'শাহরুখ খানের মতো বললেন, আয় বুকে আয়'

‘আহা রে’ সিনেমার প্রিমিয়ার শো শেষে আরিফিন শুভ ও ঋতুপর্ণা।  ছবি: সংগৃহীত
‘আহা রে’ সিনেমার প্রিমিয়ার শো শেষে আরিফিন শুভ ও ঋতুপর্ণা। ছবি: সংগৃহীত

এর আগেও ভারতে প্রদর্শিত হয়েছে বাংলাদেশের চিত্রনায়ক আরিফিন শুভর কয়েকটি সিনেমা। এসব সিনেমার বেশির ভাগই বাংলাদেশের, না হয় বিনিময় প্রথা কিংবা যৌথ প্রযোজনায়। এবারই প্রথম ভারতের প্রেক্ষাগৃহে বাংলাদেশি চিত্রনায়কের কোনো সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, যেটি পুরোপুরি ভারতেরই।

রঞ্জন ঘোষের ‘আহা রে’ ছবিতে শুভর বিপরীতে অভিনয় করেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। মুক্তি উপলক্ষে গিয়েছিলেন কলকাতায়। গত শুক্রবার কলকাতার সাউথ সিটি মলের আইওনক্সে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে প্রিমিয়ার শোতে অংশ নেন। বাংলাদেশের এই চিত্রনায়কের সঙ্গে শনিবার দুপুরে যখন কথা হচ্ছিল, তখন তিনি কলকাতার বিমানবন্দরে বাংলাদেশের প্লেন ধরার অপেক্ষায়।

দেশের বাইরে প্রথম সিনেমা। প্রিমিয়ার শো দেখলেন। বাইরে অভিষেক কেমন হবে বলে মনে হচ্ছে?

বলা হয় না মর্নিং শোজ দ্য ডে। আমার এই ছবির ক্ষেত্রে তেমনটাই ঘটেছে। কলকাতার আনন্দবাজার, ক্যালকাটা টাইমস থেকে শুরু করে অনেক সংবাদমাধ্যমে ছবিটি নিয়ে অনেক চমৎকার সব কথা বলেছে। এমনও শুনছি, এবার থেকেই যাও, নাকি! আমি বললাম, ইটস অনলি ৪৫ মিনিট স্যার। না থাকলেও কাজ করতে খুব একটা অসুবিধা হবে না। আপনারা ডাকলেই চলে আসব। ঋতুপর্ণার নিজের প্রযোজনার এই ছবিতে আমাকে কাজ করার চমৎকার সুযোগ দিয়েছে। প্রিমিয়ারে তাঁর বন্ধুরাও এসেছিলেন। আমার সঙ্গে ছবি তুলছিলেন আর বলছিলেন, আরে শুভ, এ তো দেখছি তোমারই সিনেমা। শুধু তা–ই নয়, তাঁরা এ–ও বলেছেন, এটি ঋতুপর্ণার জীবনের সেরা প্রযোজনা। আমার সহশিল্পী বলে বসলেন, এখন তো মেয়েদের লাইন পড়ে যাবে।

কলকাতায় বিশাল বিলবোর্ড; ভিনদেশে এমন দৃশ্য দেখার অনুভূতি কেমন?
কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বেরোলেই এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। এভাবে বলতে চাই, জীবনে প্রথম যেদিন ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসি, সেদিনও তো ভাবিনি—নিজ দেশে এত সম্মান আর ভালোবাসা পাব। তার ওপর আরেকটা ভূখণ্ডে, আরেকটা দেশে এই ভালোবাসা, প্রশংসা, গ্রহণযোগ্যতা! একজীবনে একটা মানুষ দুই দেশ থেকে ভালোবাসা পাচ্ছে—আর কীই–বা চাইবার থাকে?

‘আহা রে’ সিনেমায় জুটি বেঁধেছেন যার সঙ্গে, তাঁর সিনেমা তো নিশ্চয় স্কুলজীবনে দেখেছেন। ব্যাপারটি কেমন উপভোগ করছেন?
খুবই অদ্ভুত এক অনুভূতি। এটা যে শুধু ঋতুদির ক্ষেত্রে হয়েছে তা কিন্তু নয়। আমার আরেকজন সহশিল্পী, তাঁর ছবি ছোটবেলায় দেখেছি তা নয়। অবশ্য তিনি সিনেমায় এসেছিলেন ছোটবেলায়, আমিও তখন ছোট ছিলাম—তাঁর নাম হচ্ছে পূর্ণিমা। প্রেক্ষাগৃহে এই নায়িকার ‘মনের মাঝে তুমি’ দেখেছি। তিনিও এখন আমার নায়িকা। গতকাল রাতে তো আমরা প্রিমিয়ার শেষে পার্টিতে যাচ্ছিলাম, গাড়িতে ঋতুদি বারবার ঘুরেফিরে আমার অভিনয় নিয়ে কথা বলছিলেন। এমনটা হবে আমি তো কখনো ভাবিনি। জীবনকে দেখার চোখটা থাকতে হয়, মনে আশা রাখতে হয়—কে ভেবেছিল ছোটবেলার সেই ঋতুপর্ণাই আমার প্রশংসা করবেন। সে যে–ই হোক না কেন, পশ্চিমবঙ্গে ঋতুদি একটা ব্যাপার, যেমটা প্রসেনজিৎ। শো শেষে তিনিও এসে জড়িয়ে ধরলেন। এ–ও বললেন, তিনি আমার ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিটি দেখেছেন।

সাধারণত কম বয়সী নায়িকার সঙ্গে নায়কেরা অভিনয় করেন। আপনার ক্ষেত্রে উল্টো। ‘একটি সিনেমার গল্প’, ‘আহা রে’ পরপর দুটি সিনেমায় নায়িকা স্কুলজীবনেরই সেই...
একটা মজার ফ্যাক্ট ধরিয়ে দিতে চাই। পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনি নামের বাণিজ্যিক ঘরাণার যেই ছবিতে আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেটিতেও আমার হিরোইন ছিলেন সিনিয়র। জয়া আহসানকে সমসাময়িক দেখানো হলেও তিনি কিন্তু আমার যথেষ্ট সিনিয়র। ওই সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। পশ্চিমবঙ্গেও তা–ই ঘটল দেখছি। তবে বিষয়গুলো কাকতালীয়। এটা ঠিক যে প্রথাগতভাবে আমার শুরুটা হয় নাই।

কলকাতার ছবির লোকেরা বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পী নিয়ে একটু বেশি আগ্রহী মনে হচ্ছে। অনেকে বলছেন, বাংলাদেশের বাজার ধরতে কলকাতার প্রযোজক–পরিচালকের এই টার্গেট। আসলেই কি তাই?
বিষয়টা মোটেও তেমনটা নয়। এমনটা আগেও হয়েছে। তখন আমাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই সহজলভ্যতা ছিল না। বিষয়টা মোটেও এমন নয় যে পশ্চিমবঙ্গের ইন্ডাস্ট্রি আমাদের শিল্পীদের চাইছে। আর আমরা পশ্চিবঙ্গের শিল্পীদের চাইছি। বড় ভাবে দেখলেই পরিষ্কার হবে, পুরো পৃথিবীতে একধরনের অদল–বদল চলছে। সাংস্কৃতিক, দার্শনিক, শিল্পের বড় ধরনের অদল–বদল হচ্ছে। হলিউডের কী দরকার আছে, বলিউডের শিল্পী দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। এটা আসলে সময়ের চাহিদা। ইরফান খান লাইফ অব পাই, প্রিয়াংকা চোপড়া কোয়ান্টিকো, দীপিকা পাড়ুকোন, ট্রিপল এক্স, ঐশ্বরিয়া রাই ‘ব্ল্যাক ফ্রান্থার’ এ কাজ করেছেন। আমি বলতে চাই, যাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছোট, তারা এমনটা ভাববে। এখন মানুষ ভিন্ন ধরনের কিছুর খোঁজে আছে। সেই চাহিদা মেটাতে পরিচালকেরা ভিন্ন গল্প, ভিন্ন স্বাধের সবকিছু চাচ্ছেন।

কলকাতায় কাজ করছেন। ঢাকায়ও করছেন। গুণগত কোনো পার্থক্য বুঝতে পারছেন?
এ বিষয়ে কিছুই বলতে চাইছি না। জলে বাস করে যেমন কুমিরের সঙ্গে লড়াই করা যায় না, তাই এই বিষয়ে শুভ নিশ্চুপ।

‘আহা রে’ সিনেমার প্রিমিয়ার শোতে এসেছিলেন ভারতের গুণী চিত্রনায়ক প্রসেনজিৎ। কথা বলেছেন আরিফিন শুভর সঙ্গে। ছবি–সংগৃহীত
‘আহা রে’ সিনেমার প্রিমিয়ার শোতে এসেছিলেন ভারতের গুণী চিত্রনায়ক প্রসেনজিৎ। কথা বলেছেন আরিফিন শুভর সঙ্গে। ছবি–সংগৃহীত

‘বালিঘর’ নামের সিনেমায়ও গত বছর কাজ করার কথা ছিল। আর কোনো খবর শোনা যায়নি। ছবিটি কি আদৌ হচ্ছে?
পরিচালক শেষবার আমাকে বলেছিলেন, শুভ, ‘বালিঘর’ হবে। তবে এটা যৌথ প্রযোজনায় হবে না, পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে হবে। ‘বালিঘর’ যেদিন হবে, মধু চরিত্রে তুই–ই থাকবি।

‘আহা রে’ ছবিটি শ্বশুর–শাশুড়ি নিয়ে দেখলেন। কী বললেন তাঁরা?

আমি ও আমার স্ত্রী দারুণ বন্ধু ছিলাম। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম–ভালোবাসা। এরপর বিয়ে। বন্ধুত্বের কারণে ওদের বাড়িতে সবাই তুই করে বলে। শুভ তো অর্পিতার বন্ধু, ওকে আলাদাভাবে কিছু করার নেই। বিয়ের পরও সেটাই আছে। আমি দেখেছি, আমার শ্বশুর জড়িয়ে ধরে আদর করেন না। এ নিয়ে আমাদের পরিবারে অনেক হাসাহাসিও হয়। ছবি দেখার পর সেই রীতি উল্টে গেল। শ্বশুর বলিউড় বাদশাহ শাহরুখ খানের মতো দুই হাত ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘আয় বাবা বুকে আয়।’ এটা নিয়ে অসাধারণ স্মৃতি। আমার শাশুড়িও খুব উপভোগ করেছেন। তিনি আমাকে সরাসরি কিছু বলেননি। অর্পিতাকে বলেছেন, ‘শুভটা বড় হয়ে যাচ্ছে রে।’

‘ঢাকা অ্যাটাক’–এর সিক্যুয়াল মিশন এক্সট্রিমের শুটিং শুরু হচ্ছে। প্রস্তুতি কেমন?
প্রথমত ঢাকা অ্যাটাকের সিক্যুয়াল নয়। এটা একেবারে নতুন মোড়কের গল্প। এখানে আমার চরিত্র একেবারেই অন্য রকম। সবকিছুই নতুন। ‘ঢাকা অ্যাটাক’–এর সঙ্গে এই ছবির গল্পের কোনো মিল নেই। মার্চে ছবির শুটিং শুরু হবে।

অনেকের মন্তব্য ‘একটি সিনেমার গল্প’, ‘ভালো থেকো’ আপনার করা উচিত হয়নি। কী মনে হয়, ছবি বাছাইয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
প্রথম বিষয়টা সবাইকে বুঝতে হবে, শুভ কী দেখে ছবির কাজ হাতে নেয়। আমি বলতে চাই, পরিচালকের সামর্থ্য দেখেই ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হই। আমি বিশ্বাস করি, চলচ্চিত্র হচ্ছে পরিচালকের মাধ্যম। শিল্পী হচ্ছেন কলাগাছ, শিল্পী হচ্ছেন পুতুল। একজন পরিচালকের সামর্থ্য থাকলে তিনি কলাগাছ দিয়ে সুপার–ডুপারহিট, বাম্পারহিট ছবি উপহার দিতে পারেন। শিল্পী খুব বেশি কিছু হলে সামান্য কিছু যোগ করতে পারেন। ম্যাজিক সৃষ্টি করতে পারেন। তবে মূল ম্যাজিক পরিচালককেই দেখাতে হয়। দুজন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালকের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাঁদের গল্প শুনে ভালো লাগে। তাঁদের সিনেমায় অভিনয় করি। বিগত জীবনে তাঁরা কি অসাধারণ সব হিট ছবি দেননি? অবশ্যই দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করেছিলাম, ভালো কিছু হবে, তাই করেছি। এর বেশি তো কিছু বলতে পারব না।