'শনিবার বিকেল' ছবির ভাগ্য নির্ধারণ রোববার

‘শনিবার বিকেল’ ছবিতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, তিশা ও পরমব্রত
‘শনিবার বিকেল’ ছবিতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, তিশা ও পরমব্রত

কেউ বলছেন আটকে দেওয়া হয়েছে। কেউ-বা বলছেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিচালক ফারুকী বলছেন, এসব ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। সেন্সর বোর্ড বলছে ‘শনিবার বিকেল’ বা ‘স্যাটারডে আফটারনুন’ সিনেমাটি নিয়ে এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি। তবে দুই কর্মদিবসের মধ্যেই সিনেমাটি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সেন্সর বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সে হিসেবে বলা যায়, আগামী রোববার ভাগ্য নির্ধারিত হবে ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার।

পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমা শুটিংয়ের শুরু থেকে আলোচিত। দেশের গুণী ও জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীদের পাশাপাশি এই সিনেমায় বিশ্বের নামকরা তারকারাও যুক্ত হয়েছেন। একেবারে গোপনে শুটিং করার কারণে এই সিনেমা নিয়ে উৎসুক মানুষের আগ্রহও বাড়ে। কেউ বলছেন, সিনেমাটি হোলি আর্টিজান ঘটনার পটভূমিতে নির্মিত। সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য জমা দেওয়ার পর যাঁরাই সিনেমাটি দেখেছেন, তাঁদের অনেকে এই ধরনের মতও দিয়েছেন। কিন্তু পরিচালক ফারুকী বলছেন, সিনেমাটি মোটেই এই ঘটনা নিয়ে নয়।

সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নিজামূল কবীর আজ বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে সিনেমাটি প্রথমবার দেখার পর সেন্সর বোর্ড সদস্যরা তাঁদের পর্যবেক্ষণ জানান। এরপর আরেক দফা সিনেমাটি দেখার ব্যবস্থা করা হয়। সিনেমা দেখার কাজ শেষ হলেও সিদ্ধান্ত নিতে রোববার পর্যন্ত সময় লেগে যাবে। এর বেশি আপাতত আর কিছুই বলা সম্ভব নয়।

সিনেমাটি নিয়ে প্রথম আলো কথা বলে সেন্সর বোর্ডের সচিব মোহাম্মদ আলী সরকারের সঙ্গেও। তিনি জানান, দুই দফা দেখার পরও সিনেমাটির কয়েকটি সংলাপ নিয়ে এখনো কিছু পর্যবেক্ষণ রয়ে গেছে। তা ছাড়া পুরো সিনেমা নিয়ে বোর্ড সদস্যরা তাঁদের পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন। এখন দেখা যাক কী হয়। সিনেমাটি দেখলে এ-ও বোঝা যায়, এটি হোলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী আক্রমণ ও জিম্মিদশাকে অবলম্বন করে।

শুটিংয়ের এক বছর পর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে ছাড়পত্রের জন্য সম্প্রতি জমা দেওয়া হয় মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মাস দুয়েকের মধ্যে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার। কিন্তু সেন্সর বোর্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এটা সম্ভব নয়। ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে সিনেমাটির মহড়ায় অংশ নেন অভিনয়শিল্পীরা। মহড়া শেষে গত বছরের ৫ জানুয়ারি ঢাকার কোক স্টুডিওতে ‘শনিবার বিকেল’ ছবির শুটিং শুরু হয়। বাংলাদেশ থেকে এই সিনেমা প্রযোজনা করেছে জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ছবিয়াল, আরও আছেন ভারতের শ্যাম সুন্দর দে।

বরাবরের মতো মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবারও তাঁর ছবির কাজ গোপনে শেষ করেছেন। ‘শনিবার বিকেল’ ছবির শুটিংয়ের গোপনীয়তার কারণে সবার মনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়। অনেকে ধারণা করছেন, ছবিটি হোলি আর্টিজানের হামলার ঘটনা নিয়ে, যেমনটা ভেবেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্যরাও। তবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘এটা ঠিক যে অনেকেই বলছেন ছবিটি হোলি আর্টিজান ঘটনা নিয়ে। আমি বলব, ছবিটি হোলি আর্টিজান ঘটনার অনুপ্রেরণায় নির্মিত।’

সেন্সর বোর্ড সদস্যদের পর্যবেক্ষণের ব্যাপারটি নিয়ে ফারুকীর কাছে জানতে চাইলে তিনি আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো কিছুই জানি না। সেন্সর বোর্ড তাদের মতামত জানিয়ে চিঠি দিলে আমি তার উত্তর দেব। এর বাইরে আপাতত আমার পক্ষে আর কিছুই বলা সম্ভব নয়।’

এদিকে ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি নিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘ছবিটি ভালো লেগেছে। আমার মনে হয়েছে, ছবিটির গল্পের সঙ্গে হোলি আর্টিজান হামলার ঘটনার যথেষ্ট মিল রয়েছে। তবে এ বিষয়ে পরিচালক ভালো বলতে পারবেন। কারণ, পরিচালক সরাসরি হোলি আর্টিজান বিষয়ে এই সিনেমায় কিছুই বলেননি, একটি আক্রমণ বুঝিয়েছেন। তবে গল্পটা আসলে একই। কারিগরি দিক থেকে ছবিটি খুবই সমৃদ্ধ।’

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের আরেক সদস্য ও চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘ভালো চলচ্চিত্রের সব গুণ এই সিনেমায় আছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী অন্য ধরনের একটি সিনেমা বানাতে চেয়েছেন। আশা করছি, দর্শকদের ছবিটি ভালো লাগবে।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর এই ছবিতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, তিশা, ইরেশ যাকের, মামুনুর রশীদ প্রমুখ। আছেন ফিলিস্তিনের অভিনেতা ইয়াদ হুরানি ও ভারতের কলকাতার পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।

হোলি আর্টিজানে ট্র্যাজেডি যেমন আছে, তেমনি আছে বীরত্বগাথা—এসব আমাদের অনুপ্রেরণা। এটা কোনোভাবেই হোলি আর্টিজান ঘটনা নিয়ে নয়। আমাদের গল্পের চরিত্রগুলোর সঙ্গে হোলি আর্টিজানের ঘটনার কোনো মিল নেই। তবে হোলি আর্টিজানের চরিত্রগুলোর আত্মত্যাগ, কোথাও কোথাও বীরত্বগাথা আছে। এই বীরত্ব এবং আত্মত্যাগ থেকে আমরা উৎসাহিত হয়েছি। আসলে আমি অন্য রকম একটা গল্প বলতে চেয়েছি।

ছবির নাম ‘শনিবার বিকেল’ বা ‘স্যাটারডে আফটারনুন’ কেন? মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘একটা শনিবার বিকেল, সুন্দর বিকেল, ঝরঝরে বিকেল, চমৎকার বিকেল কী করে দুঃসহ ও বিভীষিকাময় হয়ে উঠল, তা-ই বলতে চেয়েছি। কিন্তু আমাদের গল্পটা শেষ পর্যন্ত বিভীষিকাময় থাকল না, আমাদের গল্পটা শেষ পর্যন্ত আশার। আমাদের গল্পটা বিভীষিকার ব্যাকড্রপে বানানো হলেও শেষ হয় আশা নিয়ে।’