পর্দার বাইরে জোলির আরও ৫

হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি পর্দায় যতটা সক্রিয়, পর্দার বাইরেও ততটাই সরব বিভিন্ন মানবতাবাদী কার্যক্রমে। গত সোমবার জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বিশেষ দূত হিসেবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছেন অস্কারজয়ী এই হলিউড তারকা। মানবতার জন্য তাঁর ৫টি কার্যক্রমের কথা লিখেছেন জিনাত শারমীন
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

সন্তান যখন শক্তি
ম্যাডক্স, জাহারা ও প্যাক্স—পত্রিকার বিনোদন পাতায় বা বিভিন্ন বিনোদন সাময়িকীতে নামগুলো ছাপা হয়েছে বহুবার। অ্যাঞ্জেলিনা জোলির সন্তান হিসেবে এরই মধ্যে তারকাখ্যাতি পেয়ে গেছে এই তিন শিশু। অথচ তাদের জীবনটা অন্য রকমও হতে পারত।
টুম্ব রাইডার চলচ্চিত্রের দৃশ্যধারণ ও ইউএনএইচসিআরের মাঠপর্যায়ের কাজ করতে গিয়ে কম্বোডিয়ার স্থানীয় একটি এতিমখানা থেকে ২০০২ সালে সাত মাস বয়সী ম্যাডক্সকে দত্তক নেন জোলি। এর তিন বছর পরে আদ্দিস আবাবার ওয়াইড হরাইজনস ফর চিলড্রেন এতিমখানার বাসিন্দা, ছয় মাস বয়সী জাহারা মার্লে মা হিসেবে পায় অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে। ২০০৭ সালে জোলি ভিয়েতনাম থেকে দত্তক নেন তিন বছর বয়সী প্যাক্স থিয়েনকে।

জোলির গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তান—শিলোহ, নক্স ও ভিভিয়েনের মতো একই রকম ভালোবাসা পেয়ে বেড়ে উঠছে ম্যাডক্স, জাহারা ও প্যাক্স। শিলোহ, নক্স ও ভিভিয়েনের যখন জন্ম হয়, পাপারাজ্জিদের ক্যামেরায় তাদের ছবি ধরা পড়ার আগেই গণমাধ্যমের কাছে সন্তানদের ছবি প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলারে বিক্রি করেছিলেন জোলি। পুরো অর্থই তিনি একটি দাতব্য সংস্থায় দান করে দেন।

ইউএনএইচসিআরের দূত
২০০১ সালে ইউএনএইচসিআরের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার পর থেকে ইকুয়েডর, লেবানন, সুদান, রাশিয়া, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশসহ ২০টিরও বেশি দেশে গেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। মানবতার কল্যাণে, বিশেষ করে শরণার্থী ও যৌন নির্যাতিত নারীদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন তিনি। বিভিন্ন সময় তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে মানবতা রক্ষার দৃঢ় আহ্বান। মানবতার জন্য বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের ব্যয়ভার জোলি তাঁর নিজের পার্স থেকেই দেন। সুযোগ-সুবিধাও সেটুকুই নেন, যেটুকু একজন ইউএনএইচসিআরের মাঠপর্যায়ের কর্মীর জন্য বরাদ্দ।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে
২০১০ সালে হাইতির ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উদ্দেশে জোলি ও ব্র্যাড (সাবেক স্বামী, হলিউড অভিনেতা ব্র্যাড পিট) ১০ লাখ ডলার সহায়তা দেন। এর আগে ২০০৫ সালে কাশ্মীর ভূমিকম্পের প্রভাব ও পরবর্তী অবস্থা পরিদর্শনের জন্য ‘থ্যাংকস গিভিং’–এর সাপ্তাহিক ছুটিতে ব্র্যাড পিটকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তান সফর করেন তিনি।

একই বছরে আফগান শরণার্থীশিবির পরিদর্শনকালে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি পারভেজ মশাররফ ও প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজের সঙ্গে সংকট নিরসনের লক্ষ্যে আলাপ করেন। বৈরুতের ক্যানসার রোগীদের সঙ্গে দেখা করে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণাও দিয়েছিলেন তিনি।

শিশুদের জন্য জোলি
২০০৫ সালে এতিমখানার শিশুদের আইনি অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান পরবর্তী সময়ে শরণার্থী শিশুদের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেও কাজ করে। শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এমটিভির জন্য দ্য ডায়েরি অব অ্যাঞ্জেলিনা জোলি অ্যান্ড ড. জেফ্রি স্যাক্স ইন আফ্রিকা নামে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানও করেন তিনি। গ্লোবাল অ্যাকশন ফর চিলড্রেন এবং ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স নামে দুটি সংগঠনকে জোলি/পিট ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে এক মিলিয়ন ডলার অনুদান।

সেনাসদস্য থেকে নারীর সুরক্ষায় জোলির পরামর্শ

২০১৭ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জোলি যুদ্ধক্ষেত্রে নারী নির্যাতন, ধর্ষণের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে সব রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এগিয়ে আসতে বলেন। তাঁর মতে, ‘ইউনিফর্ম’ পরিহিত একজন ব্যক্তির মাধ্যমে নারী ও শিশু ধর্ষণের চেয়ে জঘন্য আর কিছু হতেই পারে না। এ প্রসঙ্গে তিনি কেনিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের ইতিবাচক ভূমিকা তুলে ধরেন। সেনাবাহিনীর কার্যক্রমে নারী সদস্যের অন্তর্ভুক্তি, জেন্ডার শিক্ষা, যৌন নির্যাতন মোকাবিলায় নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

জোলির নির্দেশনায় সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ইন দ্য ল্যান্ড অব ব্লাড অ্যান্ড হানি (২০১১) এবং ফার্স্ট দে কিলড মাই ফাদার (২০১৭) চলচ্চিত্রগুলোতেও গুরুত্বের সঙ্গে এই বিষয়গুলো উপস্থাপিত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে।