নিজের পরিচয়ে পরিচিত মিশৌরী

মিশৌরী। ছবি: খালেদ সরকার
মিশৌরী। ছবি: খালেদ সরকার

মিশৌরীর সঙ্গে প্রথম দেখা হলে আপনার মনে হবে এক দুরন্ত, চঞ্চল কিশোরী। কিন্তু আলাপে আলাপে যখন জানবেন, বছরখানেকের মধ্যে স্নাতক শেষ করবেন, পড়াশোনার ফাঁকেই কাজ করেছেন ক্যামেরার সামনে ও পেছনে; তখন আপনি নিশ্চিত হবেন, চঞ্চল এই মেয়েটি তাঁর কিশোর বয়স পার করে এসেছেন এরই মধ্যে। তারুণ্যে ভরপুর এই মেয়েটির পুরো নাম মিশৌরী রশীদ।

বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এখন পরিচিত মুখ মিশৌরী। অভিনয় করেছেন নাটকেও। এই পরিচিত মুখের সঙ্গে দেখা হলো গত রোববার সন্ধ্যার পর। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তাঁদের বাসায়। যাঁরা এখনো মিশৌরীকে চিনতে পারেননি, তাঁদের জন্য একটু সহজ করে দেওয়া যেতে পারে। মিশৌরী অভিনেত্রী ও সংগীতশিল্পী রাফিয়াথ রশীদ মিথিলার ছোট বোন। তবে মিথিলার ছোট বোন সূত্রে নয়, এই সাক্ষাৎকারের হেতু মিশৌরীর নিজের কাজের জগৎ। কথার শুরুতে জানালেন, ‘আমার পরিবারটা সংস্কৃতিমনা। এ কারণে ছোটবেলা থেকেই গান–নাচ শিখেছি। শুধু আমি না, আমার সব বোন ও একমাত্র ভাইও এই সাংস্কৃতিক আবহের মধ্যে বড় হয়েছে। আমার মা-বাবা দুজনই তাঁদের সন্তানদের এভাবেই তৈরি করেছেন।’ এই আবহটাই তাঁকে এগিয়ে রেখেছে। আর ক্যামেরার সামনে তাঁকে কাজের আগ্রহ জুগিয়েছে দুই বোন—মিথিলা ও মিম। মিশৌরী বললেন, ‘ছোট বেলায় তাঁদের কাজ টেলিভিশনে দেখতাম, তখন থেকেই মনে হতো আমিও কেন করব না। বিশেষ করে মিথিলা ও মিম আপু মিলে ক্লোজ আপের একটা বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছিল। ওই সময়ই আগ্রহটা আরও বেড়ে যায়।’

ওই বিজ্ঞাপন পরিচালনা করেছিলেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। মডেল হিসেবে মিশৌরীর প্রথম বিজ্ঞাপনচিত্রের পরিচালক তিনি। সে বিজ্ঞাপনচিত্রটি ছিল একটা মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কাজ। তারপর একে একে ১৫টিরও বেশি বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছেন মিশৌরী। তবে নাটক বা টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন একটু কম। বছর দু-এক আগে অভিনয় করেছিলেন হিমেল আশরাফের জোনাকির আলো নামের একটি নাটকে। তারপর গত বছর করেছেন নুহাশ হুমায়ূনের পরিচালনায় পিৎজা ভাই নাটকে। জানতে চাই, নাটক কম করার কারণ কী?

উত্তর প্রস্তুত ছিল মিশৌরীর—‘আমি আসলে সময় কম পেতাম। নিজের পড়াশোনা তো ছিলই, পাশাপাশি বিজ্ঞাপনী সংস্থা হাফ স্টপ ডাউনে অমিতাজ রেজা ভাইয়ার সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি টানা দুই বছর। আমার জন্য এটাও একটা বড় অভিজ্ঞতা ছিল।’ এই জায়গায় আরও একটা তথ্য দেওয়া যেতে পারে, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মিশৌরীর পড়াশোনা বিজ্ঞাপন ও বিপণন নিয়েই।

তাহলে ভবিষ্যতে কি ক্যামেরার পেছনে থিতু হওয়ার ইচ্ছা মিশৌরীর? সামনের পরিকল্পনা বলার আগে বললেন, ‘বিজ্ঞাপন করতে গিয়ে এক রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। আর অভিনয় করতে গিয়ে আরেক রকম। আমার প্রথম নাটকে অভিনয় করার সৌভাগ্য হয়েছিল সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে। তিনি বেশ কিছু জরুরি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আর পিৎজা ভাই করে দারুণ সাড়া পেয়েছি। নুহাশ হুমায়ূনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাটাও বেশ ভালো।’ মিশৌরী এই অভিজ্ঞতাগুলো নিয়েই সামনে এগোতে চান। কাজ করতে চান নিয়মিত। তবে অনেকে নাকি মনে করে অভিনয়জগতে প্রতিষ্ঠিত বোনদের কারণে মিশৌরী বেশ সুবিধা পাচ্ছেন! এই কানকথার জবাব মিশৌরী দিলেন এভাবে— ‘আমার বোনেরা এই মাধ্যমের পরিচিত মুখ। তাঁদের কারণে হয়তো যোগাযোগটা সহজ হয়েছে, কিন্তু ভালো না করলে নিয়মিত কাজ করা কঠিন। যেহেতু আমি নিয়মিত কাজ করছি, তার মানে একটু হলেও ভালো করছি। এই ভালোটা করার চেষ্টাই সারা জীবন করব। পাশাপাশি পড়াশোনা শেষ করে বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করার ইচ্ছা আছে।’

সেই ইচ্ছার প্রতিফলন কতটা হয় এখন সেটাই দেখার জন্য অপেক্ষা।