ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ছোটলোকে ভরা

কঙ্গনা রনৌত
কঙ্গনা রনৌত

ঝাঁসির রানি যখন মুখ খোলেন, কঠিন সব বাঁধন আলগা করে দেন। ‘মনিকর্নিকা’ ছবির সাফল্য যেন কঙ্গনা রনৌতকে আরও শক্তিশালী করে দিয়েছে। এমনিতেই ঠোঁটকাটা মেয়ে হিসেবে তাঁর দুর্নাম আছে। তার ওপর প্রথম পরিচালনা করা ছবির কাটতি রমরমা। এই ছবির মাধ্যমেই যেন বলিউডের হারানো মুকুট আবার ফিরে পেয়েছেন। এবার তাঁর মুখ চেপে ধরে কার সাধ্যি? সম্প্রতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিন্দুক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের দুষ্টলোকদের ধবলধোলাই দিয়েছেন এই অভিনেত্রী ও পরিচালক।

‘মনিকর্নিকার’ সাফল্যের পর আবার বলিউডের ‘কুইন’ বলে ডাকছে সবাই, কেমন লাগছে?
আমি কৃতজ্ঞ। কাজটার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়েছিলাম। ছবিটা যখন বাতিল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো, সবাই এমন ভাব করতে শুরু করল, যেন আমি শেষ! ছবিটা যদি সত্যিই শেষ না হতো, সবাই আমার দোষ দিত। ভাবলাম, এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে দেখছি। কীভাবে সব শেষ হয়, আমি দেখে ছাড়ব। সুতরাং ঝুঁকিটা নিলাম এবং মুখ থুবড়ে পড়া একটা ছবিকে টেনে তুললাম। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবাই বলে শুরু থেকে একটি ছবি করে সেটা শেষ করা সহজ। কিন্তু আধাআধি করে ফেলে রাখা ছবিকে পুনরুজ্জীবিত করা ভীষণ কঠিন। এ জন্যই আমার এত বেশি সময় লেগেছে। এটা সফল না হওয়ার সম্ভাবনা ছিল ৫০ শতাংশ। এখন বলা যায় ছবিটা একটু ‘বিশেষ’। কেবল একজন নবাগত পরিচালকের প্রথম ছবির থেকেও বেশি কিছু।

কাজের সময় কখনো এমন হয়েছে, নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে হচ্ছে?
আমার মনে হয় পেশাদার জীবনটা চিকন দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটার মতো। অভিনয়শিল্পী, রাজনীতিক বা সে রকম পেশার মানুষ হলে তো কথাই নেই। সবার চোখ থাকে আপনার ওপর। ঠিক এই কারণে গত কয়েক বছর আমার অবস্থা ছিল ভয়ংকর। যেহেতু আমার কিছু ছবি তেমন ব্যবসা করতে পারেনি, তাই কিছু লোক মনিকর্নিকার স্বত্ব কেড়ে নিতে চেয়েছিল। আর একটু হলে তো মামলাই করে দিচ্ছিল। তখন সত্যিই খুব বিচ্ছিন্ন বোধ করছিলাম।

‘মনিকর্নিকা’ ছবিতে কঙ্গনা রনৌত
‘মনিকর্নিকা’ ছবিতে কঙ্গনা রনৌত

মনিকর্নিকার সেটে একদিন দুর্ঘটনা ঘটল। আমার মাথায় ১৮টা সেলাই লেগেছিল। সেই সময়েও মিডিয়ার কিছু উন্মাদ আক্রমণ করে কথা বলেছিল। সেদিনের আমি আর আজকের আমার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। আজ আমি অভিনেতা ও পরিচালক। আমার ওপর এখন মানুষের আস্থা তৈরি হয়েছে। কঙ্গনাকে তারা যেভাবে দেখতে চেয়েছে, আমি সেটাই করে দেখিয়েছি। জনে জনে মনের কথা বলে বেড়াতে হয় না। আমার মন বলছিল লোকে একদিন আমার সত্যটা জানবে। না হয় মানুষের কাছে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়ে মরেই গেলাম, তাতে কী? আসলে সবাইকেই এ রকম একটা জটিল সময় পার করতে হয়। আমাকেও হয়েছে। কিন্তু হতাশ হইনি। নিজেকে খুশি রেখেছি। বন্ধু ও স্বজন পরিবেষ্টিত হয়ে সময় কাটিয়েছি। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত ছিলাম বটে, তবে খুব একটা নয়।

‘মনিকর্নিকা’র কোন বিষয় থেকে ‘ইন্ডাস্ট্রি’ ও ‘দর্শক’ সম্পর্কে শিখলেন?
আমার হৃদয় ও আত্মাই আমাকে সব শিখিয়েছে। যে কেউ সেটা শিখতে পারে। রানি লক্ষ্মীবাই তো আর আমার আত্মীয় না। তিনি সবার। আমরা আজ এ অবস্থানে আছি সেটা তো কিছু মানুষ প্রাণ দিয়েছিলেন বলেই। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল মানুষের জন্য কিছু সৃষ্টি করা। পরিচালক হিসেবে নিজের জন্য একটা পয়সাও পারিশ্রমিক ধরিনি। নিজেকে পুরোপুরি নিবেদন করে দিয়েছিলাম। ভেবে নিয়েছি যে মানুষের জন্য কিছু করছি। এবং আমি সেই রকম সাড়াই পাচ্ছি। মানুষ ছবিটাকে ভালোবাসছে, এ নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছে, বিষয়টির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছে, এটাই আমার প্রাপ্তি।

কঙ্গনা রনৌত
কঙ্গনা রনৌত

ইন্ডাস্ট্রির কিছু লোক এখন এই ছবির পেছনে লেগে গেছে। তারা ছবির বিরুদ্ধে কিছু বলছে না বা উপেক্ষা করতে পারছে না। সব শ্রেণির অভিনয়শিল্পীরা আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠাচ্ছে। তাদের তো সামাজিক মিডিয়ায় এ নিয়ে লেখার সাহস নেই। বিষয়টা যে আমাকে কষ্ট দিচ্ছে না, তা নয়। কারণ আমি তো সিনেমা বানাইনি, জাতির জন্য একটা কাজ করেছি। সিনেমা হচ্ছে সেগুলো, যেগুলো প্রতি সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে। মনিকর্নিকা একটি বিশেষ সিনেমা। ‘কুইন’, ‘দঙ্গল’-এর মতো ছবিগুলো সমাজে প্রভাব ফেলে। ঠিক এ কারণেই ওদের উচিত ছিল মনিকর্নিকার পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু দেখেন, কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের খর্বতা ফাঁস হয়ে গেছে। এখন আমার মনে হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রি ছোটলোকে ভরা, যারা তাদের পছন্দ ও অপছন্দের আকারের চেয়ে বড় হতে পারে না।

সত্য বলতে ভয় পান না! এত সাহস পান কীভাবে?
আমার বিরুদ্ধে ছয়জন মামলা করেছে। আগেও আটটি মামলা ছিল। কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবুন, আমি আরও বড় বিষয় নিয়ে কথা বলছি। এটা একটা বিরল ঘটনা যে ইন্ডাস্ট্রির কোনো মানুষই এই ছবির সঙ্গে নেই! অর্থাৎ তারা মানবতার সঙ্গেও নেই, জাতির সঙ্গেও নেই। আমি মন থেকে বিশ্বাস করি, আমার উদ্দেশ্য যদি ভালো হয়, কেউ আমার কিছু করতে পারবে না।

ছবি নিয়ে যাদের অভিযোগ ছিল, তারা কি কখনো আলোচনায় বসতে চেয়েছে?
আমি সবকিছু খোলাখুলি বলেছি। আমি ডিসেম্বরেই কৃষকে (মনিকর্নিকার আগের পরিচালক) ছবিটি দেখাতে চেয়েছি। সে রাজি হয়নি। সে মোটামুটি নিশ্চিত ছিল যে আমি ছবিটা নষ্টই করে ফেলেছি, পুনরুদ্ধার কী করব? যখন সে দেখল কাজটা ভালোভাবে হয়ে গেছে, সে বলতে শুরু করল ‘এটা আমার ছবি, এটা আমার ছবি’। বুঝলাম, তো আমার সঙ্গে এ রকম আচরণ করার কারণ কী? আমার সামনে এসে কিছু বলে না কেন? আর অন্য যে শিল্পীরা নানা অপ্রাপ্তি নিয়ে হাউমাউ করছে, তারা আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছে, ‘একটা একক সাক্ষাৎকার ছাপা হলে ভালো হতো’, এই হচ্ছে ঘটনা। আমি তাদের ব্লক করে দিয়েছি। তারা টোস্টের দুই পাশেই মাখন লাগাচ্ছে। এই লোকগুলোর কুমতলব আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, কাজের প্রতি যদি কারও দায়বদ্ধতা থাকে, যেমন আমার, অঙ্কিতার, প্রসূনের, শংকরের, তারা ছবির বিরুদ্ধে কথা বলতে অন্যের কাছে যাবে না। অন্যেরা আসলে পেছন থেকে ছুরি চালানোর চেষ্টা করছে।

কঙ্গনা রনৌত
কঙ্গনা রনৌত

আর সোনু সুদের এই ছবি নিয়ে কোনো কথাই থাকতে পারে না। কারণ তার সঙ্গে চুক্তি চুকিয়ে ফেলা হয়েছিল। এই ছবির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এসব লোকের কথায় এখন আর কান দেওয়ার সময় নেই। ছবি ১০০ কোটির ক্লাবে ঢুকে গেছে। এখন সময় উদ্‌যাপনের।