পাকিস্তানের প্রেক্ষাগৃহে কমেছে দর্শক

পাকিস্তানের প্রেক্ষাগৃহগুলো নাকি এখন প্রায় দর্শকশূন্য। পাকিস্তানে ভারতের ছবি নিষিদ্ধ করার পর দ্রুত প্রেক্ষাগৃহের চিত্র বদলে যায়। যেসব প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় ছবির প্রদর্শনী হচ্ছিল, তা নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সেখানে পাকিস্তানের পুরোনো চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হচ্ছে। পাকিস্তানের চলচ্চিত্র পরিবেশকদের মতে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি এবং পরে ভারতে নির্মিত চলচ্চিত্র পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে চলচ্চিত্র ব্যবসায়। পাকিস্তানের রাজস্ব আয়ের বড় অংশ আসে চলচ্চিত্র ব্যবসা থেকে। সম্প্রতি পাকিস্তানে বলিউডের ছবি ‘টোটাল ধামাল’ মুক্তি দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই দেশের চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীরা।

আগেই জানা গেছে, পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) ভারতের বিমানবাহিনীর হামলার পর গত মঙ্গলবার বিকেলে পাকিস্তানের তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী চৌধুরী ফাওয়াদ হুসেন টুইটারে জানিয়েছেন, পাকিস্তানে ভারতের তৈরি চলচ্চিত্র আর বিজ্ঞাপন বয়কট করা হবে। পাকিস্তানের চলচ্চিত্র পরিবেশকেরাও ভারতীয় সিনেমা বয়কট করবেন। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘সিনেমা পরিবেশকদের সংগঠন ভারতীয় কনটেন্ট বয়কট করছে। কোনো ভারতীয় সিনেমা পাকিস্তানে মুক্তি দেওয়া হবে না। এ ছাড়া ভারতে তৈরি কোনো বিজ্ঞাপনচিত্র পাকিস্তানের কোনো টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হবে না।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে পাকিস্তানে নির্মিত ২১টি চলচ্চিত্র সেখানে মুক্তি পেয়েছে। একই সময় বলিউড ও ভারতের বিভিন্ন ভাষার ১ হাজার ৮১৩টি ছবি মুক্তি পায়। এর মধ্যে বলিউড ও দক্ষিণের ছবির চাহিদা আছে পাকিস্তানের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে। এর আগেও পাকিস্তানে আরও অনেক বার ভারতের চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় অসংখ্য প্রেক্ষাগৃহ। সেসব স্থানে পরে শপিং মল নির্মাণ করা হয়।

এদিকে অল ইন্ডিয়া সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়, পাকিস্তানের কোনো শিল্পী আর বলিউডে কাজ করতে পারবেন না। ভারতের নির্মাতারা তাঁদের চলচ্চিত্র পাকিস্তানে মুক্তি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বলিউডের জনপ্রিয় তারকা সালমান খান তাঁর আগামী ছবি ‘নোটবুক’ থেকে পাকিস্তানের জনপ্রিয় গায়ক আতিফ আসলামকে বহিষ্কার করেছেন। ছবিটির প্রযোজক সালমান খান। তাই তিনি ‘নোটবুক’ ছবি থেকে আতিফ আসলামের গান বাদ দেওয়ার কথা বলেছেন। এর আগে টি-সিরিজ আতিফ আসলামের গান ইউটিউব থেকে বাদ দিয়েছে। পাকিস্তানের কোনো শিল্পী এখন ভারতের কোনো অনুষ্ঠানেও গান গাইতে পারবেন না। যাঁরা ভারতে থাকছেন, তাঁদেরও ভারত থেকে বহিষ্কারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরে ১৪ ফেব্রুয়ারি বোমা হামলায় দেশটির সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ৪০ জনের বেশি সদস্য নিহত হয়েছেন। সেদিন বেলা সোয়া তিনটা নাগাদ রাজ্যের পুলওয়ামা জেলার আওয়ান্তিপুরা এলাকায় বাইপাসের কাছে গোরিপোরায় জম্মু-শ্রীনগর ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে এ হামলার ঘটনা ঘটে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারতীয় বাহিনীর ওপর এটাই সবচেয়ে বড় হামলা। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এক ভিডিও বার্তায় এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। এরপর থেকে ভারতে চলচ্চিত্র তারকা আর নির্মাতারা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। পাকিস্তানে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলাকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতের চলচ্চিত্রের তারকারা। সবাই বিমানবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ভারতের তারকারা এই হামলাকে স্বাগত জানিয়ে টুইটারে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন।