'ও একটা একলা গাইবে'

‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার’ সিডির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে (বাঁ থেকে) রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, অরূপরতন চৌধুরী, হৈমন্তী শুক্লা, আবুল মাল আবদুল মুহিত, কে এম খালিদ, অসীম কুমার উকিল ও দীপঙ্কর ভাস্কর। রাজধানীর একটি হোটেলে। ছবি: প্রথম আলো
‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার’ সিডির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে (বাঁ থেকে) রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, অরূপরতন চৌধুরী, হৈমন্তী শুক্লা, আবুল মাল আবদুল মুহিত, কে এম খালিদ, অসীম কুমার উকিল ও দীপঙ্কর ভাস্কর। রাজধানীর একটি হোটেলে। ছবি: প্রথম আলো

‘এখন আমরা দিদির গান শুনব’ বললেন ড. অরূপরতন চৌধুরী। দুই বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী হৈমন্তী শুক্লার সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে দুটো গান গেয়েছেন তিনি। এবার হৈমন্তীকে একক কণ্ঠে গাওয়ার আহ্বান জানালেন। ‘দিদি’ ছাড়বার পাত্রী নন। বললেন, ‘না, ও একটা একলা গাইবে।’ তবে দিদি নিজেও গাইলেন। তাঁর দারুণ জনপ্রিয় ‘ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না’ গানটি। সেই ৩০ বছর আগের মায়া, বৃষ্টির প্রতি আকুতির এতটুকু কমেনি তাঁর কণ্ঠে।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি তারকা হোলেটের সন্ধ্যা। ঢাকার দন্তচিকিৎসক, শিল্পী অরূপরতন চৌধুরী ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী হৈমন্তী শুক্লার দ্বৈতকণ্ঠে গাওয়া ভিডিও সিডি ‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার’-এর মোড়ক উন্মোচন ছিল। পাঁচটি রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছেন তাঁরা। আর সেই ভিডিওতে গানগুলোর সূত্রধর হিসেবে দেখা দিয়েছিলেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সাউন্ডটেক ইলেকট্রনিক থেকে প্রকাশিত সিডির গানগুলো প্রতিষ্ঠানটির ইউটিউব চ্যানেলে গেলেও দেখা যাবে।

অনুষ্ঠানের অতিথিদের প্রত্যাশা ছিল, হৈমন্তীর সঙ্গে সৌমিত্রকেও পাবেন সেখানে। কিন্তু কেবলই চলচ্চিত্র হয়ে বড় পর্দায় দেখা দিয়েছিলেন তিনি। বলছিলেন, ‘অ্যালবামটি দুই বাংলার মৈত্রীর বন্ধনকে আরও দৃঢ় করবে।’ জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। তারপর বড় পর্দায় দেখা দেন সৌমিত্র। তিনি সূত্রপাত করে দেওয়ার পর দেখা যায় রেকর্ডিং স্টুডিওতে পাশাপাশি বসে গাইছেন দুই শিল্পী। কখনো তরুণ মডেলদেরও গানের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায়।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাউন্ডটেক ইলেকট্রনিকের মহাব্যবস্থাপক আতাউর রহমান। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।

সভাপতির বক্তব্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘সৌমিত্রর নাটক দেখেছিলাম। ভেবেছিলাম, আজ আবার তাঁর দেখা পাব। তবে আজ তাঁর বলার সঙ্গে পরিচিত হলাম। এই অ্যালবাম প্রকাশ করার জন্য অভিনন্দন।’ কে এম খালিদ বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার আগে বুঝিনি, সংস্কৃতির ক্ষেত্রটা এত বিস্তৃত। হৈমন্তী শুক্লাকে এত কাছ থেকে এই প্রথম দেখলাম। তাঁর গান শুনে বড় হয়েছি আমরা। আজ কাছ থেকে তাঁকে দেখতে পেয়ে ভালো লাগছে।’

নতুন সিডির মোড়ক উন্মোচনের পর দ্বৈতকণ্ঠে গাইছেন অরূপরতন চৌধুরী ও হৈমন্তী শুক্লা। ছবি: প্রথম আলো
নতুন সিডির মোড়ক উন্মোচনের পর দ্বৈতকণ্ঠে গাইছেন অরূপরতন চৌধুরী ও হৈমন্তী শুক্লা। ছবি: প্রথম আলো

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ‘হৈমন্তী দিদির সঙ্গে আমার পরিচয় প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। তিনি কেবল জনপ্রিয় নন, প্রিয় শিল্পী। তাঁর গানের কথা নতুন করে বলব না, বরং বলা যেতে পারে এমন আন্তরিক ও স্নেহপ্রবণ মানুষ হয় না। এই সিডিতে গান করে তিনি একে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন। দন্তচিকিৎসক অরূপরতন বহুমাত্রিক মানুষ। সমাজসেবাও করেন। তাঁকে অভিনন্দন জানাই।’

সিডির ভিডিওচিত্রের কিঞ্চিৎ সমালোচনা করে বন্যা বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান বহুমাত্রিক। তাঁর গান সব সময়ই অসীম। তাঁর গান শোনার সময় শ্রোতারা নিজের কল্পনার রঙে ছবি আঁকেন। যখনই গানগুলোকে ভিডিও করা হয়, সেটাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়। ধরা যাক “সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে” গানটি যখন লেখা হয়, ঠিক সেই সময়ে নৃত্যনাট্যের জন্য একটা দ্বৈত নাচ দরকার ছিল। তিনি লিখলেন “কেটেছে একেলা বিরহের বেলা” গানটি। সেটা নৃত্যনাট্যের জন্য মানানসই ছিল। এখানে যে গানটি দেখানো হলো, সেখানে দুজনের মধ্যে একটা ফেলে আসা ব্যাপার আছে। রবীন্দ্রনাথের বহুমাত্রিকতাকে ভাঙতে গেলে অনেক ভাবতে হবে। করে ফেললেই হবে না। তবে এ গানগুলো চোখ বন্ধ করে শোনা যেতে পারে। ভিডিওচিত্রের ক্ষেত্রে আরও মননশীল হতে হবে।’

হৈমন্তী শুক্লা বলেন, ‘আমার দুই-একটা গান ভালো লেগেছে বলে আপনারা আমাকে ভালোবাসেন। সে জন্যই গেয়ে যাচ্ছি। বন্যার সামনে রবীন্দ্রনাথের গান গাইতে লজ্জা লাগে। সে সব সময় আমাকে উৎসাহিত করত। এ গান উপলব্ধি না করলে, জীবনের সঙ্গে না মেলালে হয় না। ভালো করে না শিখে এ গান গাওয়া যায় না। অরূপরতন ভাইয়ের অনুরোধে গাইলাম। আমি কেবল দুলাইন গান করেছি। সে কত কিছু করে গানটা করে। ওকে আশীর্বাদ করবেন।’

অরূপরতন চৌধুরী বলেন, ‘দুটি কারণে এই অ্যালবাম করেছি। এক. আমার শিল্পীজীবন ঝিমিয়ে পড়ছিল। সেটাকে জাগানো দরকার। গত ১০ বছর আমার কোনো অ্যালবাম বের হয় না। গানটা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দরকার। দুই. বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের ওপর স্টিম রোলার চালানো হয়। এই গানগুলোকে ঠিকমতো রাখব ভেবেছিলাম। জন্মের পর থেকে যার গান শুনে বড় হয়েছি, সেই জন্য তাঁর সঙ্গে গেয়েছি। দিদি আনন্দের সঙ্গে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। প্রকৃত শিল্পী সেই, যার কোনো অহংকার নেই। একজন শিল্পীকে জানতে হলে হৈমন্তী দিদিকে জানতে হবে।’

তিন আরও বলেন, ‘নেশা করা ক্ষতিকারক। কিন্তু কিছু নেশা থাকে মঙ্গলজনক। আমার তেমন একটা নেশা, গান। এ নেশায় মানুষ ভালো থাকে। চিকিৎসার কাজে এত ব্যস্ততার পরও তাই সময় বের করে গান করি। সংস্কৃতিচর্চা আরও যদি বাড়ানো যায়, তাহলে তরুণেরা মাদক থেকে দূরে থাকবে।’ অনুষ্ঠানে একক ও দ্বৈত কণ্ঠে কয়েকটি গান গেয়ে শোনান তাঁরা। অ্যালবামের গানগুলোর সংগীত পরিচালনা করেছেন কলকাতার দীপঙ্কর ভাস্কর।