বিদায় আমজাদ হোসেন

আমজাদ হোসেন (১৯৪২–২০১৮)
আমজাদ হোসেন (১৯৪২–২০১৮)
>

কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী ও লেখক আমজাদ হোসেন মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা ৫৭ মিনিটে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। বাংলাদেশের জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্রের জন্য তিনি বিখ্যাত। ১৯৭৮ সালে গোলাপী এখন ট্রেনে এবং ১৯৮৪ সালে ভাত দে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান তিনি। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার।


উল্লেখযোগ্য ১০টি চলচ্চিত্র (পরিচালনা)
আগুন নিয়ে খেলা
দুই ভাই
নয়নমনি
পিতা পুত্র
গোলাপী এখন ট্রেনে
সুন্দরী
কসাই
দুই পয়সার আলতা
জন্ম থেকে জ্বলছি
ভাত দে

গীতিকার আমজাদ হোসেন
আমজাদ হোসেন অনেক বিখ্যাত গানের গীতিকার। ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’, ‘আমি আছি থাকব ভালোবেসে মরব’, ‘হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ’, ‘কেউ কোনো দিন আমারে তো কথা দিলো না’, ‘চুল ধইরো না খোঁপা খুলে যাবে গো’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’, ‘বাবা বলে গেলো আর কোনো দিন গান করো না’, ‘এমন তো প্রেম হয়’সহ বহু গান তিনি লিখেছেন।

সোহানুর রহমান সোহান
সোহানুর রহমান সোহান

চলচ্চিত্রের ভালো–মন্দ বলার কেউ রইল না
সোহানুর রহমান সোহান, পরিচালক
আমজাদ ভাই আমাদের চলচ্চিত্রের অভিভাবক ছিলেন। তাঁর চলে যাওয়ায় আমাদের চলচ্চিত্রে বিরাট শূন্যতা তৈরি হলো। তাঁর দীর্ঘ চলচ্চিত্রজীবনে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের উত্থান-পতন সবই তিনি দেখেছেন। চলচ্চিত্রের যেকোনো বিষয়ই তাঁর কাছে গেলে জানা যেত, শেখা যেত। আমাদের চলচ্চিত্র বর্তমানে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। ঠিক এই সময়ে তাঁর চলে যাওয়াটায় আরও ক্ষতি হয়ে গেল। এখন চলচ্চিত্রের ভালো–মন্দ বলার আর কেউ রইল না। তাঁর সঙ্গে আমার কোনো কাজের সুযোগ হয়নি, কিন্তু আমাদের সখ্য ছিল পরিবারের মতোই। তাঁকে দেখলে মনেই হতো না তিনি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন। চলচ্চিত্রের গুণী মানুষেরা একে একে সবাই চলে গেছেন। একমাত্র তিনিই বেঁচে ছিলেন। আমাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার আর কেউই রইল না। তাঁর চলে যাওয়াটা খুবই কষ্টদায়ক। মেনে নেওয়া কঠিন।

আলাউদ্দীন আলী
আলাউদ্দীন আলী

সেই ‘মানিকজোড়’ ভেঙে গেল
আলাউদ্দীন আলী, সুরকার
আমজাদ ভাই আর নেই—খবরটি শোনার পর কী যে খারাপ লেগেছে, বলা যাবে না। আমার সংগীতজীবনে তাঁর সঙ্গে কতশত স্মৃতি, বলে শেষ করতে পারব না! তাঁর চলচ্চিত্রের জন্য প্রচুর গান করেছি, যেসব গান বাংলাদেশের মানুষের কাছে আজও সমান জনপ্রিয়। একেকটি গান করতে গিয়ে দুজনের কত দিন কত রাত একসঙ্গে কেটেছে, তার হিসাব নেই। আমাদের দুজনকে একসময় চলচ্চিত্র, সংগীতাঙ্গনের মানুষেরা ‘মানিকজোড়’ বলে ডাকতেন। সেই ‘মানিকজোড়’ ভেঙে গেল। বেশ কিছুদিন ধরেই একের পর এক প্রিয় মানুষ চলে যাচ্ছেন। প্রিয় মানুষের মৃত্যুর মিছিল যেন দিন দিন বড় হচ্ছে। আর নিতে পারছি না। আমি নিজেও অসুস্থ। খবরটা শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। তাঁকে নিয়ে আর কিছু বলতে পারছি না।

সাবিনা ইয়াসমীন
সাবিনা ইয়াসমীন

তাঁকে নিয়ে বলতে গেলে শেষ হবে না
সাবিনা ইয়াসমীন, সংগীতশিল্পী
আমজাদ ভাইকে নিয়ে বলার মতো ক্ষমতা আমার আছে কি না, জানি না। তাঁকে নিয়ে বলতে গেলে কথা শেষ হবে না। আমজাদ ভাইয়ের সিনেমা যেমন আলাদা হতো, তেমন সিনেমার গানগুলোও আলাদা ছিল। তাঁর সব ছবির গান তাঁর নিজের পরিকল্পনায় হতো। সুর করতেন আলাউদ্দীন আলী। একসময় তো আমি, সৈয়দ আব্দুল হাদী, আলাউদ্দীন আলী ও আমজাদ হোসেন একটা টিম হয়ে গিয়েছিলাম। আমি ১৩ বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। এর মধ্যে আমজাদ ভাইয়ের কসাই, গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী—এই তিনটি ছবিতে গান গেয়ে তিনবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। আমজাদ ভাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আশা ছিল ফিরে আসবেন। কিন্তু আর ফিরলেন না। গুণী মানুষেরা সবাই একে একে চলে যাচ্ছেন। আমজাদ ভাই যেন ওপারে ভালো থাকেন, সেই কামনা করছি।

মুশফিকুর রহমান গুলজার
মুশফিকুর রহমান গুলজার

বহুমুখী প্রতিভার চলচ্চিত্রকার ছিলেন
মুশফিকুর রহমান গুলজার, পরিচালক
আমজাদ ভাইয়ের মৃত্যুতে চলচ্চিত্রের মানুষেরা আজ গভীরভাবে শোকাহত। তিনি একজন বহুমুখী প্রতিভার চলচ্চিত্রকার ছিলেন। তিনি চলচ্চিত্রে গল্প লিখতেন, গান লিখতেন, অভিনয় করতেন, পরিচালনা করতেন। তাঁর চলচ্চিত্র, চলচ্চিত্রের গান এখনো মানুষের মুখে মুখে। বাংলাদেশের গুণধর চলচ্চিত্রকার হিসেবে জহির রায়হান, খান আতাউর রহমানের পরেই তাঁর নামটি বলা যায়। আমজাদ হোসেন আমাদের চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগেও সময় পেলে বিএফডিসিতে চলে আসতেন। সবার সঙ্গে বসে আড্ডা দিতেন। চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতেন। তাঁর চলে যাওয়ায় আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির পক্ষ থেকে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।