পারভীন বাবির অজানা ১০

পারভীন বাবি
পারভীন বাবি

সেদিন ছিল ২০০৫ সালের ২০ জানুয়ারি। মৃত্যুর দিন তিনেক পর পচন ধরা নিথর দেহটা উদ্ধার করা হয়েছিল। তাঁর সঙ্গী ছিল মানসিক ব্যাধি আর ডায়াবেটিস। কোনো মানুষের সঙ্গ ছাড়া এভাবেই চলে গিয়েছিলেন বলিউড তারকা পারভীন বাবি। না জানি কত অজানা কথা সঙ্গে নিয়ে গেছেন তিনি। সাবেক প্রেমিক পরিচালক মহেশ ভাট যদিও চলচ্চিত্র কিংবা সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে পারভীনের ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানিয়েছেন। কিন্তু এরপরও রহস্যেই থেকে গেছে পারভীন বাবির জীবন।

পারভীন বাবিই প্রথম বলিউড তারকা যিনি টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে মডেল হয়েছেন। ১৯৭৬ সালের ১৯ জুলাই সাময়িকীটির ইউরোপীয় সংস্করণের প্রচ্ছদে দেখা যায় তাঁকে।

১৯৭২ সালে মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন পারভীন। তখনই সুযোগ পান অভিনয়ের। এর পরের বছর মুক্তি পায় তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র চরিত্র।

অভিনেতা ড্যানি, কবির বেদি এমনকি অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তাঁর প্রেমের খবর চাউর হয়েছিল। পরিচালক মহেশ ভাটের সঙ্গে শেষমেশ প্রণয়ে জড়ান। মহেশ সেটা বরাবরই স্বীকার করেছেন। যদিও মহেশ সেসময় বিবাহিত, তবু নিঃসঙ্গ পারভীনের প্রেমে পড়েছিলেন।

১৯৮৩ সালে বলিউড থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে যান কাউকে কিছু না জানিয়ে। ফিরে আসেন ১৯৮৯ সালে। এর মধ্যে তাঁর শুটিং করা বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়।

প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া নামক মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। ব্যাপারটা মহেশ ভাট প্রথম টের পান যখন একদিন পারভীনের বাসায় গিয়ে দেখতে পান তিনি ছুড়ি হাতে ঘরের এক কোণায় ভয়ে জড়সড় হয়ে আছেন। পারভীন তখন মহেশকে কথা বলতে নিষেধ করছিলেন। কারণ পারভীনের ধারণা ছিল কারা যেন তাঁকে খুন করার জন্য ওত পেতে আছে!


মানসিক সমস্যার কারণে নানা জিনিস কল্পনা করতেন পারভীন। তাঁর ধারণা ছিল অমিতাভ বচ্চন তাঁকে খুন করতে চান। পারভীন নাকি নিজের অজান্তে অমিতাভের ক্ষতি করেছিলেন, তাই।


পারভীনের সুস্থতার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন মহেশ। চিকিৎসকেরা পারভীনকে বৈদ্যুতিক শক দিতে চাইলেও মহেশ তা করতে দেননি। ড্যানি ও কবির বেদির সাহায্য নিয়ে নানা হাসপাতালের অনেক চিকিৎসকের কাছে ধরণা দিয়েছেন।


খুন হয়ে যাওয়ার আশংকা পারভীনের মন থেকে উঠতে পারেনি কখনো। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে সাংবাদিকেরা তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে গেলে তাঁদেরকে জোর করে পারভীনের জন্য আনা খাবার আর পানি খেয়ে দেখাতে হতো। তাঁর সন্দেহ ছিল ওগুলোতে বিষ মেশানো। নিজের ব্যাধি স্বীকার করতে চাইতেন না তিনি। মানসিক রোগ নিরাময়ের জন্য কোনো ওষুধ খেতেন না। সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, যারা তাঁকে মারতে চায় এগুলো তাদের ষড়যন্ত্র।


মহেশ ভাট নিজে পারভীনের জন্য তৈরি ওষুধমাখা খাবার তাঁর প্রেমিকাকে খেয়ে দেখাতেন। যেন পারভীন তা খান।

১০
১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত পারভীনের সঙ্গে ছিলেন মহেশ। পরে যখন বুঝতে পারলেন তাঁদের সম্পর্কটা মরে গেছে তখন তিনিও পারভীনকে একা ছেড়ে দিলেন। কিন্তু প্রেম মহেশের মন থেকে মরেনি। নিজেদের ভালোবাসার গল্প নিয়ে নির্মাণ করেছেন আর্থ (১৯৮২) এবং ও লামহে (২০০৬)। মৃত্যুর পর মহেশই প্রথম এগিয়ে আসেন পারভীনের মরদেহ দাফন করার জন্য।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, বলিউড শাদিজ
গ্রন্থণা: সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন