মেশিনগুলো আর কাজে লাগে না, লাগবেও না কোনো দিন

পড়ে থাকা ল্যাবে নিয়মিত হয় শুটিং। ছবিটি সাহসী যোদ্ধা চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের সময় তোলা
পড়ে থাকা ল্যাবে নিয়মিত হয় শুটিং। ছবিটি সাহসী যোদ্ধা চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের সময় তোলা

সিনেমার ৩৫ মিলিমিটারের যুগ শেষ। রুপালি পর্দায় এখন ডিজিটাল যুগ। কিন্তু বিএফডিসিতে (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন) সিনেমার ৩৫ মিলিমিটার ফিল্ম রিলের কোটি কোটি টাকার মেশিনগুলোর কী অবস্থা? গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেল, বিএফডিসির প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার একাংশ ল্যাবজুড়ে পড়ে আছে দেবরি নামে ফ্রান্সের দুটি পজিটিভ প্রসেসর, ফিল্ম ল্যাব নামে অস্ট্রেলিয়ার তৈরি একটি নেগেটিভ প্রসেসর, ক্যালডার নামে যুক্তরাজ্যের তৈরি একটি সাউন্ড নেগেটিভ প্রসেসর, নিপনার স্মিথ নামে যুক্তরাজ্যের তৈরি একটি নেগেটিভ ক্লিনার, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি ব্যানেল অ্যান্ড হাওয়াল প্রিন্ট (বিএইচপি) মেশিনসহ আরও কিছু মেশিন।

ল্যাবের দেখভালের দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন তথ্য দিলেন, পড়ে থাকা এসব ভারী মেশিনের মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। ৩৫ মিলিমিটারের ফিল্ম রিল এখন আর কাজে না আসায় প্রায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে এসব মেশিনের আর ব্যবহার নেই। এ কারণে দামি মেশিনগুলোতে ধুলাবালু পড়ে মরিচা ধরার উপক্রম হয়েছে। বেশির ভাগই নষ্ট ও অকেজো। তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর পড়ে থাকলে নষ্ট হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক।’

কিন্তু মেশিনগুলো ফেলে না রেখে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যেত কি না—এ ব্যাপারে তিনি বলেন, এসব মেশিন যেসব কাজের জন্য তৈরি হয়েছে, সেই কাজই তো এখন আর নেই। তাই অন্য কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই। তবে মেশিনগুলো নিলামে বিক্রি করে দিলে কিছু টাকা আসতে পরে বলে জানান ওই ব্যক্তি। তিনি বলেন, মেশিনের মধ্যে মোটর, তামা, পিতল ও স্টিলগুলো থেকে অন্য কিছু তৈরি হতে পারে। পড়ে থাকা দামি মেশিনগুলোর বিষয়ে ল্যাবের প্রধানের দায়িত্বে থাকা রফিকুল ইসলাম প্রথমে কিছু না বললেও পরে বলেন, ‘৩৫ মিলিমিটারের ফিল্ম রিলের তো এখন কাজ নেই। তাই এগুলোর ব্যবহারও নেই। এ কারণে পড়ে আছে। আর এভাবে পড়ে থাকলে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তো থাকেই। কিন্তু আমরা সব সময়ই মেশিনগুলো যত্ন করে রাখার চেষ্টা করি।’

রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, সরকারি জিনিস অনুমতির বাইরে নিলামে তোলারও সুযোগ নেই। তবে তিনি জানান, সভায় আলোচনা হয়েছে, ভবিষ্যতে কবিরপুর বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটিতে মেশিনগুলো সংরক্ষণ করে রাখা হবে। পড়ে থাকা ল্যাবটি এখন শুটিংয়ের জন্য ভাড়া দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘ল্যাবের মধ্যে একবেলা শুটিংয়ে আট হাজার এবং পাশেই ল্যাবের কর্মকর্তার কক্ষ একবেলা আড়াই হাজার করে ভাড়া নিচ্ছি।’

জানা গেছে, ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে মনসুন রেইন পিকচারের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ছবির ২৮টি প্রিন্ট করার মধ্য দিয়ে ঢাকার সিনেমার ৩৫ মিলিমিটারের যুগ শেষ হয়েছে। মাঝেমধ্যে সরকারের আর্কাইভের জন্য কিছু কিছু ছবির প্রিন্ট করা হতো ল্যাবে। সবশেষ ২০১৬ সালে বসুন্ধরা, শঙ্খনীল ও রাজনন্দিনী ছবি আর্কাইভের জন্য প্রিন্ট করা হয়।