প্রযোজকের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন নায়ক

আবদুল আজিজ ও বাপ্পী চৌধুরী
আবদুল আজিজ ও বাপ্পী চৌধুরী

প্রযোজক আবদুল আজিজের হাত ধরে তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় নারায়ণগঞ্জের ছেলে বাপ্পী চৌধুরীর। এই প্রতিষ্ঠানের সিনেমায় অভিনয় করে আলোচিত হন তিনি। অল্প সময়ে প্রেক্ষাগৃহের মালিকদেরও আস্থা অর্জন করেন। কিন্তু মাঝে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ইস্যুতে এই নায়কের সঙ্গে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। পরিস্থিতি এমন হয় যে আবদুল আজিজকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন এই নায়ক। তবে এখন তিনি মনে করছেন, পুরো ব্যাপারটি আসলে ভুল ছিল। তা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন বাপ্পী। নায়কের এমন উপলব্ধিতে খুশি প্রযোজক। বললেন, ‘বাপ্পী আমার ঘরের ছেলে। আমার বিশ্বাস ছিল, একদিন তাঁর ভুল ভাঙবেই, সেটাই হয়েছে। এটা আমার ভালো লেগেছে।’

ছয় বছর আগে জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে ‘ভালোবাসার রং’ সিনেমা দিয়ে নায়ক হিসেবে বাপ্পীর অভিষেক ঘটে। প্রথম সিনেমা দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ নায়ক হিসেবে বাজিমাত করেন। এরপর তিন বছরে ছয়টি ব্যবসাসফল ও দর্শকপ্রিয় সিনেমা উপহার দেন বাপ্পী। ২০১৫ সালের পর থেকে এই প্রতিষ্ঠানের আর কোনো ছবিতে দেখা যায়নি এই নায়ককে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি নতুন নায়ক নিয়ে ঠিকই একের পর এক সিনেমা বানিয়ে গেছে।

জাজ মাল্টিমিডিয়া দেশের সিনেমা তৈরির পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবি তৈরিতেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট একটা অংশ বিষয়টিকে যৌথ প্রতারণা হিসেবে মনে করে। এই প্রতিষ্ঠানের সিনেমা প্রদর্শন ও নির্মাণ ঠেকাতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন কেউ। এই দলে ছিলেন নায়ক বাপ্পী চৌধুরীও। নতুন বছরের শুরুতে এসে এই নায়কের উপলব্ধি, জাজ মাল্টিমিডিয়ার বিরুদ্ধে তাঁরা তখন যে আন্দোলন করেছেন, তা ভুল ছিল।

হঠাৎ কেন এমন উপলব্ধি হলো? বাপ্পী চৌধুরী বলেন, ‘নতুন বছর নতুন পরিকল্পনা করছি। প্রযোজক আবদুল আজিজ আমাকে চলচ্চিত্রে এনেছেন। আমরা একসঙ্গে অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছি। চলচ্চিত্রের দুর্দিনে তিনি এই চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ করেছেন। কত ভাবনার আদান-প্রদান আমাদের হয়েছে। সম্প্রতি মিমের (চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম) বাসায় যাই। সেখানে চলচ্চিত্রের অনেকের সঙ্গে আবদুল আজিজ ছিলেন। আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। আমার আচরণের জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়েছি।’

বাপ্পী চৌধুরী তাঁর এই উপলব্ধিকে চলচ্চিত্রের স্বার্থে সবাইকে ইতিবাচকভাবে দেখার অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্রশিল্পের স্বার্থে মনে করেছি, এত বড় একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চলচ্চিত্রের কারও বিরোধ থাকা উচিত না। আমি কাজ করতেও পারি। একজন নায়ক হিসেবে যে কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই আমার অভিনয় করা হতে পারে। জাজ মাল্টিামিডিয়া এর বাইরে নয়। এসব নিয়ে বাঁকা চোখে কিছু দেখার নেই।’

আজ শনিবার সকালে আবদুল আজিজ বলেন, ‘বাপ্পীর ওপর আমার কোনো ক্ষোভ কখনোই ছিল না। সে তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছে, এতেই আমি খুশি। আমি তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছি। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছেও বলতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি চলচ্চিত্র বানাতে চাই। চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে অন্য ব্যবসা থেকে এই সেক্টরে বিনিয়োগ করতে এসেছি। অনেকের সহযোগিতা আর ভালোবাসা যেমন পেয়েছি, তেমনি অসহযোগিতা ও আক্রোশের শিকার হয়েছি। আমি নিজের সিদ্ধান্তের ওপর অবিচল থেকে সিনেমা বানিয়ে যাচ্ছি। আমরা সবাই যেহেতু দেশের সিনেমার উন্নয়ন চাই, তাই কোনো বিবাদ নয়, নিজেদের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্মান বজায় রেখে কাজ করে যাওয়া উচিত।’

ফেসবুকে বাপ্পী তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘দেশে সিনেমা নির্মাণ কমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। প্রযোজকেরা এখন ভয়ে বিনিয়োগ করছে না। এফডিসিতে নাকি সিনেমা বানানোর পরিবেশ নেই, সেখানে এখন একে অন্যের পেছনে লেগে থাকে। অথচ ২০১৭ সালে রোজার ঈদে “নবাব” ও “বস ২” সিনেমা মুক্তির আগে চলচ্চিত্র পরিবার থেকে আন্দোলন শুরু হয়, সেই আন্দোলনে আমিও যোগ দিয়েছিলাম। তখন বলা হয়েছিল, যৌথ প্রযোজনার নামে যৌথ প্রতারণা বন্ধ হলে আমাদের দেশের শিল্পীদের কাজ বৃদ্ধি পাবে, ঘুরে দাঁড়াবে চলচ্চিত্র, সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। দেশের সিনেমার উন্নয়নের কথা ভেবে যোগ দিয়েছিলাম আন্দোলনে, বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম যৌথ প্রযোজনার বিরুদ্ধে।’

বাপ্পী তাঁর পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘যে প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে আমি আজ বাপ্পী চৌধুরী, যে মানুষটির জন্য আমি আজ নায়ক, সেই আজিজ ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করেছি। যে মানুষটা আমার চলচিত্রের সবচেয়ে কাছের ছিল, তাঁর থেকে দূরে সরে যাই। কিন্তু কী পেলাম? সিনেমার কোনো উন্নতি হয়েছে? সিনেমা নির্মাণ বেড়েছে? নতুন বছর শুরু হয়েছে আমদানি করা বিদেশি ছবি মুক্তি দিয়ে। যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবি হলেও তো আমাদের দেশের অনেক কলাকুশলী আর নায়ক-নায়িকা কাজের সুযোগ পেতেন। কিন্তু এখন আমদানি করে ছবি নিয়মিত মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। হিতে বিপরীত হলো। অথচ দেশের সিনেমার উন্নয়ন হোক—এটা আজিজ ভাই সব সময় চেয়েছেন। সিনেমা ডিজিটালাইজেশনের পথ বদলে দিয়েছেন। দুঃখিত আজিজ ভাই আপনাকে ভুল বোঝার জন্য।’