দুই বোন দুই সই

বড় বোন আশা ও ছোট বোন িপয়া। ছবি: কবির হোসেন
বড় বোন আশা ও ছোট বোন িপয়া। ছবি: কবির হোসেন

বিএফডিসির মান্না কমপ্লেক্সের সামনে আজমেরি আশা মুঠোফোন দিয়ে পিয়া বিপাশার ছবি তুলছিলেন। ছবিগুলো দেখে একদম পছন্দ হয়নি পিয়ার। কপাল কুঁচকে আশাকে তিনি বললেন, ‘ইচ্ছা করেই আমার খারাপ ছবি তুলেছ।’ আশা মুচকি হাসেন।
পিয়া এবার বলেন, ‘আশা, আসো তোমার ছবি তুলে দিই।’
‘উঁহু, তুলব না, তুমিও খারাপ করে তুলে দিবা।’ বলেই হাসলেন আশা। পরক্ষণেই দুই সহোদরার গলায় গলায় ভাব! ঠিক যেন দুই সই। পিয়া বিপাশার চেয়ে দেড় বছরের বড় আজমেরি আশা। কিন্তু তাঁদের মধ্যে বড়–ছোট বলে কোনো ব্যাপার নেই। এক সঙ্গে খাওয়া, কাজের ফাঁকে একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া, ঘুরতে যাওয়া, এমনকি দুজনের পছন্দ–অপছন্দগুলোও একেবারেই মিলেমিশে একাকার!
সম্পর্কে দুজনে বোন, সবচেয়ে কাছের বন্ধু, কিন্তু এর বাইরেও তাঁদের পরিচয়, দুজনই মডেল ও ছোটপর্দার অভিনেত্রী। এ পর্যন্ত আজমেরি আশা ও পিয়া বিপাশার অভিনীত নাটকের সংখ্যা আলাদা করে ৪০ ছাড়িয়েছে। মূলত তাঁদের কাজ নিয়ে কথা বলতেই গত রোববার রাজধানীর বিএফডিসি প্রাঙ্গণে একসঙ্গে আলাপে বসা। কিন্তু দুই বোনের খুনসুটি, হাসাহাসি, ঠোকাঠুকি গুরুগম্ভীর কাজের আলাপে আর ঢুকতে দিল কই!
রোববার বিকেলে বিএফডিসির শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে প্রথম আলোর মুখোমুখি পিয়া–আশা। প্রথমে দুজনের কাছেই জানতে চাইলাম, একে অপরের কাজ নিয়মিত দেখা হয় কি না? একসঙ্গেই বলে উঠলেন তাঁরা, ‘হ্যাঁ, দেখি তো।’ আশা বলেন, ‘সময় পেলেই আমরা দুজনে একসঙ্গে নিজেদের কাজ দেখি।’
কার কোন কাজটা খুব পছন্দ? পিয়া বলেন, ‘আশার সময়ের স্বপ্ন অসময়ের গল্প, শূন্য হৃদয়, চাঁদে চন্দ্রবিন্দু নেই, অবাক আগন্তুক, পোস্ট গ্রাজুয়েট নাটকগুলো আমার পছন্দের। আশার অভিনয় খুব ন্যাচারাল।’ নাটকের পাশাপাশি কয়েকটি মিউজিক ভিডিওতে পিয়াকে মডেল হিসেবে ভালো লেগেছে আশার। তিনি বলেন, ‘সুখ পাখি, ভালো থাকুক ভালোবাসা, প্লিজ বি মাইন, বিপ্রতীপ—এই নাটকগুলোতে পিয়ার অভিনয় দারুণ। আর হাবিবের “হারিয়ে ফেলা ভালোবাসা”, ইমরান মাহমুদের “ফিরে আসো না” গান দুটোয় তো পিয়া মডেল হিসেবে খুবই ভালো করেছে।’ প্রশংসার পাশাপাশি পিয়ার একটু সমালোচনাও করলেন আশা, ঠিক যেমন বড় বোনেরা করেন। বললেন, ‘আগে ভেঙে ভেঙে সংলাপ বলতো পিয়া। এখন ওর অভিনয়ে উন্নতি হচ্ছে।’
গল্পে গল্পে কয়েকটি কাজে দুজনই ভুল সিদ্ধান্তের কথা জানালেন। আশা বলেন, কিছুদিন আগে এল ক্লাসিকো লাভ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন পিয়া। পরে পরিচালক সেটাকে পুরো মিউজিক ভিডিও বানিয়ে ফেলেছেন। পিয়ার কাজটি করা ঠিক হয়নি।
এবার অভিনেত্রীর খোলস থেকে বেরিয়ে আশা–পিয়া শুরু করলেন পিঠাপিঠি বোনসুলভ আলাপ। আশা বললেন, ‘আমি অনেকটাই চুপচাপ থাকি। পিয়া হইচই, লাফালাফি পছন্দ করে।’ আশার মুখের কথা শেষ হতে না হতেই শুরু করেন পিয়া, ‘কেন? আমাদের দুজনের সবচেয়ে বড় অমিল, আমি লম্বা, আশা খাটো। আমি মোটা, ও চিকন। হা হা হা...।’ আশা ভেংচি কাটলেন।
এবার আসে সেই গতানুগতিক প্রশ্ন, এক বোন আরেকজনের বিয়ে নিয়ে ভাবেন কি না? আশা বলেন, ‘আমার বিয়ে নিয়ে ভাবি না। ভাগ্যে থাকলে যেকোনো সময় হয়ে যাবে। তবে পিয়াকে নিয়ে আমার চিন্তা হয়।’ পিয়া এ বিষয়ে মন্তব্যহীন।
সামনে আসে গরম কফি। কফিতে চুমুক দিতেই পাল্টে যায় প্রসঙ্গ। ছোটপর্দা থেকে বেরিয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়ে আমাদের কথা শুরু হয়। পিয়া বিপাশা অভিনীত একটি ছবি মুক্তিও পেয়েছে এর মধ্যে। চলছে আরও দুটি ছবির কাজ। একটির নাম জানে মন, অন্যটি এত প্রেম এত মায়া। কিন্তু আজমেরি আশা এখনো ও পথে হাঁটেননি। কারণ হিসেবে আশা বলেন, ‘ইচ্ছা নেই। মন থেকে টানে না।’
আমাদের কফির কাপে শীত এসে হানা দেয়। কাপের তলানিতে কিছুটা ঠান্ডা কফি রেখে আমাদের আড্ডা ভাঙে।