ছবিমেলায় আসছেন অরুন্ধতী রায়

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। ছবি: প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। ছবি: প্রথম আলো

‘পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় আলোকচিত্রীদের অনেকে আমাদের এই উৎসবের সঙ্গে জড়িত আছেন। আমাদের এই উৎসব অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এশিয়ার প্রধান আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে ছবিমেলা। এবার আয়োজনে আমরা আলোকচিত্রীদের বাইরেও শিল্পকলার সঙ্গে জড়িত অনেক গুণী ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করেছি, যাঁরা পৃথিবীকে অন্যভাবে দেখেন। পরামর্শ নেওয়ার জন্য তাঁদের উপদেষ্টা পরিষদে রেখেছি। ’

‘ছবিমেলা’র দশম আসর সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পান্থপথে দৃক গ্যালারির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথাগুলো বললেন উৎসবের পরিচালক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। বরাবরের মতো দৃক পিকচার লাইব্রেরি লিমিটেড এবং পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট যৌথভাবে উৎসবের আয়োজন করছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হবে।

শহিদুল আলম জানান, ছবিমেলার উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, খুশী কবির, নেপালের প্রকাশক ও লেখক কুন্ডা দীক্ষিত, ভারতীয় জনপ্রিয় আলোকচিত্রী রঘু রায়, অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, সাহিত্য সমালোচক, ইতিহাসবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। এবার উপমহাদেশের প্রখ্যাত লেখিকা অরুন্ধতী রায়ও আসছেন আর্টিস্ট টকে অংশ নিতে। শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলে অমর্ত্য সেনও যোগ দেবেন উৎসবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১০ দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী শুরু হবে ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখে, চলবে ৯ মার্চ পর্যন্ত। বিশ্বের ২০ দেশের ৩৫ জন আলোকচিত্রীর তোলা ছবি প্রদর্শিত হবে এবারের মেলায়। থাকছে ২৭টি প্রদর্শনীর আয়োজন। এ ছাড়া রিকশা ও ভ্যানে হবে বিশেষ প্রদর্শনী, যা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে। সাধারণ দর্শনার্থীরা দৃক-পাঠশালার নবনির্মিত ভবন, দৃক গ্যালারি ১ ও ২ (ধানমন্ডি), দৃক গ্যালারি ৩ (পান্থপথ) এবং আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আলোকচিত্রীর তোলা ছবি দেখতে পারবেন। ছবি প্রদর্শনীর পাশাপাশি থাকবে নিয়মিত আলোচনা সভা ও কর্মশালা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ছবি কথা বলে। যে কথাগুলো মুখের কথা দিয়ে বোঝানো যায় না, সেগুলো ছবি দিয়ে বোঝানো হয়। সিরিয়ায় যখন যুদ্ধ শুরু হলো তখন অনেক অভিবাসী দেশ ছেড়ে পালাচ্ছিল। এটা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। প্রচুর নিবন্ধ লেখা হয়েছে। ‍কিন্তু বেশির ভাগ ইউরোপীয় তাদের গ্রহণ করছিল না। সে সময় একটি ছোট বালকের মৃতদেহ সমুদ্র তীরে পড়ে ছিল। একজন আলোকচিত্রী সেই ছবিটি ক্যামেরাবন্দী করেন। ছবিটি ছাপা হয়নি এমন কোনো পত্রিকা নেই। তারপর সমগ্র ইউরোপের টনক নড়ল। অভিবাসীদের ব্যাপারে সেখানকার কিছু দেশ নমনীয় হলো। এ থেকেও প্রমাণ হয়, বক্তৃতা দিয়ে যা হয় না, তা ছবি দিয়ে হয়। একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধেও এমনটা হয়েছিল। এ রকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। মানবাধিকারকর্মী খুশী কবিরও তাঁর বক্তৃতায় ছবির গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন।

২০০০ সাল থেকে প্রতি দুই বছর অন্তর আয়োজিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক এ আলোকচিত্র উৎসব। এবারের উৎসবে একজন দেশি ও একজন বিদেশি আলোকচিত্রীকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হবে। তবে কারা পাচ্ছেন, সেটি আপাতত চমক হিসেবে রাখছেন আয়োজকেরা। উৎসবের উদ্বোধনের দিন ঘোষণা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পাঠশালার অধ্যক্ষ ও দেশের খ্যাতনামা আলোকচিত্রী আবির আব্দুল্লাহ, উৎসবের কিউরেটর এ এস এম রেজাউর রহমান ও তানজিম ওয়াহাব।

ছবিমেলার বিস্তারিত জানা যাবে chobimela.org ও ফেসবুকে ছবি মেলার পাতায়।