নজরুলকে নিয়ে ৯০ মিনিট

বায়োগ্রাফি অব নজরুল-এর শুটিংয়ে কুশলীরা
বায়োগ্রাফি অব নজরুল-এর শুটিংয়ে কুশলীরা

ভদ্রলোকের সঙ্গে জানাশোনা নেই। একদিন ফোন করে জানালেন, নজরুলকে নিয়ে একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র করছেন তিনি। জাতীয় কবিকে নিয়ে চলচ্চিত্র মাধ্যমে কাজ হয়েছে হাতে গোনা। তাই আগ্রহ জাগে। প্রমাণ্য চলচ্চিত্রটি নিয়ে কথা হয় এর পরিচালক ফেরদৌস খানের সঙ্গে। কথায় কথায় যা উঠে আসে, তাতে এটি নিয়ে আগ্রহ জাগে আরও। তাঁর কথায়, সমগ্র নজরুলই যেন উঠে এসেছে প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটিতে।

ফেব্রুয়ারি মাসের এক বিকেলে মুখোমুখি হই পরিচালকের। কথা চলে বায়োগ্রাফি অব নজরুল নিয়ে। জানা যায়, প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটির পরিকল্পনা শুরু হয় গত বছরের মে মাসে। প্রাথমিক প্রস্তুতি সেরে শুটিং শুরু হয় ৫ অক্টোবর। তবে নজরুলকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানানোর আগ্রহ জন্মে আরও আগে—যখন তিনি বিভিন্ন মনীষীর জীবনী নিয়ে কাজ করতেন। ফেরদৌস খান বলেন, ‘আমি ইমদাদুল হক মিলনের সঙ্গে তখন কাজ করি, ওই সময়ে আমি বেশ কিছু জীবনীগ্রন্থ লিখতাম। তার মধ্যে একটা ছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনীগ্রন্থ। ওই বইটি লিখতে গিয়ে নজরুলের বিশালতা আমি জানতে পারি। সম্প্রতি নজরুল ইনস্টিটিউটের সঙ্গে আমরা বেশ কিছু কাজ করি। তখন আবার মনে হলো, নজরুলকে নিয়ে আরও কিছু করি। তখন চিন্তা করলাম, আমি একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র করব।’

এরপর ফেরদৌস খান নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলোতে ভ্রমণ শুরু করেন। পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলসহ বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লা, বরিশালসহ নানা জায়গা। কথা বলেন নজরুলের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে। এরপর মে মাসে পরিকল্পনা করেন, নজরুলকে নিয়ে তিনি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র করবেন। গত বছরের অক্টোবরে শুরু হলো শুটিং।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে শুরু হয় চলচ্চিত্রটির ভিডিও ধারণের কাজ। ত্রিশালের কাজীর শিমলা, দরিরামপুর নামাপাড়া, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ শহর ইত্যাদি জায়গার ভিডিও করা হয়। পাশাপাশি কয়েকজন নজরুল বিশেষজ্ঞসহ ত্রিশালের স্থানীয় লোকদের কথাও আনা হয়েছে এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রে।

এরপর ঢাকায় নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলো তুলে আনার কথা বলেন ফেরদৌস খান। ধানমন্ডিতে নজরুল ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে কবি নজরুলের সমাধি, বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন জায়গার নজরুল স্মৃতিচিহ্ন তুলে আনা হয়েছে। সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে নজরুল বিশেষজ্ঞ রফিকুল ইসলাম, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, শিল্পী খায়রুল আনাম শাকীল, নজরুল চেয়ার সৌমিত্র শেখর, কবির নাতনি খিলখিল কাজী, শিল্পী খালিদ হোসেন, লীনা তাপসী প্রমুখের।

এরপর কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুর নার্গিসের বসতভিটা, সেখানে নার্গিস পরিবার ও নজরুল স্মৃতিচিহ্ন ধারণ করা হয়। নজরুলকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল অংশটি। ফেরদৌস খান জানান, আসানসোল বাজারের ঐতিহাসিক রুটির দোকান; যেখানে কবি নজরুল রুটি বানানোর কাজ করতেন, সেই জায়গার শুটিং ছিল গুরুত্বপূর্ণ। নজরুলের কথা শুনতেই সাংবাদিকসহ বিভিন্ন লোক আগ্রহী হয়েছেন এর সঙ্গে যুক্ত হতে। সাহায্য করেছেন চলচ্চিত্রটি নির্মাণে। ছিলেন কবির জ্ঞাতি পরিবারেরও কয়েকজন। েসখানকার থানা, রেলস্টেশন, শহরের রাস্তাঘাটের চিত্রধারণ চলতে থাকে। এ ছাড়া কবির জন্মভিটা চুরুলিয়া, নজরুল একাডেমি, অজয় নদী, দুর্গাপুরে কবি নজরুল এয়ারপোর্ট, আসানসোলের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ও উঠে এসেছে এই প্রমাণ্যচিত্রে। ‘আমি কোনো কিছু তৈরি করতে চাইনি। আমি নজরুলের জীবনের কাছাকাছি যেতে চেয়েছি। তাঁর স্মৃতি, তাঁর কাজ, তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত লোকজনের স্মৃতিচারণা দিয়ে।’ বললেন পরিচালক। তাঁর কথায় উঠে আসে, নজরুল সবার কাছে পরিচিত বিদ্রোহী কবি হিসেবে কিন্তু এই প্রামাণ্যচিত্রে দেখা যাবে এক সাম্যবাদী নজরুলকে।

চলতি বছরের ২৪ মে নজরুলের জন্মদিনে ৯০ মিনিটের এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি মাল্টিপ্লেক্সে উদ্বোধনী প্রদর্শনীর মাধ্যমে মুক্তি দেওয়ার কথা জানালেন পরিচালক। এ ছাড়া বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রদর্শনী করার ইচ্ছা পরিচালকের।