পাপপুণ্য-এর কথা

পাপপুণ্য নাটকে তমালিকা কর্মকার ও আবুল হায়াত
পাপপুণ্য নাটকে তমালিকা কর্মকার ও আবুল হায়াত

পাপপুণ্য নাটকটি প্রচারিত হয়েছিল ২০০১ সালের ২৬ মার্চ। নাটকটির একটা ইতিহাস আছে। ফরাসি লেখক গি দে মোপাসাঁর একটা গল্প পড়ছিলাম। সে সময়ই একুশে টিভি থেকে একটি মুক্তিযুদ্ধের নাটক নির্মাণের অনুরোধ এল। মোপাসাঁর গল্পটিও ছিল যুদ্ধের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনারা যখন ফ্রান্স আক্রমণ করল, তখন কয়েকজন অভিযাত্রী ফ্রান্স পার হচ্ছিল। ওই দলে ছিল একজন বারবণিতা। জার্মান সেনারা দলটির ওপর আক্রমণ করার পর বারবণিতাকে তাদের সঙ্গে রাত্রিযাপন করতে বলল। কিন্তু মেয়েটি বলল, দেশের শত্রুদের সঙ্গে সে আপস করবে না। তখন সেনারা সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিল। অন্যদের বাঁচাতে মেয়েটি জার্মান সেনাদের সঙ্গে চলে যায়। সে ফিরে এলে দলের অন্যরা তাকে ঘৃণা করতে শুরু করল। মানুষের এই আচরণ আর মেয়েটির কষ্ট আমাকে তাড়িত করে। তাই এই বিষয়টিকে ধরেই পাপপুণ্য নাটকটি নির্মাণ করি।

গিয়াসউদ্দিন সেলিম
গিয়াসউদ্দিন সেলিম

নৌকায় করে শরণার্থী দল নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পালাচ্ছে। সে নৌকায় একজন বারবণিতা ওঠে। সবাই তাকে ঘেন্না করে। নাটকটির একটি সংলাপ ছিল, ‘গাঙ্গের পানিতে লাশ পইড়া আছে।’ সংলাপটি যখন একজন বলছিলেন, ঠিক সে সময় আমরা দেখি, সত্যি সত্যি নদীর পানিতে একটি লাশ ভেসে যাচ্ছে। আমরা সবাই স্তম্ভিত হয়েছিলাম। এ কী করে সম্ভব! আসলে পাপপুণ্য নাটকটি অনেকগুলো ঘটনার সঙ্গেই কাকতালীয়ভাবে মিলে গিয়েছিল।
পাকিস্তানি সেনারা শরণার্থী দলটি ঘিরে ফেলেছে। এ সময় পতিতা মেয়েটিকে সবাই অবহেলা করে। সেনাদের সঙ্গে মেয়েটি যায় বলেই সবাই প্রাণে বেঁচে যায়। ফিরে এলে মেয়েটিকে কেউ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে না। কিন্তু এক শিশু তার সব দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেয়। এই চরিত্রে কাজ করেন তমালিকা কর্মকার। কাজটা করতে গিয়ে একটি দৃশ্যের কথা আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। একটি বাড়িতে আশ্রয় নিল শরণার্থী দলটি। পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা বাড়িটি খুঁজে সবাইকে ধরে ফেলে। কিন্তু ধরা পড়ার আগে সবার মধ্যে যে উত্কণ্ঠা, যে ভয়—এমন একটি দৃশ্য ধারণ করতেই আমাকে সারাটা রাত শুটিং করতে হলো। আমার মনে আছে, সন্ধ্যা সাতটায় কাজটা শুরু করেছিলাম। যখন ভোর হয়ে আসে, তখন আমাদের শুটিং শেষ হয়।