সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশের নির্মাতারা

বার্লিনালেতে (বাঁ থেকে) বরকত হোসেন পলাশ, নাইম মাহবুব, হুমায়রা বিলকিস, আরিফুর রহমান ও বিজন ইমতিয়াজ
বার্লিনালেতে (বাঁ থেকে) বরকত হোসেন পলাশ, নাইম মাহবুব, হুমায়রা বিলকিস, আরিফুর রহমান ও বিজন ইমতিয়াজ

‘ভাব আছে যার গায়, তারে দেখে চেনা যায়’—বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে হাজারো মানুষের ভিড়ে হঠাৎ কয়েকটা বাঙালি মুখ দেখে এই বাউলগানটার কথা মনে পড়ে গেল। তাঁদের চোখে–মুখের দীপ্তি দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। আগেই জানতে পেরেছি, বাংলাদেশের পাঁচ তরুণ অংশ নেবেন এবারের উৎসবে। তাঁরা সবাই ছবি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত। ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই উৎসব শেষ হচ্ছে ১৭ ফেব্রুয়ারি। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের পাঁচ তরুণ চলচ্চিত্রকর্মী যোগ দিয়েছেন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে। বিজন ইমতিয়াজ আর আরিফুর রহমান এসেছেন আন্তর্জাতিক যৌথ প্রযোজনার ‘পিচিং’ প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে। নিজেদের প্রযোজনা সংস্থা গুপী-বাঘা প্রোডাকশনস আর জার্মান রাজর ফিল্ম প্রোডাকশনসের যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণাধীন বিজনের লেখা কাহিনিচিত্র প্যারাডাইস-এর অর্থায়নের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাঁদের বার্লিনে আসা। ‘আমি বাঘা, সাইজে ছোট, ঢোল বাজাই। আরিফ একটু লম্বা, ও গান করে। দুজনে মিলে চলছি আরকি।’ বিজন মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে নিজের আর তাঁর সহযোদ্ধার পরিচয় দিলেন।

প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা হুমায়রা বিলকিস এবং চিত্রগ্রাহক বরকত হোসেন পলাশ এসেছেন ‘বার্লিনালে ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস’-এর আমন্ত্রণে। তাঁদের কারোরই ছবি নির্মাণের ওপর দীর্ঘ কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাওয়ার সুযোগ হয়নি। হুমায়রা বার্লিনালে ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি আগত অন্য অতিথিদের সামনে তাঁর নির্মাণাধীন নতুন ছবি বিলকিস অ্যান্ড বিলকিস–এর উপস্থাপনা করেন। অন্যদের মতো বরকত হোসেনেরও ছোটবেলা থেকে ছবি দেখতে দেখতে আগ্রহ তৈরি হয় ছবির প্রতি। কিন্তু তিনি পড়াশোনা করেছেন অর্থনীতিতে। এরই মধ্যে পলাশ আবু শাহেদ ইমনের জালালের গল্প, নুরুল আলম আতিকের মানুষের বাগান ছবিগুলোতে চিত্রগ্রহণের কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন। উৎসবে এসে বার্লিনালের দুটি অভিজ্ঞতার ওপর জোর দিলেন বরকত। প্রথমটি হলো, বিভিন্ন ওয়ার্কশপে নতুন অনেক কিছু জানার পাশাপাশি তিনি বুঝতে পারছেন আর দ্বিতীয় অভিজ্ঞতাটা নানা দেশের নতুন বন্ধু পাওয়ার। সুইডেনে বসবাসরত আরেক বাঙালি তরুণ নাইম মাহবুবও ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসে এসেছেন অ্যানিমেশন ছবির নির্মাতা হিসেবে।

ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশের তরুণ চলচ্চিত্রকর্মীরা সবাই ফিরছেন প্রচণ্ড উদ্দীপনা নিয়ে। কারণ, এ বছরই সিস্টেম ক্রাশার নামের যে জার্মান ছবিটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে, তার নির্মাতা নোরা ফিংগশাইটও মাত্র কয়েক বছর আগেই ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসে আরিফ–বিজন–হুমায়রাদের মতোই যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের নির্মাতারাও যে নোরার মতো সাফল্য নিয়ে এগিয়ে যাবেন, এটা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।