বাবা আমাকে পাপী গুড়িয়া বলে ডাকেন: আলিয়া ভাট

ছবিতে রণবীর সিং ও আলিয়া ভাট
ছবিতে রণবীর সিং ও আলিয়া ভাট
নিজেকে নিয়ে নিরীক্ষা করতে ভালোবাসেন আলিয়া ভাট। এবার জোয়া আখতার পরিচালিত গালি বয় ছবিতে অন্য রূপে আসছেন তিনি। ছবিটি মুক্তির আগে বলিউডের সুন্দরী ও দাপুটে অভিনেত্রী আলিয়া ভাটের মুখোমুখি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। মুম্বাইয়ের নভোটেল হোটেলের এই আড্ডায় উঠে এল তাঁর ক্যারিয়ার থেকে শুরু করে প্রেমিক রণবীর কাপুরের কথা।

নবাগতা অভিনেত্রীরা আপনার দ্বারা অনুপ্রাণিত। অনুেপ্ররণার বিষয়টি হলো, আপনি রিস্ক নিতে ভালোবাসেন।

রিস্ক নেওয়ার নামে আমি ঝুঁকি নিই না। তবে চিত্রনাট্য ভালো হলে ঝুঁকি নেওয়া খুব জরুরি। আর আমি ঝুঁকি না নিলে অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে নিজে মূল্যায়ন করতে পারব না। আমি সব সময় চেষ্টা করি অন্য ধারার চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরতে। অনেক সময় ঘরানা এক হলেও গল্প যেন আলাদা হয়, সে বিষয় মাথায় রাখি। আমি মনে করি, নিজেকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট না করলে নিজের কর্মক্ষমতা জানা যায় না। সম্প্রতি স্ত্রী ছবির সাফল্য তার প্রমাণ।

নিজের সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছেন কখনো?

হা হা হা! এই ছবির ‘সাকিনা’র মতো আমি নই। আমি শর্ট টেম্পার্ড। এই ধরুন, একটা গ্লাস কাল থেকে একই জায়গায় রাখা আছে। তখন আমি রেগে গিয়ে চিৎকার করি। তবে আমি আমার এই ব্যবহারের জন্য সঙ্গে সঙ্গে খুব অনুতপ্ত হই। আর ‘সরি’ও বলি। আমি খুব তাড়াতাড়ি শান্ত হয়ে যাই। নিজের মনের মতো কাজ না হলে আমি খুব আপসেট হয়ে যাই। তবে আমি সবাইকে অল্পে ক্ষমা করে দিই। আমি প্রতিশোধ নেওয়া একদম পছন্দ করি না। আমার মনে হয়, এতে অন্যকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর আমার জীবনের মন্ত্র হলো, ‘নিজে বাঁচো, অন্যকে বাঁচতে দাও’।

‘গালি বয়’-এর আগে র‌্যােপর কতটা ভক্ত ছিলেন?

আমি আগে র‌্যাপ খুব একটা শুনতাম না। আর র‌্যাপ কবিতার মতো। তাই এর কথা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই ছবি করার পর আমি ধীরে ধীরে র‍্যাপের ভক্ত হয়ে উঠছি। আগে গানের লিরিক মন দিয়ে শুনতাম না। এখন খুব মন দিয়ে গানের কলি শুনি।

আলিয়া ভাট
আলিয়া ভাট

এই ছবিতে আপনার মুখে মুম্বাইয়ের টপোরি ভাষা শোনা গেছে। আগে এই ভাষা কখনো ব্যবহার করেছেন?

না, এর আগে কখনো টপোরি ভাষায় কথা বলিনি। তবে এই ছবি করতে গিয়ে আমি টপোরি ভাষা শিখেছি। আমরা সেটে এই ভাষায় কথা বলতাম। টপোরি শেখার পর আমি নিজেকে একজন প্রকৃত মুম্বাইকর মনে করি। জানেন, এই ছবির ট্রেলার দেখে বাবা (মহেশ ভাট) আমাকে ‘পাপী গুড়িয়া’ বলে ডাকেন। তিনি বলেন, আলিয়া তুমি একটা গুন্ডি। এমনকি জোয়া (পরিচালক) ও রণবীরও (সিং) আমাকে ‘গুন্ডি’ বলে ডাকে। হা হা হা!

আপনি ও রণবীর সিংয়ের আগে একসঙ্গে একাধিক বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। তবে ছবিতে এই প্রথম কাজ করলেন। রণবীরকে কতটা আবিষ্কার করলেন?
রণবীরকে আমার আগে থেকেই ভালো লাগত। তবে আমাদের পেশাটা এমন যে আমরা একে অপরের সঙ্গে দেখা করে সময় কাটাব, তার সুযোগ খুব কমই আসে। তবে গালি বয় শুটিংয়ের মাধ্যমে আমি রণবীরের নতুন রূপ আবিষ্কার করেছি। ওকে আপাতদৃষ্টিতে দেখে যে রকম মনে হয়, ও তা নয়। রণবীরকে হামেশা রংবেরঙের কাপড় পরে চেয়ারের ওপর উঠে নানান কাণ্ডকারখানা করতে দেখা যায়। এটা ওর একটা রূপ। এভাবে রণবীর সবার মনোরঞ্জন করতে এবং সবার ভালোবাসা পেতে চেষ্টা করে। সবার মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়াই ওর উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু এর পাশাপাশি রণবীরের অন্য একটা রূপ আছে। আসলে ও খুবই সংবেদনশীল, শান্ত ও বুদ্ধিসম্পন্ন এক ব্যক্তি। এককথায় রণবীর দুর্দান্ত এক অভিনেতার পাশাপাশি দারণ এক মানুষ। রণবীরের সঙ্গে কাজ করতে করতে ধীরে ধীরে ওকে চিনেছি। আমরা চাই একসঙ্গে আরও কাজ করতে।

আর ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ সেটে অভিনেতা রণবীর কাপুরকে কতটা জেনেছেন? সম্প্রতি রণবীর বলেছেন তিনি আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন।
সত্যি এ কথা বলেছে? আমি মনে করি রণবীর খুবই স্বতঃস্ফূর্ত এক অভিনেতা। ও খুব সহজে কাজ করে। আমি রণবীরের মতো ন্যাচারাল ও শান্ত মাথার অভিনেতা কখনো দেখিনি। আমি এমনিতে নিজের সংলাপ ভুলি না। কিন্তু রণবীরের অভিনয় দেখে আমার সংলাপ গুলিয়ে যেত। ওর অভিনয় দেখে ডুবে যাওয়া যায়, শেখা যায় না। আর রণবীরের চোখে লুকিয়ে আছে অসম্ভব সততা ও সারল্য। আমি ওর অভিনয়ের বড় ভক্ত। শুধু আমি নই, অনেকেই অভিনেতা হিসেবে রণবীরকে সম্মান করেন। আর সব থেকে বড় কথা, এই ব্যাপারে ওর কোনো অহংকার নেই।

রণবীরের মা নিতু সিং ও বাবা ঋষি কাপুরের সঙ্গে আপনার অনেক ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায়। আপনার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কটা কেমন?
নিতু সিং অভিনেত্রী হিসেবে দুর্দান্ত, তা সবারই জানা। আর মানুষ হিসেবেও তিনি অসাধারণ। আমার মনে হয়, রণবীরের জীবনের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি, শান্ত ও ধীরস্থির স্বভাব, এ সবকিছু মায়ের কাছ থেকে পেয়েছে। নিতু সিং ও আমার সম্পর্ক বন্ধুর মতো। আর ঋষি কাপুর একদম অন্য ধারার এক মানুষ। তাঁর সঙ্গে কীভাবে সময় কেটে যায়, বুঝতেই পারি না। আমরা খুব মজা করে সময় কাটাই।

সম্প্রতি রণবীর সিং ‘ল্যাকমে ফ্যাশন উইক’-এ ‘গালি বয়’ ছবির প্রচারণার সময় উপস্থিত জনতার মধ্যে ঝাঁপ দেন। আর একটি মেয়ে আহত হয়েছিলেন। অনেকে রণবীরের এই কাণ্ডকারখানার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এ ব্যাপারে আপনার কী মতামত?

এর আগে একটি কনসার্টে রণবীর জনতার মধ্যে ঝাঁপ দিয়েছিল। কিন্তু তখন কেউ আহত হয়নি বলে কেউ এ নিয়ে কথা বলেনি। কিন্তু আজ একটা ঘটনার জন্য রণবীরের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে। আমরা এভাবে তাকে দায়ী করতে পারি না। কারণ, রণবীরের উদ্দেশ্য সৎ ছিল। কাউকে আঘাত করার জন্য ও ঝাঁপ দেয়নি। অথচ অন্য সময় আমরা রণবীরের এই সব কাণ্ডকারখানা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি।