পরিচালকের মৃত্যুর পর শুটিং শুরু

‘কালবেলা’ সিনেমার অভিনয়শিল্পী তাহমিনা অথৈকে দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন পরিচালক সাইদুল আনাম টুটুল। ছবি: সংগৃহীত
‘কালবেলা’ সিনেমার অভিনয়শিল্পী তাহমিনা অথৈকে দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন পরিচালক সাইদুল আনাম টুটুল। ছবি: সংগৃহীত

কিছু দৃশ্যের শুটিং বাকি ছিল। কিন্তু পরিচালকের হাতে আর সময় ছিল না। পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি। কিন্তু সিনেমার কী হবে? সাইদুল আনাম টুটুলের মৃত্যুর পর তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছেন পরিচালকের স্ত্রী মোবাশ্বেরা খানম। সঙ্গে দুই মেয়ে ঐশী আনাম ও অমৃতা আনাম।

‘কালবেলা’ ছবির একটি গানের শুটিং বাকি। সব মিলিয়ে বড়জোর দুই দিন শুটিং করতে হবে। নিজেরা উপস্থিত থেকে সেটুকু শেষ করতে চান ঐশী ও অমৃতা। তাঁদের দুই বোনের যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার দিনক্ষণ পিছিয়ে গেছে।

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হচ্ছে ‘কালবেলা’র শুটিং। পরিচালকের মৃত্যুর ৪৫ দিন পর আবার শুরু হচ্ছে সিনেমার কাজ। মোবাশ্বেরা খানমের সঙ্গে কথা বলার সময় পাশেই ছিলেন ছবির নায়িকা তাহমিনা অথৈ। শুটিংয়ের আগে ছবির দৃশ্য সম্পর্কে আগাম ধারণা নিতে এসেছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে ছবির সম্পাদনার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। পরিচালকের স্ত্রী ও দুই মেয়ের সঙ্গে এ কাজে যুক্ত আছেন সাইদুল আনাম টুটুলের সহকারী শওকত আলী রানা এবং দীর্ঘদিনের বন্ধু তরুণ কুমার বর্মণ।

‘কালবেলা’ সিনেমার অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের সঙ্গে পরিচালক সাইদুল আনাম টুটুল। ছবি: সংগৃহীত
‘কালবেলা’ সিনেমার অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের সঙ্গে পরিচালক সাইদুল আনাম টুটুল। ছবি: সংগৃহীত

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাইদুল আনাম টুটুলকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর দিনে মোবাশ্বেরা বলেছিলেন, ‘আমি এ কারণেও গর্বিত যে সে বেঁচে থাকতে বলেনি, আমি এই, আমি সেই। তাঁর বেদনা ছিল। সেই বেদনাকে শুধু এভাবে ব্যক্ত করব এবং গ্রহণ করব—“অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাঁহারে দেন, তাঁহার বক্ষে বেদনা অপার।” সেই অপার বেদনা নিয়ে নিজের অসমাপ্ত কাজের গুরুদায়িত্ব সে আমার কাঁধে দিয়ে চলে গেল।’

অসমাপ্ত সেই কাজ শেষ করতে দলবল নিয়ে কাল রাজশাহী যাচ্ছেন মোবাশ্বেরা। টানা দুদিন যে গানের শুটিং হবে, সেটি একটি গণসংগীত। ‘মানব না বন্ধনে, মানব না এই শৃঙ্খলে’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছে ছায়ানটের শিক্ষার্থীরা। মোবাশ্বেরা খানম বলেন, ‘টুটুল নিজের মতো করে কাজ করতেন। তাঁর কাজে আমাদের খানিকটা সম্পৃক্ততা থাকত। কিন্তু এই ছবির শুরু থেকেই পরিবারের সবাইকে যুক্ত করেছিল সে। জানি না কি ভেবে এমনটা করেছিল।’ কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে, ছবিটির কাজ আমাদেরই শেষ করতে হতে পারে, এটা ভেবেছিল।’

মায়ের পাশে বসা বড় মেয়ে ঐশী বলেন, ‘বাবার কাজের ধরনটাই অন্য রকম। সব সময় ভিন্নধর্মী ভাবনা নিয়ে কাজ করতেন। তাঁর নির্মাণের দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যায়। ছবিটি সম্পাদনার জন্য কিছু যন্ত্রপাতি বাবাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠিয়েছিলাম। আমাদের সঙ্গে যেহেতু শুরু থেকেই সবকিছু শেয়ার করেছিলেন, তাই কাজটা শেষ করতে কিছুটা সুবিধা হচ্ছে।’

‘কালবেলা’ সিনেমার দৃশ্যে অভিনয়শিল্পী তাহমিনা অথৈ। ছবি: সংগৃহীত
‘কালবেলা’ সিনেমার দৃশ্যে অভিনয়শিল্পী তাহমিনা অথৈ। ছবি: সংগৃহীত

কথায় কথায় মোবাশ্বেরা খানম জানালেন আরেকটি খবর। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার রাতেই সে নতুন এক পরিকল্পনার কথা বলল। নতুন আরেকটি ছবির ভাবনা শেয়ার করেছিল। পুরো শুটিং হবে গভীর সমুদ্রে।

ছবি মুক্তির পরিকল্পনা নিয়ে কী ভাবছেন? এমন প্রশ্নে মোবাশ্বেরা খানম বলেন, ‘আপাতত এসব নিয়ে ভাবতে চাই না। সম্পাদনা, কালার গ্রেডিং, আবহসংগীতের কাজ শেষ করার পর এসব নিয়ে ভাবব।

গত ১৮ ডিসেম্বর মারা যান পরিচালক সাইদুল আনাম টুটুল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সরকারি অনুদানের ছবি ‘কালবেলা’র গল্প ২০০১ সালে আইন ও সালিস কেন্দ্র কর্তৃক প্রকাশিত ‘নারীর ৭১ ও যুদ্ধপরবর্তী কথ্য কাহিনি’ থেকে নেওয়া। মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য নারীর ওপর অত্যাচার ও নির্যাতনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। চলচ্চিত্রটির প্রধান দুই চরিত্র মতিন ও সানজিদা। মতিন চরিত্রে শিশির ও সানজিদা চরিত্রে অভিনয় করছেন তাহমিনা অথৈ। ছবিটি নির্মিত হচ্ছে পরিচালকের নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ‘আকার’ থেকে।

‘কালবেলা’ সিনেমার সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ। আবহসংগীতের কাজটিও তিনি করছেন। ছবিতে থাকছে তিনটি রবীন্দ্রসংগীত। ‘ভালোবাসি ভালোবাসি’, ‘আজ খেলা ভাঙার খেলা’, ‘দীর্ঘ জীবনপথ’। গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন লাইসা আহমদ লিসা ও ছায়ানটের শিক্ষার্থীরা। শিশির ও তাহমিনা অথৈ ছাড়াও এ ছবিতে অভিনয় করছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, লুৎফর রহমান জর্জ, জুলফিকার চঞ্চল, কোহিনূর, তানভীর মাসুদ, সাইকা আহমেদ, নওশের আশফাক, সুমন আহমেদ বাবু, শিশুশিল্পী সিয়াম ও মোরসালিন প্রমুখ।

এর আগে ২০০৩ সালে সরকারি অনুদানে সাইদুল আনাম টুটুল নির্মাণ করেন তাঁর প্রথম ছবি ‘আধিয়ার’। ১৯৭৯ সালে ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ চলচ্চিত্রে কাজ করে শ্রেষ্ঠ চিত্রসম্পাদক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। ‘ঘুড্ডি’, ‘দহন’, ‘দীপু নাম্বার টু’ ও ‘দুখাই’র মতো বিখ্যাত সব চলচ্চিত্রে সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছিলেন এই নির্মাতা।