নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত নির্মাতারা

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাচন উপলক্ষে এফডিসিতে সব বয়সী পরিচালকের আড্ডা। ছবি: সংগৃহীত
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাচন উপলক্ষে এফডিসিতে সব বয়সী পরিচালকের আড্ডা। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি শেষ হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই সময় নায়ক-নায়িকা ও প্রযোজক-পরিচালকদের নির্বাচনী জনসংযোগে দেখা গেছে। নির্বাচন শেষ হয়ে সরকার গঠন হলেও চলচ্চিত্র পরিচালকেরা এখনো ছাড়েননি নির্বাচনী মাঠ। তাঁরা ভোট চেয়েই চলছেন। এখন তাঁরা নিজেদের সমিতির নির্বাচনের জন্য ভোট চাচ্ছেন। ২৫ জানুয়ারি চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীরা ভোটারদের যেখানেই পাচ্ছেন ভোট চাচ্ছেন। ভোটাররা পরিচালকদের বাড়ি বাড়িও যাচ্ছেন। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির এই নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) প্রাঙ্গণ বেশ জমজমাট। গত কয়েক দিন ধরে এমনটাই দেখা গেছে।

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দুটি প্যানেল। এর মধ্যে একটি মুশফিকুর রহমান গুলজার-বদিউল আলম খোকন আর অন্যটি বাদল খন্দকার-বজলুর রাশেদ চৌধুরী। এ ছাড়া মহাসচিব পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরিচালক সাফি উদ্দিন সাফি নির্বাচন করবেন। একেক প্যানেলে ১৯ জন করে প্রার্থী রয়েছেন। মোট ভোটার ৩৬১ জন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে থাকছেন আবদুল লতিফ বাচ্চু। সহকারী কমিশনার হিসেবে থাকবেন শফিকুর রহমান ও ডি এইচ নিশান।

‘দুই নয়নের আলো’ সিনেমা পরিচালনার মধ্য দিয়ে ২০০৫ সালে পরিচালক হিসেবে নাম লেখান মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। এক যুগে আরও কয়েকটি সিনেমা বানিয়ে প্রশংসিত হন তিনি। এবার নির্বাচনে আন্তর্জাতিক ও তথ্যপ্রযুক্তি সচিব পদে লড়ছেন তিনি। বললেন, ‘চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এবার নতুন নতুন সরকার, নতুন মন্ত্রী—আমরা যাঁরাই নির্বাচিত হই সাংগঠনিকভাবে মন্ত্রীর কাছে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানাব। আমি একজন পরিচালক, সিনেমা বানানোই হচ্ছে আমার কাজ। যখন দেখি সিনেমা বানানো শেষে প্রদর্শন নিয়ে জটিলতায় ভুগি তখন কষ্ট লাগে। দেশের প্রত্যেক জেলায় যেন একটি করে সিনেপ্লেক্স চালু করা হয়, সেই দাবিও আমরা জানাব।’

২৫ জানুয়ারি এফডিসিভিত্তিক চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন জমজমাট এফসিডি। সকাল থেকেই ভোটারদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। আড্ডা চলে এফডিসি ক্যানটিন, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির পাশের মাঠ, আমতলাসহ বিভিন্ন জায়গায়।

বর্তমান সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘নির্বাচন আসলে আমাদের চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির জন্য উৎসবের মতো। অনেকেই এখন কাজ করছেন না। যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরাও দেশের বিভিন্ন লোকেশনে শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের সবার একটা মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে এফডিসি। আমরা যাঁরাই নির্বাচিত হই না কেন, সবাই আমরা চলচ্চিত্র পরিচালক, আমরা এক হয়ে কাজ করব।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মহাসচিব পদে লড়ছেন সাফি উদ্দিন সাফি। তিনি এর আগে দুবার যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমারও ইচ্ছে ছিল, পুরো প্যানেল নিয়ে নির্বাচন করার। কিন্তু সভাপতি পদে যিনি থাকার কথা ছিলেন, তিনি শেষ মুহূর্তে থাকতে পারেননি। তাই একাই লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

প্রতিশ্রুতি নয়, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নই আমার লক্ষ্য—এই স্লোগান নিয়ে নির্বাচনের মাঠে আছেন সাফি। তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাচন বরাবরের মতো এবারও উৎসব। আমাদের সিনিয়র পরিচালকেরাও এখন এফডিসিতে আসছেন, সবার সঙ্গে কথা হচ্ছে, খুব ভালো লাগছে। আমাদের দেশের সিনেমার সোনালি অতীত ছিল। কয়েক বছর ধরে, চলচ্চিত্র ভালো যাচ্ছে না। দেশের চলচ্চিত্র আবারও মাথা তুলে দাঁড়াবে, এই প্রত্যাশা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

২০১৭-১৮ নির্বাচনে গুলজার-খোকন প্যানেল নির্বাচিত হয়ে এখন দায়িত্ব পালন করছে। ২৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বিজয়ীরা ২০১৯-২০ সালের জন্য চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।