কয়েক ঘণ্টার জন্য প্রাণে বেঁচে যাই

সুজেয় শ্যাম
সুজেয় শ্যাম

৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের পর বাঙালিদের ভয় কমে গিয়েছিল। আমি আমার পরিবারের পাশে থাকার জন্য এর কদিন পরই সিলেট চলে যাই। সেখানে গিয়ে একটা অনুষ্ঠানও করি। এরপর আসে ২৫ মার্চের সেই কালরাত। একটানা কারফিউর পর আমরা যখন বাইরে বের হই, তখন পুরো সিলেট টাউন একটা কবরস্থান হয়ে ছিল। এ অবস্থায় আমি আমার পরিবারসহ সাতটি পরিবার নিয়ে গ্রামের দিকে রওনা দিই। উদ্দেশ্য ভারত সীমান্ত পেরোনো। সেই যাত্রাপথে যে যেভাবে পেরেছে, আমাদের সাহায্য করেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, ৯ মাসের মুক্তিসংগ্রামের সময় আমি বাংলার মানুষের ভেতর সেই বাংলাদেশের ছায়া দেখেছি। সিলেট টাউন থেকে আমরা গিয়েছিলাম সিলেটের ঢাকা দক্ষিণ গ্রামের দিকে। সেখানে এক জমিদার বাড়িতে সাতটি পরিবারের আশ্রয় হয়। এক সপ্তাহ ধরে আমি একেকটি করে পরিবার নিয়ে ভারতের সীমান্তে দিয়ে আসতাম। যে বাসে করে আমরা যেতাম, সেই বাসের ড্রাইভার আমাদের থেকে কখনোই ভাড়া নিত না। সবশেষ জমিদার বাড়ি থেকে জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাই আমরা, মানে আমাদের পরিবার। কিন্তু ততক্ষণে পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের অবস্থানের কথা জেনে যায়। আমরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার এক দিন পরই খবর পাই, জমিদার বাড়িটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এই কাজটা হয়। মনে হচ্ছিল, আমরাও কয়েক ঘণ্টার জন্যই প্রাণে বেঁচে যাই। জকিগঞ্জ সীমান্ত পেরোনোর পর আমি আমার পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে ১৯৭১ সালের ৮ জুনের দিকে যোগ দিই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। অনেক দুঃখ আর বেদনার পরও বলতে হয়, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ, সৌহার্দ্যের বাংলাদেশ আমি ওই ৯ মাসই দেখেছিলাম। এর আগেও না, পরেও না।