যৌন হয়রানির দায়ে সাজা পেলেন সাজিদ খান

সাজিদ খান
সাজিদ খান

চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, কৌতুক অভিনেতা ও অনুষ্ঠান উপস্থাপক সাজিদ খানের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ করেন তাঁরই সহকারী সালোনি চোপড়া, অভিনেত্রী র‌্যাচেল হোয়াইট আর সাংবাদিক কারিশমা উপাধ্যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁরা জানান, সাজিদ খান তাঁদের যৌন হয়রানি করেছেন। সাজিদ খান কীভাবে তাঁদের উৎপীড়ন করেছেন, তাঁরা তা তুলে ধরেন। আজ বুধবার সকালে বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের একটি টুইট থেকে জানা যায়, যৌন হেনস্তার অভিযোগের ভিত্তিতে সাজিদ খানকে এক বছরের জন্য বরখাস্ত করেছে ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ডিরেক্টর’স অ্যাসোসিয়েশন (আইএফটিডিএ)।

সাজিদ খান
সাজিদ খান

জানা গেছে, এরই মধ্যে সাজিদ খানের সদস্যপদ এক বছরের জন্য বাতিল করেছে আইএফটিডিএ। এক বছর পর আবারও বিষয়টি খতিয়ে দেখবে কমিটি। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সাজিদকে সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হবে কি না। পুরো বিষয়টি জানিয়ে সাজিদ খানকে একটি চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে যৌন হেনস্তা নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর এবারই প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলো। আর ভাইয়ের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন বলিউডের জনপ্রিয় কোরিওগ্রাফার, পরিচালক, অভিনেত্রী ও টেলিভিশন উপস্থাপক ফারাহ খান।

সালোনি চোপড়া
সালোনি চোপড়া

এর আগে সালোনি চোপড়া, র‌্যাচেল হোয়াইট ও কারিশমা উপাধ্যায়ের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর গত নভেম্বরে আইএফটিডিএ থেকে সাজিদ খানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। সেই নোটিশে বলা হয়, ‘আপনার লজ্জাজনক কাজগুলোর জন্য ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সম্মানহানি হয়েছে। এ ব্যাপারে কেন আপনার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, আপনার কাছ থেকে সেই বক্তব্য চাওয়া হচ্ছে। এই নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে আপনাকে জবাব দিতে হবে। তারপর সবকিছু বিবেচনা করে সংগঠন প্রয়োজনীয় পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।’

র‌্যাচেল হোয়াইট
র‌্যাচেল হোয়াইট

নির্ধারিত সময়েই আইএফটিডিএ থেকে পাঠানো নোটিশের জবাব দেন সাজিদ খান। এখানে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। আর যৌন হেনস্তার অভিযোগের ব্যাপারে সাজিদ খান টুইটারে লিখেছেন, যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা তাঁর কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবন নষ্ট করতে চান।

কারিশমা উপাধ্যায়
কারিশমা উপাধ্যায়

সাজিদ খানের জবাব পাওয়ার পর আইএফটিডিএ একটি কমিটি গঠন করে। আইএফটিডিএর পক্ষ থেকে ওই সময় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে অশোক পণ্ডিত বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষের কাছ থেকেই শুনেছি। এবার আইসিসির (ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস কমিটি অব আইএফটিডিএ) সভার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই সভায় আইনজীবী ও সংগঠনের নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকবেন।’

এর আগে সাজিদ খানের ব্যাপারে সালোনি চোপড়া জানান, তাঁর চাকরির সাক্ষাৎকারের সময় থেকেই সাজিদ খান অশ্লীল প্রশ্ন করছিলেন। সহকারী পরিচালক নয়, শুধু পরিচালককে সাহায্য করার জন্য তাঁকে নেওয়া হয়। কিন্তু সাজিদ খান তাঁকে কাজের বাইরে অদ্ভুত সময়ে ডেকে পাঠাতেন। কিন্তু তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পরেননি। সাজিদ খান তাঁকে বিকিনি পরা ছবি পাঠাতে বলেন। সালোনি চোপড়া বলেন, ‘সাজিদ খান আমাকে তাঁর পরবর্তী ছবিতে নেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু এর আগে আমাকে তাঁর বেডরুমে যেতে হবে। এসব কখনোই আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।’ সালোনি জানান, সাজিদ খান তাঁর শরীর নিয়েও নানা আপত্তিকর ও অশ্লীল কথা বলেছেন। অভিযোগে তিনি সেসব কথা তুলে ধরেন।

র‌্যাচেল হোয়াইট অভিযোগ করেছেন, ‘“হামশকল” ছবির জন্য সাজিদ আমাকে ফোন করেছিলেন। আমাকে তাঁর বাড়িতে ডেকে পাঠান। আমি রাজি হইনি। কিন্তু সাজিদ বলেন, চিন্তার কিছু নেই। কারণ, সাজিদ তাঁর মায়ের সঙ্গে থাকেন। তাঁর মা উপস্থিত থাকবেন সেখানে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর বাড়ির পরিচারিকা আমাকে সাজিদের বেডরুমে পাঠিয়ে দেয়। সাজিদ আমাকে অশ্লীল কথা বলতে শুরু করেন। হঠাৎ বলেন, কাপড় খুলে ফেলো। আরও সব অশ্লীল কথা। আমি তাঁর কথা মানতে চাইনি। এসব দেখে আমি সেখান থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসি।’

ফারাহ খান
ফারাহ খান

সাংবাদিক কারিশমা উপাধ্যায় বলেছেন, ‘ঘটনাটি ২০০০ সালের। আমি তখন একটি টিভি চ্যানেলে কাজ করছিলাম। সাজিদের ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য একটি হোটেলে গিয়েছিলাম। তখন তিনি অশ্লীল কথা বলতে শুরু করেন। তারপর আপত্তিকর কাজ শুরু করে। সেখান থেকে আমি বেরিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে তিনি জোর করে আমাকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করেন।’

এরপর সাজিদ খানের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন বিপাশা বসু, দিয়া মির্জা ও লারা দত্ত।