জনপ্রিয়তার কোনো কারণ হয় না: অনুপম

৪ জানুয়ারি কলকাতার নজরুল মঞ্চ মিলনায়তনের বাংলা উৎসবে গাইতে আসেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় শিল্পী অনুপম রায়। সাজঘরে আড্ডা হয় এ শিল্পীর সঙ্গে। এই ফিচারে ধরা রইল সেই আড্ডার খানিকটা নির্যাস।
অনুপম রায়। ছবি: আর টিভির সৌজন্যে
অনুপম রায়। ছবি: আর টিভির সৌজন্যে

বাড়িয়ে দেওয়া হাত আলতো করে ধরলেন অনুপম রায়। ঠোঁটের কাছে এগিয়ে ধরলেন নিজের কান, আশপাশের নানা শব্দের ভিড়েও যেন শুনতে অসুবিধা না হয়। ‘প্রথম আলো? সেখান থেকে গত সপ্তাহেও ফোন পেয়েছি। কী বিষয়ে যেন মন্তব্য জানতে চাইল’, বললেন তিনি। মঞ্চে ওঠার আগে গল্প বা আড্ডার ধার দিয়ে হাঁটেন না শিল্পীরা। পাছে মনের পারদ চড়ে যায়! তাই বললেন, ‘গান করে ফিরি, তারপর কথা হবে।’

গ্রিনরুম নামের ঘরটার গায়ে হলুদ রঙের চুন। ভেতরের চেয়ারগুলো সাদা কাপড়ে মোড়া। এক চেয়ারে অনুপম রায় বসে, পাশের চেয়ারে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো তাঁর গিটার। খানিক বাদেই ওটা হাতে মঞ্চে ওঠার জন্য প্রস্তুত তিনি। এরই মধ্যে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়েছে ফটোশিকারির দল। প্রযোজক ও অভিনেতা অরিন্দম শীল এসে বসেন শিল্পীর পাশে। নিচু স্বরে আলাপ সেরে চলে যান। আপ্যায়নের লোকেরা জানতে চান, কাটলেট চলবে কি না। মুহূর্তে চলে আসে সবজির কাটলেট। সাজঘরে ছিলেন বাংলাদেশের কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী। তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই আমরা—অভিনেতা খন্দকার তাজমি নূর, কবি নওশাদ জামিল, চিত্রকর জাহাঙ্গীর আলম ও অনুপম রায়। ফেব্রুয়ারি মাসে আবারও ঢাকায় আসবেন অনুপম। বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটিতে গান শোনাবেন।

ভিডিও দেখে গান!
বাংলাদেশের ছবি দেবীরজন্য অনুপম গেয়েছেন ‘দু মুঠো বিকেল’ গানটি। লিখেছেন ও সুর করেছেন। কীভাবে তৈরি হলো গানটি? ‘ভিডিও দেখে’, অনুপমের সোজাসাপ্টা উত্তর। কিন্তু কীভাবে?
‘এটাই আমাদের পেশা। দেবীরগানের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছিল, গানটা আগেই শুট হয়ে গিয়েছিল। সেটার একটা ফিক্সড টেম্পো ছিল। সেই টেম্পোর ওপর আমাকে গানটা তৈরি করতে হয়েছে। দৃশ্য যা ছিল, সেগুলো থেকে আমি যথেষ্ট অনুপ্রেরণা পেয়েছি। সব সময় কাজগুলো এ রকম হয় তা নয়। আগে গান তৈরি হয়, তারপর শুট হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হয়েছিল উল্টো। জিনিসটা মজার। আমার ভালোই লেগেছে।

অনুপমের পছন্দ বাংলাদেশের গান
বাংলাদেশের অনেক গান পছন্দ করেন অনুপম। বললেন, ‘অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশের গান শুনছি। বাচ্চু ভাই থেকে শুরু করে, মাইলস, অর্ণব—এঁদের গানগুলো আমার খুব ভালো লাগে। বাংলাদেশের গানের সব থেকে যেটা ভালো লাগে, খুব সুন্দর সুর এগুলোর। খুব ইউনিক সুর, খুব ভালো লাগে।

উৎসবে সাবধান

অনেক উৎসব হচ্ছে আজকাল। একে সুলক্ষণ বলে মনে করেন অনুপম রায়। তবে যেখানে অনেক শিল্পী গান করবেন, সেই উৎসবগুলোর দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হয়। বিশেষত লাইট, সাউন্ড সম্পৃক্ত জায়গাগুলোয়। শিল্পীর কাছ থেকে ভালো পরিবেশনা পেতে চাইলে এ জিনিসগুলোর দিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। যাঁরা শিল্পীদের এ চাহিদাগুলো ভালোভাবে জানেন, তাঁদেরই দায়িত্বগুলো দেওয়া ভালো।

জনপ্রিয়তার কোনো কারণ হয় না

অনুপমের গানগুলো কেন জনপ্রিয় হয়? অকারণে হয়, তা নয়। অনুপম মনে করেন, যদি কারণ থাকত, সেটা জেনে নিয়ে বারবার ওই গানগুলোই ঘুরেফিরে করতাম। তাহলে সব কটি গান জনপ্রিয় হয়ে যেত। আমরা জনপ্রিয় হওয়ার উপাদানটা জানি না। বছরে কুড়িটা গান করলে দুটো জনপ্রিয় হয় বা সেটাও হয় না। কিন্তু মানুষ ভালোবেসেছে, সেটা আমাদের ভাগ্য।

টালিউডে ছবি করলেই অনুপমের গান?

মানুষ পছন্দ করে বলেই হয়তো চায়। মানুষকে অনেক ধন্যবাদ। মানুষের রুচি পাল্টায়, সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা পাল্টায়। তার মধ্যে কোথায় যেন আমার গান স্থান পেয়েছে। সে জন্য আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।