নকল গান করে অনেকে হিট হচ্ছেন: মুহিন

মুহিন খান
মুহিন খান
>এক যুগ আগে অনুষ্ঠিত ‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার সেরা ১০ প্রতিযোগী আবারও এক হয়েছেন। যুগপূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে সেরা ১০ জন প্রতিযোগীকে নিয়ে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হচ্ছে। এই অ্যালবামের গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন সালমা, মুহিন, নিশিতা, রন্টি, কিশোর, পুলক, পুতুল, পলাশ, সাব্বির ও বাঁধন। পুরো আয়োজনের ভাবনা মুহিনের। আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘একসাথে এক যুগ’ শিরোনামের এই অ্যালবামের প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই আয়োজন নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন মুহিন।

যুগপূর্তি উদ্‌যাপন নিয়ে অ্যালবাম প্রকাশের ভাবনা কীভাবে হলো?
আমরা ১০ জন আসলেই একসঙ্গে। ফেসবুকে সব সময় একসঙ্গে থাকি। বিপদ-আপদেও একে অপরের পাশে আছি। আমরা বাংলাদেশের বাংলা গানের সঙ্গে পেশাদারভাবেই আছি। গান ছেড়ে অন্য কোনো পেশায় যাইনি। ১০ জনের এমন ঐক্য আর কোনো রিয়েলিটি শোতে আছে বলে মনে হয় না। শুধু পেশাদার নয়, আমাদের মধ্যে আত্মার সম্পর্ক। সেই ভাবনা থেকে এমন একটি অ্যালবাম করা। আমি অনেক দিন ধরে জামাল হোসেনের লেখা গান নিয়ে কাজ করছি। মাস তিনেক আগে তাঁকে ক্লোজআপ ওয়ানের সেরা ১০ জনকে নিয়ে একটি অ্যালবাম তৈরির প্রস্তাব দিই। তিনি সানন্দে রাজি হন। এখানে আমি ছাড়া কিছু কম্পোজিশন করেছেন সাব্বির, কিশোর আর বিনোদ রায়।

আপনারা সেরা ১০ জন তো খুবই ব্যস্ত। সবার কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন?
সবার আন্তরিকতা দেখে আমি মুগ্ধ। এই যেমন সবার জন্য গান করেছি, কোনো টেনশন হয় নাই, অথচ নিজের জন্য যখন গান করছি, টেনশন হয়েছে সবচেয়ে বেশি। নিজের জন্য যে গানটি প্রথমে করেছিলাম, শোনার পর বাকি নয়জন বললেন, আমার গানটি নাকি বাকি নয়টির সঙ্গে যায় না। এই ঘটনায় নিশ্চয় বোঝাতে পেরেছি, আমরা কতটা আন্তরিক ছিলাম।

ইদানীং ১০টি গান নিয়ে অ্যালবাম প্রকাশ সচরাচর দেখা যায় না। কীভাবে সম্ভব হলো?
দশে মিলি করি কাজ, হারি-জিতি নাহি লাজ—ছোটবেলা থেকে কথাটা শুনেছি। আমরা ১০ জন এক জায়গায় আছি। ১০টা পরিবারের মানুষ, আমরাও একটা পরিবার। সবার মিলিত চেষ্টার কারণে সম্ভব হয়েছে। ১০ জন মিলে নতুন একটা সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চালুর সাক্ষী হয়ে থাকলাম। শুরুতে দশটা গানের লিরিক ভিডিও আসবে ইউটিউবে। এ ক্ষেত্রে জামাল হোসেনের আন্তরিকতা অবশ্যই উল্লেখ করতে চাই।

অ্যালবামটি বড় আয়োজনে প্রকাশ করছেন। কিন্তু অন্য গানগুলোর ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তাহলে গান তৈরি বা প্রকাশের ক্ষেত্রে বেগ পেতে হয়?
অবশ্যই। এখন তো সবাই একটা করে গান মুক্তি দেয়। কোনো প্রতিষ্ঠানই একসঙ্গে ১০টি গানের অ্যালবাম প্রকাশ করছে না। ১০ জনের দশটা গানও একটা প্রতিষ্ঠান থেকে মুক্তি পাচ্ছে, তেমনটা দেখা যায় না। মূলত আমাদের সাহসিকতা, আমাদের একাগ্রতা, তা ছাড়া এটাকে আমরা পেশাদার চোখে দেখিনি, একান্তই ভালোবাসা আর দায়িত্বের জায়গা থেকে দেখেছি।

এক যুগ পার হলো। যদি পেছন ফিরে তাকান, তাহলে কী দেখেন?
অনেক কিছুই পাওয়ার ছিল, কিন্তু পাইনি। এমন একটা সময় পেশাদার গানের জগতে পা রেখেছি, যখন ডিজিটাল যুগের শুরু, ক্যাসেট ও সিডি যুগ শেষ। সেই ক্রান্তিকালের শিল্পী আমরা। আমরা দুটোর মাঝখানে পড়েছি। সময়টা বুঝতেও অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। এত কিছুর পরও আমরা কাজ করছি। আমরা স্বনির্ভর হয়েছি। অন্যদিকে বড়দের কাছে গান চাইলে হয়তো দেন, কিন্তু কোনোভাবে যদি গানটা আমার পছন্দ না হয়, তখন অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা বিরক্ত হন। এমনও বলেন, ‘এই ব্যাটা তোর গানই করব না।’ এসব থেকে শিক্ষা নিয়ে গান গাওয়ার পাশাপাশি সুর ও সংগীত পরিচালনা করছি।

সমসাময়িকদের মধ্যে কার সংগীত প্রতিভা আপনাকে অনুপ্রাণিতও করে?
আমাদের সমসাময়িকদের মধ্যে আমার ভালো লাগার কয়েকজন সংগীত পরিচালক আছেন। তাঁদের মধ্যে হৃদয় খান, সাব্বির, কিশোর, আরিফিন রুমী, তরিকের কাজ ভালো লাগে। এই মানুষগুলোর আরও বেশি কাজ করা উচিত। এদের পৃষ্ঠপোষকতা করা উচিত বেশি। দুর্ভাগ্য পাশ্চাত্যের গান নকল করা শিল্পীরা পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন, নকল গান বাজারজাত করে অনেকে হিট হচ্ছেন। যাঁদের নকল গানের প্রবণতা বেশি, শ্রোতারা তাঁদের দিকেই ঝুঁকছেন।