বন্ধই হয়ে যাবে সব প্রেক্ষাগৃহ?

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত দাশ। ছবি: সংগৃহীত
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত দাশ। ছবি: সংগৃহীত

আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে দেশে সিনেমা নির্মাণ। যাও কয়েকটি মুক্তি পাচ্ছে, মান নিয়ে থেকে যাচ্ছে অনেক প্রশ্ন। লোকসান গুনতে গুনতে হতাশ প্রযোজকেরা। অন্যদিকে আয় নিয়ে সন্তুষ্ট নন প্রেক্ষাগৃহের মালিকেরা। দেশের বাইরের ছবি প্রদর্শনেও রয়েছে কঠোর নিয়ম। তারপরও তাঁদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে নানাবিধ শর্ত আর নিয়মকানুন। এভাবে বেশি দিন চলতে পারে না। লোকসান গুনতে গুনতে পিঠ নাকি দেয়ালে ঠেকেছে। তাই প্রদর্শক সমিতির নেতারা প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দেশের সব প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন সমিতির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি ও মধুমিতা মুভিজের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘সরকারের সুদৃষ্টি ও আমাদের দাবিগুলো না মানা হলে ১ মাস পর অর্থাৎ আগামী ১২ এপ্রিল থেকে দেশের সব প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত দাশ বলেন, ‘দেশের চলচ্চিত্রের দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার উপায় নিয়ে আমরা তথ্যমন্ত্রী ও তথ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাঁরা কেউই প্রেক্ষাগৃহ বাঁচানো কিংবা দেশীয় সিনেমা নির্মাণ বাড়ানোর ব্যাপারে এবং উপমহাদেশীয় ছবি আমদানির বাধা নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেননি। দেশের প্রেক্ষাগৃহ ১ হাজার ২৩৫ থেকে নেমে এখন ১৭৪-এ দাঁড়িয়েছে। সিনেমা নির্মাণও বছরে এখন ৩৫ থেকে ৪০ টির মতো। এত কিছুর পরও পরিচালক এবং শিল্পীরা তাঁদের আয় বন্ধ হয়ে যাবে, এই অজুহাতে উপমহাদেশীয় ছবি আমদানির বিরোধিতা করে যাচ্ছেন। দীর্ঘ ৪৭ বছরেও পরিচালক ও শিল্পীরা ছবির গুণগত মান উন্নত করতে পারেননি। অথচ এটা সত্য যে, পাকিস্তান আমলে ভারতীয় বাংলা, হিন্দি সিনেমা ও পাকিস্তানি উর্দু সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের সিনেমা ব্যবসাসফল যেমন হয়েছে, তেমনি শিল্পমানও ছিল। প্রতিযোগিতার অভাবে ছবির গুণগত মান এখন নিম্নমুখী।’

দেশের চলচ্চিত্রের দুর্গতি চরমে। নানা সংকটে দিনে দিনে এই শিল্প হুমকির মুখে পড়ছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা ছিল ৫৬টি। ২০১৮ সালে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫-এ। গেল বছরজুড়ে নতুন ছবি নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে দুই শতাধিক ছবি নিবন্ধিত হয়। ওই বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেই নিবন্ধিত হয় প্রায় ৩৮টি ছবি। সেই তুলনায় চলতি বছরের দুই মাসে মাত্র ২৫টি ছবির নিবন্ধন হয়েছে। আর শুটিং শুরু হয়েছে মাত্র ৩টি ছবির। ছবিগুলো হচ্ছে ‘গাঙচিল’, ‘রোমিও রংবাজ’ ও ‘প্রেমচোর’। যেখানে ২০১৮ সালের প্রথম দুই মাসে ১২টির মতো ছবির শুটিং শুরু হয়েছিল।

ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ জানান, বছরের প্রথম দুই মাসে কোনো চলচ্চিত্র মুক্তি পায়নি। মার্চে যেসব ছবি মুক্তি পেয়েছে, তা দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়েছে। মূলত গত ৩ মাসে কোনো মানসম্মত সিনেমা মুক্তি পায়নি বলে দাবি করেন তিনি। এই অবস্থায় প্রেক্ষাগৃহগুলো মোটামুটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা হলিউডের ছবিগুলোর মতোই বলিউড ও উপমহাদেশীয় সিনেমা মুক্তির প্রথম দিনেই বাংলাদেশে প্রদর্শনের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত দাশ, সহসভাপতি আমির হামজা, সাধারণ সম্পাদক কাজী শোয়েব রশীদ, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল, কার্যনির্বাহী সদস্য আলমগীর শিকদার লোটন প্রমুখ। এদিকে বর্তমানে প্রচলিত অবস্থার বিপরীতেই দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠন। তাদের মতে, সাফটা চুক্তির আওতায় নতুন ছবি মুক্তি দিয়ে দেশীয় চলচ্চিত্রের ক্ষতি করা হচ্ছে।