প্রডাকশনের অফিসে গিয়েছি। রোহিত শেঠির (সারা অভিনীত সিম্বা ছবির নির্মাতা) মতো পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেছি। এসব কিছু পারিবারিক পরিচয়ের জন্যই সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ‘স্টার কিড’ আমার একমাত্র পরিচয় হতে পারে না। আর আমি কখনোই এ নিয়ে চাপে নেই। আমার মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ আছে। সবার সামনে সুঅভিনেত্রী হিসেবে আমাকে প্রমাণ করতে হবে। বোঝাতে হবে সারার পরিচয় সারাই।

কেদারনাথ ছবিতে সুশান্ত সিং রাজপুতের সঙ্গে সারা আলী খান
কেদারনাথ ছবিতে সুশান্ত সিং রাজপুতের সঙ্গে সারা আলী খান

ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথম দৃশ্যের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আমি বাবা-মায়ের সঙ্গে কোনো দিন ছবির সেটে যাইনি। কেদারনাথ–এর মধ্য দিয়ে আমি প্রথমবার কোনো শুটিং সেটে পা রাখি। উত্তরাখন্ডে ছবির শুটিং হয়েছিল। প্রথম দিন সুশান্তের (সুশান্ত সিং রাজপুত) শুটিং ছিল। আমি সেটে চুপচাপ বসে ছিলাম। পরের দিন রাত ৮টার সময় আমার জীবনের প্রথম শট ছিল। সেই দৃশ্যে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। অবশ্যই নকল বৃষ্টি। আর আমি বৃষ্টিতে ভিজছি। সত্যিকার অর্থে তখন ছিল হাড় কাঁপানো ঠান্ডা, তার ওপর বৃষ্টিতে আমি চুপচুপে ভিজে। গাট্টু স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে আমার ঠান্ডা লাগছে কি না? আমি বললাম, হ্যাঁ, খুব ঠান্ডা লাগছে। উনি বললেন যে ঠিক আছে কাঁপতে থাকো। আর এটাই ছিল আমার প্রথম শট।

বাবার কোন গুণ আপনি পেতে চান?
বাবার সহ্যশক্তি আমার থেকে বেশি। তাঁকে সাধারণত নিরাশ হতে দেখিনি। বাবা অসম্ভব মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেন। আমি তেমন হতে চাই।

আর মায়ের?
মায়ের মতো এক শতাংশ হতে পারলেই আমি খুশি। আমি মনে করি না যে উনি কখনো কারোর সঙ্গে অন্যায় কিছু করেছেন। মা সব সময় অন্যের ব্যাপারে আগে ভাবেন। আমি মনে করি না যে মায়ের মতো আমি এতটা উদার হতে পারব।

দাদির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন? দাদি শর্মিলা ঠাকুরের হাতের বাঙালি কোনো পদ কি খেয়েছেন?
না, সেই সৌভাগ্য আমার হয়নি। দাদি আমায় কখনো কিছু রেঁধে খাওয়াননি। তবে হরিয়ানার পতৌদিতে যখন গেছি, তখন দাদি আমাকে ওখানকার কালাকাঁদ আর পালংতোর নামের দুই মিষ্টি খাইয়েছেন। আসলে পতৌদিতেই আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ বেশি হতো। আমি পড়াশোনার জন্য বাইরে থাকতাম। এখন মুম্বাইতে থাকি। আর দাদি দিল্লিতে থাকেন। তাই দাদির সঙ্গে সেভাবে আমার সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।

কেদারনাথ প্রেমের ছবি। আপনি কি কখনো কারও প্রেমে পড়েছেন?
না, কারোর প্রেমে পড়িনি এখনো। কেউ আমাকে প্রেমের প্রস্তাবও দেয় না।

একসময় আপনার ওজন অনেক বেশি ছিল। অভিনেত্রী হওয়ার জন্য তো নিশ্চয়ই অনেক পরিশ্রম করেতে হয়েছে আপনাকে?
৪০ কেজি ওজন ঝরাতে হয়েছিল আমাকে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যখন পড়াশোনা করতাম, তখন আমার ওজন ছিল ৯০ কেজির ওপর। প্রচুর খেতাম। বোধহয় দুনিয়ার সবচেয়ে আনফিট মেয়ে ছিলাম আমি। আর এখন এমন হয়েছে যে ১৬ ঘণ্টা কাজ করার পরও এক ঘণ্টা জিম না করে আমি থাকতে পারি না।

কারিনা কাপুরও ফিটনেস নিয়ে খুব সচেতন। এ ব্যাপারে তাঁর থেকে কি কিছু টিপস নিয়েছেন? আপনার সঙ্গে কারিনার সম্পর্কের রসায়নটা কেমন?
কারিনা খুবই পেশাদার অভিনেত্রী। নিজের কাজের জায়গায় দুর্দান্ত। কারিনা যেভাবে নিজের পেশাগত এবং ব্যক্তিজীবনে সমতা বজায় রেখে চলেছেন তা আমাকে ভীষণ প্রেরণা দেয়। কারিনা আমার বাবার স্ত্রী। বাবার কাছে যখন যাই তখন আমরা ডিনার টেবিলে বসে অনেক বিষয়ে আলাপ করি। আমি খুব মন দিয়ে কারিনার কথা শুনি। আমাদের সম্পর্ক খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। আর এই সম্পর্ক গড়ে ওঠার পেছনে আছে তিনটি কারণ। প্রথমত, কারিনা কখনো আমার মা হওয়ার চেষ্টা করেননি। দ্বিতীয়ত, বাবা আমাকে কখনো জোর করেননি যে আমাদের মধ্যে অস্বাভাবিক একটা সম্পর্ক গড়ে তুলতে। আর তৃতীয়ত, মা আমাকে আর ইব্রাহিমকে (ভাই) অনেক আত্মবিশ্বাস, ভালোবাসা, স্বাভাবিক জীবনের মধ্যে দিয়ে বড় করেছেন। আর মা বুঝিয়েছেন যে কারিনা যেহেতু আমার বাবার স্ত্রী, তাই তিনি আমার কাছে খুবই সম্মানীয়। কোথাও তাঁর (কারিনা) প্রতি ভালোবাসাও জন্মেছে। আমার বাবাকে যিনি রোজ খুশিতে রাখছেন, তিনি আমাকেও খুশি রাখছেন।

ছোট্ট তৈমুরের সঙ্গে আপনার বন্ডিং কেমন?
তৈমুরের সঙ্গে আমার বয়সের ফারাকটা একটু অস্বাভাবিক। অনেকে মজা করে বলেন, আমি ওর মায়ের বয়সী! তবে আমি যখন তৈমুরকে দেখি, আমার খুব আনন্দ হয়। তৈমুরের চোখ আমার আর ইব্রাহিমের মতো। তাই ওর চোখের দিকে তাকালে মনে হয় ছোট্ট একটা মুখে নিজের চোখকেই দেখতে পাচ্ছি।