বছরের শুরুটা উৎসবমুখর

বছরেরর শুরুতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত পথনাটক উৎসবে অংশগ্রহণ করে ঢাকার নাট্যদলগুলো
বছরেরর শুরুতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত পথনাটক উৎসবে অংশগ্রহণ করে ঢাকার নাট্যদলগুলো

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ছোট ছোট জটলা। চায়ের কাপ হাতে নাটক নিয়ে চলছে আলোচনা, তর্ক–বিতর্ক। ১৪ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ নাট্যোৎসব। সেখানে টানা এক সপ্তাহ চলছে নাটক জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা। বছরের শুরু থেকেই বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে ঢাকার নাট্যাঙ্গন উৎসবমুখর। নাট্যকর্মীদের মতে, উৎসব নাটকের জন্য ইতিবাচক। এতে দর্শকের সঙ্গে নাট্যাঙ্গনের একটা ভালো যোগাযোগ তৈরি হয়।

তাই বছর শুরু হতেই বেশ কয়েকটি নাট্যোৎসব দিয়ে প্রাণ ছড়িয়ে পড়ে নাট্যাঙ্গনে। পাশাপাশি এ বছরের বাড়তি পাওনা ছিল রাজধানীতে নতুন একটি মিলনায়তন—দনিয়া পাঠাগারের স্টুডিও থিয়েটার। নাটকের মোর্চা সংগঠন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাস মিলিয়ে তারা আয়োজন করেছে তিনটি নাট্যোৎসবের। এমনটি জানিয়েছে গ্রুপ থিয়েটার সূত্র। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা আয়োজন করে জাতীয় পথনাট্যোৎসবের। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে ঢাকার নাট্যদলগুলো। ঢাকাসহ

আটটি বিভাগে আয়োজিত হয় এই পথনাট্যোৎসব। আয়োজনে ঢাকা অংশে ৪৫ টির মতো দল অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার সূত্র জানিয়েছে, এবারের উৎসব নিয়ে বিশেষ কোনো ব্যাপার ছিল না। একেবারেই প্রতিবছরের রুটিন ওয়ার্ক। তবে নাটকগুলো যাতে মানসম্মত হয়, সেদিকে খেয়াল ছিল।

এ ছাড়া ৯ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল একুশে নাট্যোৎসব। একুশে বইমেলার পাশেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে আয়োজিত হয় এই উৎসব। সেখানে প্রতিদিন একটি করে পথনাটক ও একটি মঞ্চনাটক নিয়ে অংশগ্রহণ করে দলগুলো। বইমেলার পাশাপাশি এই নাট্য আয়োজন মেলায় জুগিয়েছে বাড়তি উৎসাহ।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের এ বছরের বিশেষ উদ্যোগ ছিল বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তনে একক নাট্যোৎসব। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সহায়তায় এই আয়োজনে একক নাটকগুলো মঞ্চায়িত হয়। ১ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত সাত দিনব্যাপী এই উৎসব চলে। উৎসবে মণিপুরি থিয়েটার, ঢাকা থিয়েটার, ধ্রুপদি অ্যাক্টিং স্পেস, বাংলাদেশ থিয়েটার, স্বপ্নদল, শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র ও নান্দীমুখ অংশগ্রহণ করে।

ফেডারেশনের আয়োজনে এই উৎসবগুলো বছরের শুরুতেই সাড়া জাগায় নাটকপাড়ায়। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ বলেন, ‘নিয়মিত নাট্যচর্চায় একটা গতি আনতে উৎসবের আয়োজন করা হয়। তা ছাড়া এখন তো দর্শক–সংকট একটা বড় সমস্যা। সে ক্ষেত্রে দর্শকের কাছে পৌঁছাতে, নাটক সম্পর্কে তাঁদের জানাতেও এমন উৎসবের আয়োজন করা হয়। নাট্যকর্মীদের বছরের শুরুতেই কর্মস্পৃহা বাড়ানো উৎসবের একটা কাজ।’

পথনাটকের মোর্চা সংগঠন বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদও আয়োজন করেছে পথনাট্যোৎসবের। ১ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত চলে এই আয়োজন। দেশের ৪৪টি নাটকের দলের নাটক প্রদর্শিত হয়েছে এই উৎসবে। এর মধ্যে ৪০টি নাটকই ছিল নতুন। নতুন নাটক এই আয়োজনের একটি বড় পাওয়া বলে মনে করেন নাট্যজনেরা। বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ গিয়াস বলেন, ‘আমাদের পথনাটক পরিষদের সিদ্ধান্ত ছিল ১ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত এই উৎসব হবে সম্পূর্ণ নতুন নাটক নিয়ে। আমাদের এই উৎসবে ৪৪টি নাটক মঞ্চায়িত হয়। সেখানে ৪০টি নাটকেরই প্রথম মঞ্চায়ন হয়। বাকি ৪ টির ১টি বা ২টি প্রদর্শনী আগে হয়েছে। বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নতুন নাটকের উৎসব হলো এটি।’

নাট্যজনদের মতে, বছরের প্রথম দিকে এমন উৎসবমুখর আয়োজন যেমন নতুন নাটক নির্মাণে সাহায্য করে, তেমনি দর্শকও বাড়ায়। নাট্যজন

রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘এটা খুবই ভালো প্রবণতা। নতুন দর্শক তৈরি হয়। তুলনামূলকভাবে নতুন নতুন নাটক আসছে। এটা খুবই আশার কথা। আমাদের মনে আশা জাগায়।’

এ ছাড়া পাশাপাশি নতুন একটি স্টুডিও থিয়েটারের উদ্বোধন ছিল এ বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। দনিয়া পাঠাগারের পৃষ্ঠপোষকতায় দনিয়া স্টুডিও থিয়েটার নামে এই মিলনায়তনের যাত্রা শুরু। একটি আন্তর্জাতিক একক নাট্যোৎসবের মাধ্যমে মিলনায়তনটিতে কার্যক্রম শুরু হলো।

এ ছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে আরণ্যক তাদের ৪৭ বছর পূর্তিতে আয়োজন করে ক্রান্তির মাদল নাট্যোৎসব। মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় তিন যুগ পূর্তিতে বছরব্যাপী আয়োজনের অংশ হিসেবে আয়োজন করে ঢাকা–দিল্লি নাট্যোৎসবের। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের নাটকের দল অংশগ্রহণ করে। বছরের এখনো তিন মাস শেষ হয়নি। এর মধ্যেই এতগুলো উৎসব ঘিরে নাট্যাঙ্গন বেশ চাঙা। আর এটি নাটকের জন্য লাভজনক হিসেবে দেখছেন নাট্যসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, ‘উৎসবে আমাদের দর্শক বাড়ে। প্রতিটি উৎসবেই সেমিনার থাকে, কর্মশালা থাকে। তাতে নাট্যচর্চার কাজও হয়। নাট্যসংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে। নাটক নিয়ে দর্শকেরা আলোচনা করেন। এর মাধ্যমে নাটকে বড় একটা লাভ হয়।’