টেলিভিশনের বড় অর্জন 'দুরন্ত টিভি'

দুরন্ত টিভির জনপ্রিয় নাটক বাবা থাকে বাসায়–এর দৃশ্য
দুরন্ত টিভির জনপ্রিয় নাটক বাবা থাকে বাসায়–এর দৃশ্য

২০১৮ ছিল অস্থিরতার বছর, রাজনৈতিকভাবে। লগ্নিকারীরা এমন অস্থির সময়ে সাধারণত বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হন না। তারা ওপর এ বছর কনটেন্টে অভিনব চিন্তার অভাবও লক্ষ করা গেছে। গত বছর টিভি চ্যানেলে আমরা যেমন ‘আয়নাবাজি অরিজিনাল সিরিজ’, ‘ছবিয়াল রিইউনিয়ন’-এর কিছু প্রকল্পে কয়েকজন মেধাবী তরুণ নির্মাতার অভিনব/নিরীক্ষাধর্মী কাহিনিচিত্র দেখেছিলাম, এবার সেটা খুব কম দেখা গেছে।

তবে এ বছর নতুন যেই জোয়ারটা দেখা গেছে, সেটা হলো অনলাইনে বড় বাজেটের কাহিনিচিত্রের প্রচার। যেমন নুহাশ হুমায়ূনের কথা না বললেই নয়। গত বছর টিভির জন্য সে ‘হোটেল আলব্যাট্রোস’ নামে খুব ভালো একটা কাহিনিচিত্র বানিয়েছিল, এবার ওয়েব প্ল্যাটফর্মের জন্য সে কিছু ভিন্নধর্মী কাজ করেছে। শুধু নুহাশ নয়, এ বছর অনলাইনভিত্তিক কিছু বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও তরুণ নির্মাতাদের কাজ বেশ প্রভাব ফেলেছে ইন্ডাস্ট্রিতে। বাজেট এবং নিরীক্ষাধর্মী কাজের ভাবনার কারণে সেখানে হাত খুলে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে এ বছর সাহসের অভাব দেখা গেছে। সাহস বলতে বড় বাজেট লগ্নির সাহসের অভাব। আমার জানামতে, আমি বলতে পারব টিভিতে এবার কেউ তুলনামূলকভাবে বড় বাজেটের কোনো কাজ নিয়ে এসেছে।

এবার আমাদের টিভি কাহিনিচিত্রের অঙ্গনে যে বড় ব্যাপার ঘটেছে সেটা হলো ‘ডিরেক্টর্স গিল্ড’-এর নির্বাচন। এটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এবারের কমিটিটি ভালো কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে। নতুন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা যেভাবে কাজ করছেন, তা দেখে এ বছর আমি নতুন করে আশাবাদী হয়ে উঠেছি। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে আমরা নতুন ক্যাম্পেইনও শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা বুঝতে পেরেছি, এই ইন্ডাস্ট্রিতে যদি ডিসিপ্লিন না আসে তাহলে আমরা এগোতে পারব না।

এ বছর দেশি চ্যানেলে ডাবকৃত বিদেশি সিরিয়ালের প্রচার বেড়ে গেছে। আমাদের এই ক্ষেত্রে কিছু করার ছিল না। আসলে দেশপ্রেমের বিষয়ে আমরা চ্যানেলগুলো, শিল্পীরা ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো এক না হলে আমাদের এগোনো কোনোভাবেই সম্ভব না।

এ বছর টেলিভিশনে সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে বলতে পারি ‘দুরন্ত টিভি’কে। এটা আমাদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত বটে। এর থেকে আমাদের বোঝা উচিত যে জগাখিচুড়ি চ্যানেল থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বিনোদনভিত্তিক চ্যানেলে সংবাদ আনলে চলবে না, আর সংবাদভিত্তিক চ্যানেলে বিনোদন নয়। তাহলে বিশেষায়িত চ্যানেলগুলো যার যার কাঙ্ক্ষিত দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারবে। যেমনটা দুরন্ত টিভি পৌঁছেছে। কোনো নিউজ স্ক্রল ছাড়া, ঘণ্টায় ঘণ্টায় সংবাদ বুলেটিন ছাড়া একটি চ্যানেল এ বছর এখন প্রতিটি পরিবারের পৌঁছে গেছে। আমিও আমার সন্তানের কারণে প্রতিদিন এই চ্যানেলটি দেখছি এখন। আমাদের এমন ধারা, এমন চ্যানেল আরও তিন–চার বছর আগেই প্রয়োজন ছিল। তবে ২০১৮-তে এসে আমরা সেই পথে হাঁটা শুরু করেছি, এটাই এখনকার জন্য ইতিবাচক। আশা করব, নতুন বছরে নতুন সরকারের অধীনে আমাদের টেলিভিশন মিডিয়া থাকবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, আমরা আরও বড় পরিসরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পাব।

লেখক: নির্মাতা ও অভিনেতা