মেয়েরাও আমাকে নাচিয়েছে: তাহসান

এমন তাহসানকে আগে কখনো দেখা যায়নি। নিজের প্রথম সিনেমা ‘যদি একদিন’-এর প্রচারে তিনি এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছেন। মুহাম্মাদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত এই সিনেমার জন্য এফডিসি থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যম, সব জায়গায় ছুটছেন তিনি। এমনকি ঢাকার দেয়ালে মধ্যরাতে পোস্টারও লাগাচ্ছেন। প্রথম সিনেমা বলেই মুক্তির আগে একটা রোমাঞ্চকর সময় পার করছেন নায়ক হতে যাওয়া তাহসান। এসব নিয়ে সোমবার দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেন তিনি।

সিনেমার জন্য দেখা যাচ্ছে খুব ছোটাছুটি করছেন। এমনটা আগে কখনো আপনাকে দেখা যায়নি...
‘দেবী’ সিনেমার মুক্তির আগে জয়া আপা (জয়া আহসান) প্রচারে নতুন এক স্টাইল দেখালেন। তিনি যেভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন, বিস্ময়ে শুধু তাকিয়ে ছিলাম। প্রতিনিয়ত অভিভূত হয়েছি। ভাবছিলাম, তিনি যা করেছেন, তার চেয়ে বেশি কিছু করব। তা তো আর সম্ভব না। আমি জয়া আপার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত। ছবিটি নিয়ে সবার কাছে যাচ্ছি।

এফডিসিতেও গেলেন দেখলাম...
গতকাল রোববার গিয়েছিলাম। আমি খুবই প্রীত হয়েছি। এফডিসির ডাকসাইটে অনেক পরিচালক যেমন ছিলেন, ছিলেন কিংবদন্তিরাও। তাঁরা সবাই আমার সিনেমার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন। সবার প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। অনেকের কাছে শুনেছি, টেলিভিশন থেকে যাঁরা সিনেমায় কাজ করতে যান, তাঁদের প্রতি সিনেমার মানুষদের এক ধরনের উন্নাসিকতা কাজ করে। যাঁরা এসব কথা বলেন, তাঁরা যে ভুল বলেন, এটার প্রমাণ পেয়েছি। সবাই আমাকে উষ্ণ অভিবাদন জানিয়েছেন। এফডিসিতে প্রথম চা খেলাম। সিনেমার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে অনুরোধ করছি, ছবিটির প্রচারণায় অংশ নিতে, আরও মানুষের কাছে ছবিটির কথা বলতে। পত্রিকা অফিস, টেলিভিশন, রেডিও, ফেসবুক লাইভ—সবই করছি।

বড় পর্দায় সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। অভিজ্ঞতা কেমন?
অনেক বছর ধরে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি তো। একটা সময় পর নতুন চ্যালেঞ্জ পাওয়া যায় না। গান করেছি, নাটকে অভিনয় করেছি—নতুন চ্যালেঞ্জ অনেক দিন পাইনি। এই সিনেমা মুক্তির দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রতিটা মুহূর্তই অন্য রকম লাগছে। পরশু দিন গভীর রাতে মগবাজার মোড়ে নিজের ইচ্ছায় পোস্টার লাগিয়েছি। কারণ, ব্যাপারটা আমার কাছে একেবারেই অন্য রকম। আমার প্রথম অ্যালবাম মুক্তির আগের রাতেও মগবাজার মোড়ে পোস্টার লাগিয়েছিলাম। আমি মনে করি যেকোনো প্রথম অনুভূতি জীবনে একবারই আসে। এই অনুভূতিটা আস্বাদ করতে চাই। সিনেমা তো আসলে একজনের না, নায়ক-নায়িকা কিংবা গায়ক-গায়িকার না—অনেকের একটা সম্মিলিত প্রয়াস। এটা যে কত বড় একটা পরিবার, মানুষ হয়তো দেখছে না। সিনেমাটা যদি ভালো করে, মানুষের মন জয় করে, তাহলে অনেক মানুষের অর্জন হবে।

ডাবিং কিংবা সম্পাদনার সময় নিজেকে যখন বড় পর্দায় দেখলেন, কেমন লেগেছিল?
কয়েকবার দেখেছি। প্রথমবার যখন দেখেছিলাম, পরিচালকের সঙ্গে অনেক ঝগড়া করেছি। বলেছি, এটা এমন হতে হবে। ওটা এমন হবে। ডাবিং এমন হবে। আবহসংগীত তেমন হবে। প্রথম দেখায়, ৩৫টা নোট ধরিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছি, দরকায় হয় দৃশ্য বদলাতে হবে। সত্যি কথা বলতে, দুই মাস আগে এই সংশোধনের পর এখন তা আমার প্রত্যাশাকে ছাড়িয়েছে। সিনেমাটা এত ভালো হয়েছে, কিছু দুর্বলতা রেখে যদি মুক্তি দেওয়া হয়, তাহলে দর্শকেরা ওসব নিয়েই কথা বলতে মজা পাবে। ছোট ব্যাপারগুলো সংশোধনের পর ছবিটি এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে—আমি খুবই খুশি। এই সিনেমার সাউন্ড ডিজাইন করেছেন রিপন নাথ। তিনি আমাদের এই সিনেমার সমালোচকদের একজন। শেষ দিন আমরা ছবিটি দেখার সময় তিনি কেঁদে ফেলেছেন।

বোঝা যাচ্ছে ছবিটিতে শুধু অভিনয় নয়, অনেক বেশি সম্পৃক্ত ছিলেন
প্রথম ছবি তো, চ্যালেঞ্জ বেশি। চ্যালেঞ্জটাকে খুব উপভোগ করেছি বলেই এতটা সম্পৃক্ত হয়েছি। সারা বিশ্বের বিনোদন অঙ্গনে একটা কথা প্রচলিত আছে, ইউ আর অ্যাজ গুড অ্যাজ ইয়োর লাস্ট ওয়ার্ক। ১৬ বছরে আমি হয়তো ২০০ গান গেয়েছি, তার মধ্যে ১০০ হিট হলো। কিংবা ৬০টা নাটক করলাম, তার মধ্যে ৩০টা হিট হলো—সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম সিনেমা। এই সিনেমাই হয়তো আমার প্রথম কাজ, না হয় এটাই আমার শেষ কাজ।

সিনেমায় তো মারামারি করতে হয়। ট্রেলারেও রাগী ভাব দেখা গেছে। মারামারি কি সত্যিই করেছেন?
এখন আসলে ওই যুগটা নেই। এখন গল্পটাই আসল। নাচ নেই। মারামারি নেই। পরিবার নিয়ে দেখার মতো। আমি বলতে পারি, পরিবার নিয়ে এমন সিনেমা বিগত কয়েক বছরে হয়নি। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো গল্প। রোমাঞ্চ থাকবে, পদে পদে ধাক্কা থাকবে। চমকও থাকবে। তবে এই সিনেমার শুটিংয়ের সময় মারামারি অফস্ক্রিনে বেশি হয়েছিল। সহশিল্পী তাসকিন বেশ মার খেয়েছে, ব্যথাও পেয়েছে। ছোট ভাই হিসেবে কিছু বলেনি যদিও।

বাস্তবজীবনে কখনো মারামারি করেছেন?
করিনি, কিন্তু একজনের শার্টের কলার চেপে ধরেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমার বন্ধুকে নিয়ে আরেকজন খারাপ কথা বলেছিল। পছন্দ না হওয়াতে কলার চেপে ধরি। আমি শুধু কলার চেপে ধরে বুঝিয়েছিলাম, সে যা করেছে সরি বলা উচিত। আমি আসলে মারামারি জানি না। শান্তিপ্রিয় মানুষ। কথা বললেই মার হয়ে যায়।

এই সিনেমার গানগুলোও বেশ আলোচিত...
আমি তো বলব, হৃদয় খান তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ গান এই সিনেমায় করে ফেলেছে। ‘লক্ষ্মীসোনা’ শিরোনামের এই গানের ভিজ্যুয়ালে আমি একাত্ম হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। গানের দৃশ্যে শিশুশিল্পী রাইসার সঙ্গে এতটাই মিশে গিয়েছিলাম, অনেক বাবা আমাকে জানাচ্ছেন, বাসায় গিয়ে তাঁদের ওই গান ছেড়ে দিয়ে নাচতে হয়। অনেক দিক থেকে এই গান সফল। আমার ও কোনালের গাওয়া ‘আমি পারব না তোমার হতে’ গানটাও একটা মাইলফলক ছুঁয়েছে। গানটির একটা সারপ্রাইজ আছে সিনেমার মধ্যে, আগে থেকে এসব প্রকাশ করতে চাই না।

মারামারি না হয় করেননি, তাই বলে নাচতেও হয়নি বুঝি?
এটা জানতে আর মাত্র তিন দিনের অপেক্ষা।

অনেকে বলে, গানে গানে আপনি সারা দেশের মেয়েদের নাচিয়েছেন। সেই আপনি নিজে কতটা নাচ জানেন?
এটা একদম সত্যি কথা না। আমি কি শুধু একাই মেয়েদের নাচিয়েছি? মেয়েরাও তো আমাকে নাচিয়েছে। এই যেমন দীপিকা পাড়ুকোন। তিনি যখন ঢাকায় এলেন, আমায় সবার সামনে নাচিয়েছেন।

নারী দিবসে ‘যদি একদিন’ ছবিটি মুক্তি দেওয়ার বিশেষ কোনো কারণ আছে কি?
বিশেষ কোনো কারণ একদমই নেই। ৮ তারিখের সপ্তাহ খালি ছিল, তাই এই দিনে ছবিটি মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে অংশ নিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটা গানের রেকর্ডিং করলেন। ওই গানের কী খবর?
গানটা মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু প্রচারণা না করার কারণে গানটির খবর অনেকে জানেন না। সিনেমার প্রচারণা শেষে এটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ব। গানটির শিরোনাম ‘মায়াবী আলোতে’।

গানের জন্য প্রচার বেশি দরকার, না সিনেমার জন্য?
১৬ বছর ধরে আমি পেশাদারভাবে কাজ করছি। এই সময়টাতে নিজেকে প্রচারবিমুখ রেখেছি। সব সময় ভেবেছি, আমার কাজ ভালো হলে মানুষই ঢোল পেটাবে। কিন্তু সিনেমার ভাষাটা ভিন্ন। গান অথবা অন্য সৃজনশীল কাজ ধীরে ধীরে সফলতা পায়। একটা গান যখন মুক্তি পায় তখন আমার চিন্তা থাকে, ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাক। এক বছর পর গানটা হিট হোক। আমার কিন্তু ‘আলো’ আর ‘প্রেমাতাল’ গান দুটি ১০ বছর পরও হিট হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম বারবার শুনছে। কিন্তু সিনেমার ব্যাপার হচ্ছে, প্রথম সপ্তাহে যদি দর্শক প্রেক্ষাগৃহে না যায়, তাহলে তকমা পড়ে যাবে সিনেমা ফ্লপ। ভালো হয়নি। সে কারণে আমি বলব না, সিনেমা ধীরে ধীরে জানুক। সিনেমার ব্যাপারে প্রথম তিন-চার দিনে মানুষকে জানাতে হয়। সিনেমার জন্য প্রচারটা খুব বেশি দরকার। গান এবং নাটকের জন্য দর্শকেরাই করবে। সিনেমার ক্ষেত্রে শুরুর প্রচারটা আয়োজকদের করে দিতে হয়।

আপনার মেয়ে আয়রার সঙ্গে সময় কাটান কীভাবে?
কাজের ফাঁকে যখনই সময় পাই, আয়রার সঙ্গে কাটাই। আয়রার মা এখন দেশের বাইরে, তাই আমাকে সময় বেশি দিতে হচ্ছে। আমরা দুজন সুন্দরভাবে সমন্বয় করে নিই। আর বিষয়টা একান্তই আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। সুন্দরভাবে সমন্বয় করে নিচ্ছি।

বিয়ে নিয়ে কোনো ভাবনা আছে? বিয়ে করবেন কবে?
আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। ব্যক্তিজীবনের কিছু আমি আর কাউকে জানাতে চাই না। একবার জানিয়ে দেখেছি, মানুষ আমার ব্যক্তিগত জীবনকে তার ব্যক্তিগতজীবন মনে করে। আমি সেটা তো হতে দিতে পারি না।

মানুষ বলতে কাদের কথা বলছেন? শুধু ভক্ত নাকি অন্য কেউ?
শুধু ভক্ত না। ভক্তের বাইরেও অনেকে আমার ব্যক্তিজীবন নিয়ে কথা বলেছে, যেটা আমার ভালো লাগেনি। বিয়ে নিয়ে কথা বললে ব্যবসায়ীদের অনেক সুবিধা হয়। যত বেশি গসিপ বানাতে পারবে, ততই ব্যবসা হবে। ডিভোর্সের সময়টাতে আমি তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। সবাই তো আর ভালো সাংবাদিকতা করেন না। ব্যক্তিজীবন নিয়ে আমি আর কথা বলার সুযোগটা কাউকে দিতে চাই না।