আমি যা প্রশংসা পাচ্ছি তা ঋতুপর্ণের জন্য: যীশু

>আবার বলিউডের ছবিতে দেখা যাবে যীশু সেনগুপ্তকে। বোস, বরফি, মার্দানি, পিকুর পর এবার তিনি মনিকর্ণিকা: দ্য কুইন অব ঝাঁসি ছবিতে। ছবি মুক্তির আগে মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে টালিউডের দাপুটে অভিনেতা যীশু সেনগুপ্তের মুখোমুখি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য
মনিকর্ণিকা: দ্য কুইন অব ঝাঁসি ছবিতে যীশু সেনগুপ্ত
মনিকর্ণিকা: দ্য কুইন অব ঝাঁসি ছবিতে যীশু সেনগুপ্ত

বেশ কয়েকটা হিন্দি ছবিতে কাজ করেছেন আপনি। কিন্তু সেই অর্থে আপনাকে বলিউডের ছবিতে দেখা যায় না। এর কারণ কী?
আমি একটু অলস প্রকৃতির। অনুরাগ বসু, সুজয় ঘোষ, সুজিত সরকার—তাঁরা বলিউডের বাঙালি পরিচালক। তাঁরা আমাকে ভালো করে চেনেন। আমার কাজের ধরন জানেন। সেই অনুযায়ী কাজের প্রস্তাব দেন। আমি বলিউড থেকে অনেক কাজের প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু সেই চরিত্রগুলো আমার মনের মতো ছিল না।

তাহলে বলিউডে কি নতুন কোনো কাজ করছেন না?
হিন্দিতেও আমি ধীরে ধীরে বেশ কিছু কাজ করছি। সুজয় ঘোষের সঙ্গে নেটফ্লিক্সের একটা ওয়েবসিরিজের জন্য আমি এখন শুটিং করছি। মহেশ মঞ্জেকারের একটা ছবির কাজ শেষ করলাম। আরও তিনটি ছবির কাজ আমার হাতে আছে। এ বছর আমি একটা তেলেগু ছবিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। ‘এনটিআর’-এর ওপর নির্মিত বায়োপিকে আমি কাজ করলাম। ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। সবার দারুণ প্রশংসা পাচ্ছি।

মহাপ্রভু থেকে মনিকর্ণিকা—এই দীর্ঘ সফরটা কীভাবে বর্ণনা করবেন?
টেলিভিশন প্রযোজনা ‘মহাপ্রভু’ দিয়ে আমার ক্যারিয়ার শুরু। তখন আমি ক্রিকেট খেলতাম। সিরিয়ালে কাজ করে ৫০০ টাকা পেতাম। আমার পরিবারের অবস্থা তখন ভালো ছিল না। তাই এই টাকাটা আমার জন্য খুব প্রয়োজন ছিল। আর এতেই আমি সুখী ছিলাম। একদিন সকালে উঠে মনে হলো আর টিভি নয়, এবার আমি ছবিতে কাজ করব। কিন্তু ছবিতে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম আমার পাশে কেউ নেই। অথচ তখন আমি টেলিভিশনের ‘সুপারস্টার’ ছিলাম। পাঁচ বছর সময় লাগল সিনেমার জগতে আসতে। একদিন ঋতুপর্ণ ঘোষ আমাকে বললেন, ‘তুমি ভালো অভিনেতা। ভালো ছবিতে কাজ করছ না কেন?’ ঋতুপর্ণ ঘোষই পরে আমাকে মেন্টর করেন। আজ আমি যা যা প্রশংসা পাচ্ছি তা ঋতুপর্ণ ঘোষের জন্যই। গত বছর আমি তিনটি সফল বাংলা ছবি দিয়েছি। ‘এনটিআর’-এর বায়োপিকের এক মাস পরেই আমার হিন্দি ছবি মনিকর্ণিকা মুক্তি পাচ্ছে। সৌমিক সেনের মহালয়া ছবিতে উত্তম কুমারের চরিত্রে কাজ করছি। তাই একটু ভয়ে ভয়ে আছি। সাত বছর ধরে আমি জি বাংলা রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা’ সঞ্চালনা করছি। অপর্ণা সেনের ঘরে বাইরে ছবিতেও কাজ করলাম।

কঙ্গনা রনৌতের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
দারুণ লেগেছে তার সঙ্গে কাজ করতে। কঙ্গনা একজন স্বতঃস্ফূর্ত অভিনেত্রী। ক্যামেরা চালু হলেই ও অন্য এক মানুষ। কঙ্গনা যেই ‘অ্যাকশন’ শব্দটা শুনত, তখন ও পুরোপুরি ‘ঝাঁসির রানি’ হয়ে উঠত। সেটে সব সময় কঙ্গনা হাসি, মজা, ঠাট্টায় মেতে থাকত। আমি বিশেষ করে ওর কাছ থেকে হিন্দি ভাষা শিখেছি। কঙ্গনা শুদ্ধ হিন্দিতে কথা বলে। ও আমাকে শিখিয়েছে হিন্দির বাচনভঙ্গি।

উমা ছবিতে আপনার মেয়ে সারা অভিনয় করেছে। ও কি অভিনেত্রী হতে চায়?
এখন সেটা বলা মুশকিল। তবে সারা আমার মতো পড়াশোনা খুব একটা পছন্দ করে না। আর্টের প্রতি ওর কৌতূহল বেশি। সারা নিজের জগতে থাকতে বেশি পছন্দ করে।

৭ বছর হলো জি বাংলার রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা’ আপনি সঞ্চালনা করছেন। এটা কতটা উপভোগ করেন?
আমি দারুণ উপভোগ করি সঞ্চালকের ভূমিকায়। এই শো শুরু করার সময় বলে দিয়েছিলাম যে আমি কোনো চিত্রনাট্য চাই না। আমি এখানে যা–ই করি তা নিজের মতো। এই মঞ্চে কত প্রতিভা নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পায়! বাংলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসেন শিল্পীরা। বাংলাদেশ থেকেও মেধাবী শিল্পীরা এসে এই মঞ্চে গান গাইছে। আমি ওদের থেকে অনেক কিছু শিখছি। আমি ওদের সঙ্গে মজা করে আনন্দ পাই। আমার জীবনে ‘সারেগামাপা’র ভূমিকা অনেকখানি।

‘সারেগামাপা’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি প্রতিযোগীদের পারফরমেন্স কেমন লেগেছে?
বাংলাদেশ বলে আলাদা কিছু বলতে পারব না। এই মঞ্চে সবাই খুব প্রতিভাবান গায়ক। আমরা যে ১৯ জনকে নিয়ে শুরু করেছিলাম, তারা প্রত্যেকে দুর্দান্ত। প্রত্যেকেই আমার খুব প্রিয়।

নোবেলের গান শুনে আপনার চোখে জল চলে এসেছিল—
(হালকা হেসে) একদম তাই।

সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘এক ছিল রাজা’ ছবিতে আপনি জয়া আহসানের সঙ্গে কাজ করলেন। অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
দারুণ অভিজ্ঞতা। জয়া দুর্দান্ত এক অভিনেত্রী। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সেরা তিনি। আমরা খুব মজা করে কাজ করেছি।

পর্দার পেছনে জয়া কেমন?
জয়া মানুষ হিসেবে খুবই ভালো। আমার সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক। তবে শুটিংয়ের বাইরে আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ তেমন একটা হয়নি।

জয়া একজন সফল প্রযোজকও। প্রস্তাব পেলে প্রযোজক জয়ার ছবিতে অভিনয় করবেন?
নিশ্চয় করব। তবে আমাকে অবশ্যই আমার চরিত্রটা দেখতে হবে। মনের মতো চরিত্র পেলে কাজ না করার কিছু নেই।

জয়া ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো অভিনেতার কাজ ভালো লাগে?
আমি সেই অর্থে বাংলাদেশের সিনেমা দেখিনি। তাই আমি আলাদা করে কোনো অভিনেতার নাম নিতে পারব না। সত্যি বলতে, আমি ছবিই কম দেখি। আমার নিজের সিনেমাগুলোও দেখা হয় না। আমি সিনেমার চেয়ে স্পোর্টস দেখতে বেশি পছন্দ করি।