অনিয়মের অভিযোগে সরে দাঁড়ালেন বিচারক

‘গানের রাজা’ প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক সোমনুর মনির কোনাল
‘গানের রাজা’ প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক সোমনুর মনির কোনাল

বিনোদন অঙ্গনে ইতিমধ্যে ‘ঠোঁটকাটা’ তকমা পেয়েছেন তরুণ কণ্ঠশিল্পী সোমনুর মনির কোনাল। অনিয়মের সঙ্গে আপস করতে না পেরে এবার বিচারকের আসন ছাড়লেন তিনি। চ্যানেল আইয়ে শিশুদের রিয়েলিটি শো ‘গানের রাজা’র অন্যতম বিচারক ছিলেন এই সংগীতশিল্পী। বিচারের রায় উপেক্ষা ও শিশুদের গান নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে অনুষ্ঠানটি থেকে সরে যান তিনি। ‘গানের রাজা’র পরের পর্বগুলোয় আর দেখা যাবে না তাঁকে।

টেলিভিশনের রিয়েলিটি শো থেকে বিচারক সরে যাওয়ার কথা তেমন শোনা যায় না। কোনো কোনো রিয়েলিটি শো থেকে বিচারক অব্যাহতি নিয়েছেন ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে। কিন্তু কোনাল সরে দাঁড়ালেন কেন? তিনি বলেন, ‘“গানের রাজা” অনুষ্ঠানে স্বাভাবিকভাবে বিচারকাজ চালানো যাচ্ছিল না। অনুষ্ঠান টিম শুরু থেকেই এ কাজে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। শুরুতে ছোটখাটো অনেক ব্যাপার মেনে নিয়েছি। পরে দেখলাম শিশুদের গান বাছাই করার ক্ষেত্রে অনিয়ম করছেন তাঁরা। দেখা গেছে, বিচারকাজে তাঁরা যে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, সেটাও মেনে নিতে হচ্ছে। তাহলে আর বিচারক থেকে লাভ কী?’

শিশুদের গানের প্রতিযোগিতা ‘গানের রাজা’র শীর্ষ ছয় থেকে সম্প্রতি বাদ পড়েছেন খুলনা বিভাগের প্রতিযোগী সালভিয়া আফরোজ জয়ী। তাঁর অভিভাবক জানান, চক্রান্ত করে তাঁর মেয়েকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যে গান যে প্রতিযোগী ভালো পারে, তাকে সেই গান দেওয়া হয়েছে। যাকে বাদ দেওয়া হবে, তাকে দেওয়া হয়েছে একেবারে অচেনা একটি গান। শিশুদের জন্য অচেনা গান করা সহজ কাজ নয়। জয়ীর মা লায়লা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়ে সব ধরনের গানে পারদর্শী। খুলনার অন্য প্রতিযোগীদের থেকে সে ভালো নম্বর পেয়ে সেরা ছয়ে জায়গা করে নেয়। চক্রান্ত করে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে। চ্যানেল আই ও অনুষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত এক কর্মী আমাকে বলেছেন, কাকে কাকে রাখা হবে, তা আগেই ঠিক করা হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে আমার মেয়ের থেকে কম নম্বর পাওয়া প্রতিযোগী কীভাবে এগিয়ে যায়? আমার অভিযোগ মিথ্যা কি না, সেটা প্রমাণের সুযোগ দেওয়া হোক।’

অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে ‘গানের রাজা’র পরিচালক তাহের শিপন বলেন, ‘প্রতিযোগিতার বিচারক কোনাল ও ইমরানের নম্বরের ভিত্তিতেই প্রতিযোগীদের বিচার করা হয়েছে। তাঁদের সই করা নম্বরপত্র আমাদের কাছে আছে। চাইলে আমরা সেটা দেখাতেও পারব।’ তবে তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারবেন ইসমত আরা ইতি।

‘গানের রাজা’র নির্বাহী প্রযোজক ইসমত আরা ইতি বলেন, ‘এটি একটি প্রতিযোগিতা। এখান থেকে স্বাভাবিক নিয়মে আমাদের কিছু প্রতিযোগীকে বাদ দিতে হয়। বিচারকেরা যে নম্বর দিয়েছেন, তার ভিত্তিতেই ওই প্রতিযোগীকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’

একজন নিয়মিত বিচারক কেন অনুষ্ঠান ছেড়ে দিলেন? তিনি বলেন, ‘পারস্পরিক বোঝাপড়ার কিছু বিষয় থাকে। সে রকম একটা ঘটনার জেরে তিনি চলে গেছেন।’ বিচারক ছাড়া কীভাবে অনুষ্ঠান চালিয়ে নিচ্ছেন? তিনি বলেন, 'আমাদের আরেকজন বিচারক ইমরান মাহমুদুল আছেন। তা ছাড়া প্রতি পর্বেই অতিথি বিচারকেরা আসছেন।’ অতিথি বিচারকেরা প্রতিযোগীদের আগের পরিবেশনা দেখেননি? এ ক্ষেত্রে বিচার করতে অসুবিধা হবে? তিনি বলেন, ‘আমাদের আগের পর্বগুলো ইতিমধ্যে ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। তা ছাড়া বিচারক হিসেবে যাঁরা আসছেন, তাঁরা বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, মহড়া দেখছেন।’

প্রতিযোগিতাটি নিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয় ২০০৯ সালের ‘চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ’ প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন, ‘গানের রাজা’ প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক ও সংগীতশিল্পী কোনালের কাছে। তিনি বলেন, ‘মারাত্মক অনিয়ম হচ্ছে সেখানে। আমাদের সময়ে ৪০ শতাংশ ভোট দিতেন দর্শক। এখানে সেই সুযোগ নেই। এখন সবকিছু নির্ধারণ করেন প্রযোজক। একজন বিচারক বা দর্শক কখনো সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না।’

শিশুদের মনন বিকাশে ৬ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুদের জন্য গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গানের রাজা’ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করা হয়। সে সময় উপস্থিত ছিলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। সারা দেশ থেকে নানা প্রক্রিয়ায় গ্রুমিংয়ের মাধ্যমে প্রতিযোগীদের বেছে নেওয়া হয়। অক্টোবর মাস থেকে ঢাকাসহ দেশের সাতটি বিভাগে পৃথক পৃথক অডিশনের মাধ্যমে প্রতিযোগী নির্বাচন করা হয়।