শরণার্থীর বঞ্চনার ছবি দিয়ে পর্দা উঠল চলচ্চিত্র উৎসবের

চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ছবি: প্রধম আলো
চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ছবি: প্রধম আলো

১০ বছরের লিনা যুদ্ধে তার মা–বাবা ও পরিবারকে হারায়। সে তার ছোট বোন ও প্রতিবেশী মরিয়মকে নিয়ে অন্য শরণার্থীদের সঙ্গে তুরস্কে রওনা হয়। ইস্তাম্বুল যাওয়ার পর তারা এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। পুরোপুরি অচেনা এক শহরে লিনার বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা উঠে এসেছে তুরস্ক-জর্ডানের যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘দ্য গেস্ট’–এ। পরিচালনা করেছেন তুরস্কের নির্মাতা আন্দাজ হাজানেদারগলু। তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া সিরিয়ান শরণার্থীদের দুঃখ-বিগ্রহ, ত্যাগ ও বঞ্চনার বিষয়ে তৈরি এ ছবি দিয়ে পর্দা উঠল ১৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে নয় দিনের এ উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে অতিথিরা নান্দনিক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মননশীল দর্শক তৈরি করে আলোকিত সমাজ গঠনের প্রত্যয় প্রকাশ করেছে। এ উৎসব চলবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে ছিল উৎসবের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য সচিব আবদুল মালেক। উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উৎসব কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ম হামিদ ও স্বাগত বক্তব্য দেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সাহিত্য, চলচ্চিত্র, সংগীত এগুলো শুধু বিনোদনের জন্য নয়। এর বাইরেও অনেক কিছু এর সঙ্গে যুক্ত। মানুষকে উচ্চতর মার্গে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। সে সঙ্গে রুচিকেও পরিশীলিত করে। চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম। জাতি গঠনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সব মানবিক অনুভূতি উঠে আসে। একটি ভালো চলচ্চিত্র একজন মানুষ ও সমাজকে বদলে দিতে পারে। মানুষের জন্য কাজ করতেও অনুপ্রাণিত করে।

উৎসবটির ১৭তম আসরে এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানারোমা, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলড্রেন্স ফিল্ম, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম বিভাগে ৫৮টি দেশের ২১৮টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এর মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ১২২টি, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৯৬টি। ১৯৯২ সালে প্রথম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

রাজধানীর সাতটি স্থানে উৎসবের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। উৎসবের মূল কেন্দ্র জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে চলবে শিশুতোষ চলচ্চিত্র। এ ক্ষেত্রে শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকেরাও আসতে পারবেন। এ ছাড়া সকাল ১০টা, বেলা ১টা ও ৩টার প্রদর্শনী শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে দেখতে পারবে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। এর বাইরে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা। কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। যেখানে অভিভাবকেরাও শিশুদের সঙ্গে এই চলচ্চিত্রগুলো বিনা মূল্যে উপভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া সকাল ১০টা, বেলা ১টা ও ৩টার প্রদর্শনী শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে দেখতে পারবে। জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সব প্রদর্শনী সবাই বিনা মূল্যে উপভোগ করতে পারবেন। আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় আগে এলে দেখবেন ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনেও প্রদর্শনীগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। একই সুযোগ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনেও মিলবে। এখানকার প্রদর্শনীগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। শুধু যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমা হলে ব্লকবাস্টার কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত প্রদর্শনীর বিনিময়ে দর্শকেরা উৎসবের চলচ্চিত্রগুলো উপভোগ করতে পারবেন।

‘দ্য গেস্ট’ ছবি দিয়ে শুরু হয় এবারের উৎসব। ফাইল ছবি
‘দ্য গেস্ট’ ছবি দিয়ে শুরু হয় এবারের উৎসব। ফাইল ছবি

উৎসবের অংশ হিসেবে কাল শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার এ দুই দিন চলচ্চিত্রে নারীর ভূমিকা নিয়ে ‘পঞ্চম আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস্ কনফারেন্স’ আলিয়াঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধন করবেন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। এ আয়োজনে নারী নির্মাতারা তাঁদের কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাসমূহ এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে বিশ্বের খ্যাতিমান নারী নির্মাতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পাবেন। আয়োজকেরা মনে করছেন বাংলাদেশের মতো দেশে এ ধরনের কনফারেন্স সময়ের দাবি, কেননা বিশ্ব পরিবর্তনে নারীর ভূমিকা সামনে আসা উচিত। সপ্তদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল আকর্ষণগুলোর একটি এই উইমেন্স কনফারেন্স।

১৪ জানুয়ারি প্রথমবারের অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্মাতাদের মিথস্ক্রিয়ামূলক দিনব্যাপী সেমিনার ‘ওয়েস্ট মিটস ইস্ট’। দ্বিতীয়বারের মতো ১৩-১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ক্রিটিকস্ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের আয়োজনে এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সমালোচক ফেডারেশনের সহযোগিতায় ‘এশিয়ান ফিল্ম ক্রিটিকস্ অ্যাসেম্বেলি’ অনুষ্ঠিত হবে।