নির্বাচনে সরব, ছবি নির্মাণে নীরব

নির্বাচনকে ঘিরে জমজমাট এফডিসি
নির্বাচনকে ঘিরে জমজমাট এফডিসি

চেনা এফডিসি ছেয়ে গেছে রঙিন পোস্টারে। কারণ, রাত ফুরালেই অর্থাৎ কাল শুক্রবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাচন। এবারের দুটি প্যানেলে লড়ছেন ৩৮ জন প্রার্থী। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মহাসচিব পদে লড়ছেন সাফিউদ্দিন সাফি। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) পা রেখেই বোঝা গেল, পুরোদস্তুর নির্বাচনী আমেজে আছেন সবাই। নির্বাচন সামনে রেখে ভোটার অর্থাৎ পরিচালক সমিতির সদস্যদের আনাগোনাও বেড়েছে। প্রার্থীরা ভোটও চাইছেন ভোটারদের কাছে গিয়ে গিয়ে। তবে দুই বছর পরপর এই নির্বাচনকে ঘিরে বিএফডিসি উৎসবমুখর থাকলেও সারা বছর থাকে নীরব। এর বড় কারণ, দিন দিন ছবি নির্মাণ কমে যাওয়া। সাধারণ পরিচালকেরাই শুধু নন, প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের অনেকেই ছবি নির্মাণ করেননি গত কয়েক বছরে।

জানা গেছে, বাদল খন্দকার-বজলুর রাশেদ চৌধুরী পরিষদের বেশির ভাগ প্রার্থী ছবি নির্মাণ করেননি গত কয়েক বছরে। স্বপ্নের পৃথিবী, সাগরিকাসহ অনেক ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়েছেন এই প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী বাদল খন্দকার। তবে তাঁর সবশেষ বিদ্রোহী পদ্মা মুক্তি পেয়েছে ২০০৮ সালে। তারপর ব্যস্ত হয়েছেন নিজের ব্যবসা নিয়ে। গতকাল তিনি বললেন, ‘এই জায়গার (এফডিসি) প্রতি আমার একটা আলাদা প্রেম আছে। আমিও জানি ছবি নির্মাণ কমে গিয়েছে। নির্বাচনের মতো এফডিসি যেন সব সময় ছবি নির্মাণের মাধ্যমে উৎসবমুখর থাকে, এটা নিয়ে আমার একটা পরিকল্পনা আছে। নির্বাচনে বিজয়ী হলে সেটি বাস্তবায়ন করব। না হলেও যাঁরা বিজয়ী হবেন, তাঁদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।’

এই প্যানেলের মহাসচিব পদে বজলুর রাশেদ চৌধুরীর সর্বশেষ ছবি ছিল বধূ তুমি কার। ২০০৯ সালে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। তবে এই সময়ে তাঁর হাতে আছে দেশনায়ক—দ্য হিরো এবং সুপার অ্যাকশন নামে দুটি সিনেমা।

২০১৭ সালের অক্টোবরে মুক্তি পেয়েছিল এই প্যানেলের সহসভাপতি পদপ্রার্থী মনতাজুর রহমান আকবরের সর্বশেষ ছবি দুলাভাই জিন্দাবাদ। তারপর নতুন কোনো ছবিতে হাত দেননি তিনি। বললেন, ‘চার-পাঁচ বছর ধরে মাই ডার্লিং ছবিটি শেষ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছি না। এই ছবি আর হবে বলেও মনে হয় না।’ গত দুই বছর সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। অন্যান্য পদের অধিকাংশ প্রার্থীকে বিগত বছর ছবি নির্মাণ করতে দেখা যায়নি। তবে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তাঁরা। চাইছেন ভোট।

কাছাকাছি অবস্থা মুশফিকুর রহমান গুলজার ও বদিউল আলম খোকন পরিষদের। এই প্যানেলের সভাপতি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মুশফিকুর রহমান গুলজার। তাঁর সর্বশেষ ছবি লাল সবুজের সুর মুক্তি পেয়েছে ২০১৭ সালে। গতকাল এফডিসিতে বসে কথা হলো এই নির্মাতার সঙ্গে। তিনি বললেন, পরিচালকদের কাজ চলচ্চিত্র নির্মাণ করা। তবে টাকা লগ্নি করবে কিন্তু প্রযোজকই। বিগত কয়েক বছরে প্রযোজক কমে গেছে! আগে প্রযোজকেরা আসতেন ছবি বানাতে। কিন্তু এখন প্রযোজকদের নিয়ে আসতে হয়। একজন পরিচালক যখন প্রযোজক নিয়ে আসেন, তখন টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া কঠিন। নানা অব্যবস্থাপনার শিকার হন তাঁরা। এ কারণে ছবি নির্মাণই কমে গেছে।

তবে ছবি নির্মাণের সঙ্গে নির্বাচনকে না মেলানোর কথা বলেছেন বর্তমান মহাসচিব পদের প্রার্থী বদিউল আলম খোকন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে সিনেমা নির্মাণ না মেলানোই ভালো। আমাদের মধ্যে অনেক পরিচালক আছেন, যাঁরা নিয়মিত ছবি নির্মাণ করেন না। কিন্তু নির্বাচন উপলক্ষে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়, কথা হয়। সবার সঙ্গে যোগাযোগের একটা উপলক্ষ এই নির্বাচন। তবে এফডিসির কর্মচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে আমরা নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। সেটা বাস্তবায়ন হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।’ বদিউল আলম খোকনের গত বছর কোনো ছবি মুক্তি পায়নি বলে জানান। তবে আসছে ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পাচ্ছে অন্ধকার জগৎ নামের একটি ছবি। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ছবি আছে নির্মাণাধীন।

এই প্যানেলের সহসভাপতি পদপ্রার্থী হয়েছেন শাহ আলম কিরণ। তাঁর সর্বশেষ ছবি ৭১-এর মা জননী মুক্তি পেয়েছে ২০১৪ সালে। এখন নাম চূড়ান্ত না হওয়া একটি ছবি আছে হাতে।

তবে এই প্যানেলে অনেক তরুণ নির্মাতা প্রার্থী হয়েছেন বিভিন্ন পদে। বেশ কয়েকজনের নির্মিত ছবি মুক্তি পেয়েছে এ বছর। মহাসচিব পদে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী সাফিউদ্দিন সাফির মিসড কল নামে একটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল গত বছর। এ বছর একটি ছবি আছে নির্মাণাধীন। তবে নির্বাচন প্রসঙ্গে বর্তমান সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বললেন, ‘প্রতি দুই বছর অন্তর নির্বাচন করা আমদের নিয়ম। ২০১৯-২০ সালের জন্য এই সমিতির প্রতিনিধি চূড়ান্ত করতেই এই নির্বাচন। আশা করছি, সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন উৎসবমুখরই হবে।’