দুই ঈদের নাটকগুলো বেশ ভালো লেগেছে

শবনম ফারিয়া
শবনম ফারিয়া

পুরো বছরের হিসাব–নিকাশটা একবাক্যে বলা কঠিন। একটু বিস্তারিতই বলতে হবে। তবে যা বলব, সেটা একান্ত আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমার কাছে এ বছরের সেরা কাজের মধ্যে দুই ঈদের নাটকগুলো বেশ ভালো লেগেছে। তবে এর আগের বছর, মানে ২০১৭ সালে যতটা ভালো হয়েছিল, সে রকমটা নয়। দুই বছরের তুলনায় ২০১৮ সালে ভালো নাটকের সংখ্যা একটু কম ছিল। তবে এ বছরের মধ্যে সেরা কাজ ছিল মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভাইয়ের ‘ভাই ব্রাদারস এক্সপ্রেস’-এর কাজগুলো। আয়েশা, সোনালী ডানার চিল নামের নাটকগুলো তো ছিল মনে রাখার মতো। তবে এটা সত্যি, এ বছর নাটক নির্মিত হয়েছে বেশি। কারণ, এ বছর শুধু টিভির জন্য নয়, ঘটা করে অনলাইনের জন্য নাটক হয়েছে। কিন্তু আমি তো আসলে টেলিভিশনের দর্শক। টেলিভিশনে মিস করলে তবেই অনলাইনে সেটা দেখি। সে অর্থে টেলিভিশনে দেখার মতো কাজ কম ছিল মনে হয়।

তবে এটা ঠিক, এসবের মধ্যেই আমার সহশিল্পীরা নিজেদের জায়গা পাকাপোক্ত করেছেন। বিশেষ করে ইরফান সাজ্জাদ সারা বছর নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। গত বছরও তানজিন তিশার কাজ অতটা ভালো লাগেনি আমার। কিন্তু এ বছর ও নিজেকে চিনিয়েছে। আসলে অভিনয় চর্চার বিষয়। সেই চর্চাই ওকে পোক্ত করছে। অপূর্ব ও আফরান নিশোর কথা তো আলাদা করে বলার কিছু নেই। অপূর্ব ভাই রোমান্টিক নাটকের জন্য সেরা। নিশো ভাই বরাবরই দুর্দান্ত অভিনেতা। তৌসিফ ও জোভান আগের কয়েক বছর খুব ভালো ভালো চরিত্রে অভিনয় করলেও এ বছর খানিকটা ম্রিয়মাণ। আমার মনে হয়, দুজনেরই চরিত্রের দিকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। মেহ্জাবীন তো কয়েক বছর ধরেই ভালো করছেন। মনোজ প্রামাণিকও আলাদা করে নজর কেড়েছেন। সাবিলা নূর বরাবরই ভালো অভিনয় করেন। মম আপুর কথা তো বলারই দরকার নেই। নুসরাত ইমরোজ তিশার কথাও বলতে হবে বিশেষ করে। কারণ তাঁর অভিনয় দেখেই তো আমার অভিনয় করার আগ্রহ হয়েছে। গত কয়েক বছরের মতো এ বছরও তিনি তাঁর শীর্ষ অবস্থানটি ধরে রেখেছেন।

এবার পরিচালনা ও চিত্রনাট্য নিয়ে কিছু বলতে চাই। আমাদের নাটকের যে বাজেট, তাতে পরিচালকদের নিয়ে কিছু বলার নেই। তাঁদের কষ্ট ও চেষ্টা আমরা নিজের চোখে দেখি। এত কম টাকায় একটা পরিচ্ছন্ন গল্পকে উপস্থাপন করা যে কতটা কঠিন, সেটা একমাত্র পরিচালকেরাই বোঝেন। তাঁদের এই চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু কিছু চিত্রনাট্য পড়ে হতাশ হয়ে পড়ি। মনে হয় হাতেগোনা কয়েকজন চিত্রনাট্যকার ছাড়া আর কেউ ভালো চিত্রনাট্য লিখতে পারছেন না। এই জায়গাটা বদলাতে হবে। সুন্দর চিত্রনাট্য একজন দক্ষ পরিচালকের হাতে পড়লেই কেবল আমরা সেরাটা দিয়ে কাজ করতে পারব।

এবার আমার কথা বলি, এ বছর বেশ কিছু চরিত্র নিয়ে নিরীক্ষা করেছি। গ্রামের চরিত্রও করেছি। কিন্তু এতটুকু বুঝেছি, দর্শক বোধ হয় আমাকে শহরের চরিত্রে বেশি দেখতে চান। আমি যেহেতু অভিনেত্রী হতে চাই, তাই সব ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করার ইচ্ছা আছে। তবে দেবী চলচ্চিত্রটির জন্য এ বছর ঈদুল আজহার পরে নাটক করা কমিয়ে দিয়েছিলাম। ছবিটিতে শুধু অভিনয় নয়, প্রচারণাসহ সবকিছুতে অংশ নিয়েছি। সিনেমাটার সাফল্য আমাকে দারুণভাবে আন্দোলিত করেছে। আমি এখনো চলচ্চিত্রটির জন্য সাড়া পেয়েই যাচ্ছি। বলতে পারেন পুরো সিনেমা নিয়ে ভ্রমণটা খুব উপভোগ করেছি আমি।

নতুন বছরে প্রত্যাশাটা হলো, আমাদের নতুন নতুন অনেক ভালো নির্মাতা আছেন। কিন্তু বাজেটের সমস্যার কারণে তাঁরা ঠিকঠাক কাজ করতে পারেন না। আমাদের এখানে ধারাবাহিক নাটক নিয়ে খুব বেশি চিন্তাভাবনা করা হয় না, যেটা পাশের দেশে হয়। এ কারণেই আমাদের কাজ ভালো হওয়া সত্ত্বেও দর্শকের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। তাই সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষতা আর আমাদের মেধা দিয়ে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলেই বদলাবে আমাদের বিনোদনমাধ্যম।

লেখক: অভিনেত্রী