যে ৫ কারণে বিতর্কিত এবারের অস্কার

কেভিন হার্ট
কেভিন হার্ট

শুরু হয়ে গেছে উল্টো দিকে দিন গোনা। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে বসবে ৯১ তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের চূড়ান্ত আসর। হলিউড ছবির জন্য সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এই রাত নিয়ে সিনেমাপ্রেমীদের আগ্রহের কমতি নেই। তাই অস্কার উত্তেজনাকে বাড়িয়ে দিতে আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজনে আজ থাকছে এবারের আয়োজন নিয়ে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি বিতর্কের কথা।

‘এ বছর কে জিতছে অস্কার? এই প্রশ্ন এবার তেমন শোনা যাচ্ছে না। তার চেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি শোনা যাচ্ছে, সেটি হলো, এসব কী হচ্ছে অস্কারে?’ ঠাট্টা করে সম্প্রতি এ কথা বলেছেন ভ্যারাইটি সাময়িকীর সম্পাদক টিম গ্রে। তবে ঠাট্টার ছলে বললেও এ বছরের অস্কার কিন্তু সত্যিই বিতর্কের দিক থেকে অন্যান্য বছরকে ছাড়িয়ে গেছে। পদে পদে নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ছেন একাডেমি অ্যাওয়ার্ড আয়োজকেরা।

সেরা জনপ্রিয় চলচ্চিত্র বিভাগ
বিতর্কের শুরুটা হয় গত আগস্ট মাস থেকে। সেই সময় ঘোষণা দেওয়া হয়, অস্কারে আসতে যাচ্ছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। এর মধ্যে একটি হলো, পুরস্কার তালিকায় যুক্ত হবে ‘সেরা জনপ্রিয় চলচ্চিত্র’ নামের একটি বিভাগ। এই সিদ্ধান্ত একাডেমি অ্যাওয়ার্ড কর্তৃপক্ষ নিয়েছিল অস্কারের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা আরও বাড়াতে। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়। চলচ্চিত্রবোদ্ধা, সমালোচক, শিল্পী থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা পর্যন্ত নতুন এই বিভাগের সমালোচনা করতে শুরু করেন। প্রশ্ন ওঠে, শুধু বাণিজ্যিকভাবে এগিয়ে থাকার মানেই কি ‘জনপ্রিয় চলচ্চিত্র’? আর বিকল্পধারায় নির্মিত ছবিগুলো ‘অজনপ্রিয়’? বিতর্কের পরিমাণ বাড়তে থাকলে অস্কার আয়োজক একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস তাদের নতুন সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ায়।

কেভিন হার্টের স্বপ্ন পূরণ হলো না
অস্কার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন—অনেক বছর ধরে কৌতুকাভিনেতা কেভিন হার্ট এই স্বপ্ন মনে পুষছিলেন। গত বছর সেই স্বপ্ন পূরণের হাতছানিও পান। ৯১ তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ড আসরের সঞ্চালক হিসেবে ঘোষণা করা হয় তাঁর নাম। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের খুব কাছে গিয়েও ভেঙে যায়। ২০১০ সালে করা সমকামী বিষয়ে বিদ্রূপাত্মক টুইটের জের ধরে অনেকের রোষের শিকার হন কেভিন হার্ট। একাডেমি অ্যাওয়ার্ড আয়োজকেরা কেভিনকে জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে বলেন। কিন্তু কেভিন তাতে অস্বীকৃতি জানান। এর ফলে তাঁকে সঞ্চালকের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। তবে এই পুরো প্রক্রিয়ায় নানা পক্ষের নানা ধরনের বিতর্কের শিকার হতে হয় অস্কারকে।

ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো সঞ্চালকবিহীন অস্কার
কেভিন হার্টের প্রস্থানের পর ৯১ তম অস্কার অনুষ্ঠান আর কোনো নতুন সঞ্চালক খুঁজে পায়নি। তাই আয়োজকেরা সিদ্ধান্ত নেন, এবার সঞ্চালক ছাড়াই আয়োজন করা হবে পুরস্কার অনুষ্ঠান। ১৯২৯ সালে অস্কার শুরু হওয়ার পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো এমনটি ঘটতে যাচ্ছে। এর আগে ১৯৮৯ সালে সঞ্চালক ছাড়াই অস্কার অনুষ্ঠান হয়েছিল।

অস্কার আয়োজকদের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ
হলিউডের আরেকটি সম্মানজনক পুরস্কার অনুষ্ঠান হলো ‘স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ড’ (এসএজি অ্যাওয়ার্ড)। মাসখানেক এই পুরস্কারের আয়োজকেরা এক অভিযোগ তোলেন অস্কার আয়োজকদের বিরুদ্ধে। এমনকি জল এত দূর গড়ায় যে এসএজি কর্তৃপক্ষ লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করে একাডেমির বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ, একাডেমি কর্তৃপক্ষ তাদের প্রভাব খাটিয়ে তারকাদের হুমকি দিচ্ছে অন্য কোনো বড় পুরস্কার অনুষ্ঠানে না যাওয়ার জন্য। লিখিত বিবৃতিতে এসএজি কর্তৃপক্ষ বলে, ‘আমাদের সংগঠনের সদস্যদের প্রতিনিয়ত একাডেমি আমাদেরই অনুষ্ঠানে পুরস্কার প্রদান না করার নির্দেশ দিচ্ছে। এটা অগ্রহণযোগ্য এবং ন্যক্কারজনক। এই ইন্ডাস্ট্রির যেকোনো আয়োজনে যেকোনো শিল্পীর অংশগ্রহণের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা উচিত।’

বাতিল হওয়া ‘সেরা’ বিভাগ
টেলিভিশনে প্রচারের জন্য অস্কার অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি কমানোর উদ্যোগ নেয় একাডেমি অ্যাওয়ার্ড কর্তৃপক্ষ। এর ফলে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, সেরা রূপসজ্জা ও কেশসজ্জা, লাইভ অ্যাকশন শর্টফিল্ম, সম্পাদনা ও চিত্রগ্রহণ বিভাগগুলোর পুরস্কার বিজ্ঞাপন বিরতির ফাঁকে দিয়ে দেওয়া হবে। এর ফলে বিজয়ীদের
দেখা যাবে না টিভিপর্দায়। এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেন চলচ্চিত্রজগতের একাধিক নামকরা ব্যক্তিত্ব। তাঁদের মধ্যে গিয়েরমো দেল তোরো থেকে শুরু করে রাসেল ক্রো এবং এ বছর অস্কারদৌড়ে এগিয়ে থাকা নির্মাতা আলফোনসো কুয়ারনও ছিলেন। ৫০০ চলচ্চিত্র পরিচালক, শিল্পী এবং কুশলী স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবাদলিপিও দেওয়া হয় একাডেমি কর্তৃপক্ষকে। পরে গিয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে আসে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস।