পর্দা নামল পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে

সপ্তদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী দিনে অতিথি, বিচারক, পুরস্কারজয়ী ও চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা
সপ্তদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী দিনে অতিথি, বিচারক, পুরস্কারজয়ী ও চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা

খুব তাড়াতাড়িই যেন কেটে গেল সপ্তদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের দিনগুলো। ১০ জানুয়ারি রাজধানীর পাঁচটি ভেন্যুতে একযোগে বসেছিল সপ্তদশ এই আসর। প্রদর্শিত হয়েছে ৭২টি দেশের ২১৮টি চলচ্চিত্র। বিভিন্ন ভাষা আর সংস্কৃতির চলচ্চিত্র ছিল এই তালিকায়। দেশে–বিদেশের বেশ কিছু চলচ্চিত্র দেখার আনন্দ দিয়ে পর্দা নামল সপ্তদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে সমাপনী অনুষ্ঠানে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার দেওয়া হয়। উৎসব পরিচালক ও রেইনবো ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি আহমেদ মুজতবা জামাল ঘোষণা দেন, ২০২১ সালের ১১ থেকে ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে অষ্টাদশ ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসব।

উৎসবের সমাপনী আয়োজনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহ্রিয়ার আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্যসচিব আবদুল মালেক। এ সময় উৎসবের জুরিবোর্ডের সদস্য ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন স্থপতি রবিউল হুসাইন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম হামিদ প্রমুখ। আন্তর্জাতিক এই আয়োজনে অন্য দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে ছায়াছবির মাধ্যমে পরিচিত হয়েছেন দর্শকেরা। একই সঙ্গে বিভিন্ন সংস্কৃতির চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সংস্পর্শ পেয়েছেন নানা সংস্কৃতির চলচ্চিত্রকারদের। এককথায়, সবারই ঘটেছে সাংস্কৃতিক বিনিময়। এমনটাই মন্তব্য ছিল সমাপনী মঞ্চে থাকা বক্তাদের।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা বিভিন্ন শাখায় বিজয়ী সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার তুলে দেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে। বেস্ট অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড পায় এক যে ছিল রাজা। বেস্ট ক্রিটিক অ্যাডওয়ার্ড পেয়েছে মাসুম আজিজের সনাতন গল্প। এবার সেরা শিশু চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে কাজাখস্তানের লিটল প্রিন্সেস অব আওয়ার সিটি।

উইমেন ফিল্মমেকার বিভাগে সেরা শর্টফিকশন চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে যুক্তরাজ্যের ফাতেমা আহমাদির ‘বিটার সি’, একই বিভাগে বিশেষ ক্যাটাগরির ডকুমেন্টারির পুরস্কার অর্জন করেছে লারা লির ‘বারকিনেব বাউন্টি’, একই বিভাগে সেরা প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার পেয়েছে লিসা গাজির ‘রাইজিং সাইলেন্স’। এ ছাড়া একই বিভাগে সেরা ফিচার ফিল্মের পুরস্কার পেয়েছে ফিলিপাইনের ডিনাইজ ও’হারার ছবি ‘মামাং’। স্পিরিচুয়াল ফিল্ম সেকশনে সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে ইরানের শাহরিয়ার পৌরসেদিয়ানের ‘রিটার্ন’; এই বিভাগে সেরা ফিচার ফিল্মের দার গাইয়োর ‘নামদেব ভাউ’। এশিয়ান চলচ্চিত্র বিভাগে ‘সিগন্যাল রক’ ছবির জন্য সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছেন ফিলিপাইনের রচি ভেরা। পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয় সনদ ও ক্রেস্ট।

৯ দিনব্যাপী জমকালো এই উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন দেশ-বিদেশের ১৩০ জনের বেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। উৎসবে এসে কেমন লাগল—জানতে চাইলে বিদেশি অনেক অতিথিই জানিয়েছেন মুগ্ধ হওয়ার অনুভূতি। চীন থেকে প্রথমবারের মতো আসা নির্মাতা হুয়ো মাং–এর উৎসবের পরিবেশটা বেশ ভালো লেগেছে। তবে কলকাতার নির্মাতা দেবানিক কুলু দর্শকের সংখ্যা নিয়ে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ভারতের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিদিন উপচে পড়া দর্শক থাকে। এখানে সেটা পাচ্ছি না।’ শ্রীলঙ্কার অভিনেত্রী দুলিকা মারাপানি এবারই প্রথম এসেছেন উৎসবে। বলেন, ‘এখানকার মানুষের ব্যবহার খুব ভালো লেগেছে। খুব সহজেই মানুষকে আপন করে নিতে পারে।’ তাজিকিস্তানের নির্মাতা শারাফাত অ্যারাবোভা বলেন, ‘এই উৎসবের মাধ্যমেই আগের চেয়ে বাংলা চলচ্চিত্র বিষয়ে অনেক বেশি জানা সম্ভব হয়েছে।’

এবার রাজধানীর জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তন, জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তন ও সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা, যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টার সিনেমাসে এ উৎসবের বিভিন্ন চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

এবার উৎসবে বেশ কিছু চলচ্চিত্র সাড়া ফেলেছিল। উদ্বোধনী চলচ্চিত্র ‘দ্য গেস্ট’, ‘আইসোলেশন’, ‘দেবী’, ‘কমলা রকেট’, ‘রং বেরঙের কড়ি’, ‘হৃদয়ের রংধনু’, ‘এক যে ছিল রাজা’, ‘বোতল ভূত’, ‘রাইজিং সাইলেন্স’, ‘খেজদির’, ‘পাঠশালার কথা’ উল্লেখ করা যায়।