ঢাকার শ্রোতারা বঞ্চিত হবে কেন

বাদ্যের তাল বলে কথা। আসন ছেড়ে উঠে আলতো দুলছিলেন প্রবীণ চিত্রকর ও সাবেক সাংসদ যোগেন চৌধুরী। চিরকুট তখন মঞ্চে, গাইছিল ‘না জানি দুনিয়া’ গানটি। পশ্চিমবঙ্গে দলটির জনপ্রিয়তা আছে। প্রথমবার নজরুল মঞ্চ মিলনায়তনে তাই সেরা পরিবেশনাটুকু না দিয়ে থামেনি বাংলাদেশের এই ব্যান্ড।

কলকাতা রবীন্দ্রসরোবরের নজরুল মঞ্চে শেষ হলো বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীদের নিয়ে বাংলা গানের মহাযজ্ঞ বাংলা উৎসব। গান শুনিয়েছেন বাংলাদেশের ১৬ জন শিল্পী ও একটি ব্যান্ড এবং ভারতের ১৮ জন শিল্পী ও একটি ব্যান্ড। বন্ধুদেশ ও নিজের রাজ্যের এতজন শিল্পীকে একত্রে কখনো পায়নি কলকাতাবাসী। তাই তাদের আহ্লাদ ও আনন্দ ছিল চোখে পড়ার মতো। উৎসবের সাজে কেবল যে নজরুল মঞ্চ সেজেছিল তা নয়, গণ্যমান্য অতিথিরাও এসেছিলেন এ উৎসবকে আরও অর্থপূর্ণ করে তুলতে। ঢাকা থেকে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার, ছিলেন ভারতের সাবেক সাংসদ চিত্রকর যোগেন চৌধুরী, উদ্যোক্তা নীলিমা ঘোষ, প্রযোজক অরিন্দম শীল, বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর অ্যান্ড এইচওসি বি এম জামাল হোসেন, কাউন্সিলর শেখ সাইফুল ইসলামসহ আরও অনেকে। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাবেক বেশ কয়েকজন অধ্যাপককে সপরিবারে আসতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে চিরকুটের পরিবেশনা সবচেয়ে বেশি রোমাঞ্চিত করেছে শ্রোতাদের। এমনকি উপহার হিসেবে শ্রোতাদের মধ্যে দলের টি–শার্ট বিলি করার কারণে একটু বাড়তি ভালোবাসা পেয়েছেন তাঁরা। তাঁদের গান যে এই বাংলাতেও জনপ্রিয়, তা দর্শকসারির অনুরোধ থেকেই বোঝা গিয়েছিল। এই আসরে বাংলাদেশের যে শিল্পীরা অনবদ্য পরিবেশনা দিয়ে দর্শক–শ্রোতাকে আটকে রেখেছিলেন, তাঁরা হলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ফাহমিদা নবী, ডলি মণ্ডল, খায়রুল আনাম শাকিল, বুলবুল ইসলাম, চন্দনা মজুমদার, সামিনা চৌধুরী ও এন্ড্রু কিশোর। আর ভারতের চন্দ্রবিন্দু, রূপঙ্কর বাগচি থেকে লোপামুদ্রা মিত্র, নচিকেতা চক্রবর্তী, অনুপম রায়, ইন্দ্রানী সেনরা ছিলেন আগ্রহের কেন্দ্রে। একটি সফল উৎসব আয়োজকদের তৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলে এই মঞ্চে আবারও এ উৎসব করার আভাস দিয়েছেন তাঁরা।

উৎসবে বাংলাদেশের খাবারের যে স্টলটি ছিল মিলনায়তনের বাইরে, সেটিও সংগীতপ্রেমীদের আকর্ষণের বিষয় ছিল। সিলেটের সাতকরা দিয়ে মুরগির মাংস, ইলিশ চিতই, ছানার জিলাপি, বাংলার মণ্ডা মন ভরে খেয়েছেন তাঁরা। হাওড়া থেকে আসা প্রৌঢ় দম্পতি অধ্যাপক দেবাশীষ দে সরকার ও সুপ্রিয়া দে সরকার জানালেন, বাংলাদেশের খাবারের অনেক নাম শুনেছি। আজ খেয়ে ভীষণ ভালো লেগেছে। বিশেষ করে সাতকরার মাংসটা অসাধারণ। বেঙ্গল এক্সপ্রেসের পরিচালক জিনাত চৌধুরী জানান, এখানকার অনেক মানুষের বাংলাদেশের খাবারের প্রতি স্মৃতিকাতরতা রয়েছে। সে জন্যই এগুলো নিয়ে আসা। কলকাতায় এসব খাবারের একটি আউটলেট করার ভাবনা আছে তাঁদের।

কলকাতার পথে পথে ফেস্টুন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ছবির পাশে রুনা লায়লা ও আশা ভোসলেকে দেখা যাচ্ছে তাতে। ঢাকার শিল্পীরা কলকাতায় যে জনপ্রিয়, এবার সেটা বিশ্বাস না করে পারা যায় না। এমনকি বিরাট সব বিলবোর্ডে জয়া আহসান, আবীর চট্টোপাধ্যায় ও কৌশিক গাঙ্গুলির ছবি। বিজ্ঞাপনের ভাষাটা এমন—মুক্তি পাচ্ছে বিজয়া, নতুন বছরের সেরা উপহার। বাংলাদেশের দুই প্রবাদপ্রতিম শিল্পী রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীন দুজনেই সেদিন কলকাতায়। রুনা গাইবেন আর আরতি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই মঞ্চ থেকে জীবনকৃতি সম্মাননা নেবেন সাবিনা ইয়াসমীন।

বাংলাদেশের গান ও খাবার—দুটিই বৈচিত্র্যময়। সেটা টের পেয়েছেন কলকাতাবাসী। ফলে এ উৎসব আবারও করতে হবে আয়োজকদের। তবে একবার এটি বাংলাদেশে করা গেলে মন্দ হয় না। আবাহনী মাঠ কিংবা আর্মি স্টেডিয়ামে উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের মতো করে বাংলা গানের আসরের আয়োজন করলে ঢাকাবাসী দারুণ এ আয়োজন থেকে বঞ্চিত হবে না।