শুভর রহস্যময় হাসির আড়ালে

সত্যজিৎ রায়ের অপু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শুভ্রজিৎ মিত্রের অপু আরিফিন শুভ
সত্যজিৎ রায়ের অপু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শুভ্রজিৎ মিত্রের অপু আরিফিন শুভ

কালজয়ী অপুর চরিত্রে ভারতের বরেণ্য অভিনয়শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে দর্শক দেখেছেন। চিরচেনা সেই অপু ফিরে আসছে নতুন করে। তিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। ৬০ বছর পর অপুকে সিনেমার পর্দায় ফিরিয়ে আনছে ভারতের নামকরা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মধুর ভাণ্ডারকার ফিল্মস ও গৌরাঙ্গ ফিল্মস।


এই দুটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ছবিটি বানাচ্ছে। পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র ‘অপরাজিত’ উপন্যাসের শেষাংশের ওপর নির্ভর করে ‘অভিযাত্রিক: দ্য ওয়ান্ডার লাস্ট অব অপু’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করতে যাচ্ছেন।

এই সিনেমার মধ্য দিয়ে অপু আবার ফিরছেন। আরিফিন শুভ আজ বুধবার প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

‘অভিযাত্রিক: দ্য ওয়ান্ডার লাস্ট অব অপু’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য আরিফিন শুভর সঙ্গে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের চুক্তিপত্রে সই হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। বিষয়টি নিয়ে এত দিন মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন তিনি। প্রযোজক ও পরিচালকের পক্ষ থেকে নিষেধ থাকার কারণে এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি। তবে নিজের ফেসবুকে ‘অভিযাত্রিক’–সংক্রান্ত বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করে রহস্য আরও উসকে দিয়েছেন। যতবারই জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মুচকি হেসে এড়িয়ে গেছেন। এ বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রথম আলোকে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কিছুই জানি না। একটা কালজয়ী চরিত্র আবার বড় পর্দায় ফিরে আসছে, অভিনয়শিল্পী হিসেবে খবরটি শুনে খুব ভালো লেগেছে। তাই ভাবলাম নিজের ভালো লাগা অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিই। ভবিষ্যতে কী হবে না হবে, তা ভবিষ্যতে দেখা যাবে।’

দেড় মাস পর সেই মুচকি হাসির রহস্যের অবসান হলো। ভবিষ্যতে কী হবে তাও জানা গেল। ‘অভিযাত্রিক: দ্য ওয়ান্ডার লাস্ট অব অপু’ সিনেমায় বহুল আলোচিত অপু চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন আরিফিন শুভ। বিষয়টি নিয়ে শুভর মধ্যে উচ্ছ্বাস যেমন, তেমনি চাপও কাজ করছে। পাশাপাশি মনে করছেন, অনেক কিছু শিখতে পারবেন। প্রথম আলোকে আজ বুধবার শুভ বললেন, ‘এই ছবিতে কাজ করার ব্যাপারটি নিয়ে আমার কাছে ভয়, আশা ও উত্তেজনার সবকিছুর মিশ্রণ। সবচেয়ে বড় বিষয় মনে হচ্ছে, আমি অনেক কিছু শিখতে পারব, জানতে পারব যা, আগামী সময়ের সঞ্চয়। লাল–সবুজের পতাকা দেখি না কত দূর নিয়ে যাওয়া যায়।’

নিজেকে অপু হিসেবে পর্দায় উপস্থাপনের চ্যালেঞ্জ কতটুকু, আর প্রস্তুতিইবা কেমন, জানতে চাইলে শুভ বলেন, ‘এই চরিত্রের কাজ করার চ্যালেঞ্জ মাটি থেকে আকাশ যত, ঠিক তত। ব্যর্থতা–সফলতা কিছুই জানি না। নিজেকে উজাড় করে দেব, এটা আমি জানি। দুই নৌকায় দাঁড়াই না আমি। আমার এখনকার সব চিন্তাভাবনা “মিশন এক্সট্রিম” সিনেমা নিয়ে। এই ছবির কাজ ৩০ এপ্রিল শেষ হবে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢুকে পড়ব “অভিযাত্রিক” সিনেমার কাজে। প্রস্তুতি পর্ব তখনই হবে। আর গল্পটা তো পরিচালক অনেক আগে বলেছেন। ওঁরা বহু আগে ছবির চূড়ান্ত চিত্রনাট্য দিয়েছেন, তারপর চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছি।’

নিজেকে অপু চরিত্রে নয়, এই ছবির একটি অংশ হতে পারাই অনেক বেশি গৌরবের মনে করছেন আরিফিন শুভ। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ব্যাপার, যেই সিনেমার সঙ্গে মধুর ভান্ডারকর ফিল্মস ও গৌরাঙ্গ ফিল্মস জড়িত, এমন পরিচালক, সহশিল্পী, কোনো দিন কল্পনাতেও কল্পনা করিনি। সেটা আজ চোখের সামনে ঘটছে। আমাকে যারা আজকের আমি বানিয়েছে, তাদের সবার কাছে আমার কৃতজ্ঞতা, যাদের জন্য আমি আজকে এমন একটি কাজের অংশ হতে পারলাম। এ রকম ছবিতে প্রোডাকশন বয়ও হতে হয় রাজি আছি।’

ছয় দশক আগে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্র ‌‘অপু’কে সেলুলয়েডে নিয়ে আসেন সত্যজিৎ রায়। বিখ্যাত ওই ঔপন্যাসিকের ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘অপরাজিত’ উপন্যাসকে তিন ভাগে ভাগ করে ট্রিলজি নির্মাণ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। সেগুলো হলো ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’। এবার পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র ‘অপরাজিত’ উপন্যাসের শেষাংশের ওপর নির্ভর করে ‘অভিযাত্রিক’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করতে যাচ্ছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ হয়তো একটাই, সত্যজিৎ রায় যেভাবে কালজয়ী চরিত্র ‘অপু’কে পর্দায় হাজির করেছিলেন, তা দর্শকের মনে গেঁথে আছে। এখন আবার নতুন করে নির্মিত হলে চরিত্রটি আগের মতো আবেদন ধরে রাখতে পারবে?

সত্যজিৎ রায়ের অপু হয়েছিলেন ভারতের কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ১৯৫৯ সালে নির্মিত ‘অপুর সংসার’ সিনেমায় অভিনয়ের সময় সৌমিত্রর বয়স ছিল মাত্র ২৪ বছর। গত ১৯ জানুয়ারি ৮৩ পার করলেন তিনি।

‘অভিযাত্রিক: দ্য ওয়ান্ডার লাস্ট অব অপু’র শুটিং হবে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। সাদা-কালোতে তৈরি হবে ছবি। সিনেমাটি নিয়ে পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘অনেক বছর আমি “অভিযাত্রিক” নিয়ে গবেষণা করেছি। এটি নির্মাণ করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে দেখিয়েছি। তারপর এটা প্রযোজকের কাছে নিয়ে যাই।’