সহজ-সরল ছড়া ও ছন্দের কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

পঞ্চাশের দশকের শুরুতে সবাই কঠিন কঠিন করে কবিতা লিখেছেন। কিন্তু আবু জাফর লিখেছেন সহজ-সরল করে ছড়া ও ছন্দের কবিতা। ছড়া আর ছন্দের হলেও সেটা কিন্তু ছড়া নয়, কবিতাই ছিল।

কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় এই কথা বলেছেন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ স্মৃতি পরিষদ স্মরণসভার আয়োজন করে।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ স্মরণ শীর্ষক এই আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, সওগাত পত্রিকার সম্পাদকের বাড়িতে পাকিস্তান সাহিত্য পরিষদে কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। দীর্ঘ সময় ছড়া আর ছন্দে লিখলেও তাঁর কবিতা ভিন্ন দিকে মোড় নেয় ‘বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’ কবিতা দিয়ে। এর মধ্য দিয়ে তিনি গদ্যের মতো বড় কবিতা লেখা শুরু করেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, পঞ্চাশের দশকের কবিদের কবিতায় প্রচলিত একটি ধারা ছিল। সেই ধারাকে ভেঙে দেন কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। কবিদের কাছে ‘মা’ মানে ‘মাটি ও মানুষ’। আবু জাফর ওবায়দুল্লাহও মা-মাটি-মানুষের কবি। কিন্তু তিনি মায়ের মধ্যে পরিবেশ আর প্রকৃতিকেও খুঁজে পেয়েছেন। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতাতে তিনি যা বলেছেন, সেটা বলার জন্য সাহসের প্রয়োজন আছে, যা সবার নেই।

কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ এমনই একজন কবি, যিনি ধান বা গমখেতের দিকে তাকিয়ে বলে দিতে পারতেন এই জমি থেকে কত মণ ধান বা গম হবে। তিনি কবিতা লিখেছেন প্রচলিত ভাষায়। তাঁর কবিতা প্রবহমান নদীর মতো। যা বলতেন বা লিখতেন তা কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব নিয়েই লিখতেন ও বলতেন। সেই ছাপ তাঁর কবিতাতে বারবার প্রকাশ পেয়েছে।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ছোট ভাই রাশেদ খান মেনন বলেন, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ কবির পাশাপাশি একটি পরিবারের সন্তান ছিলেন। নিজস্ব রাজনৈতিক চেতনা তাঁর কবিতাকে সমৃদ্ধ করেছে। কবিতায় পরিবেশ বিপর্যয় বা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি আগে কখনো আসেনি। তাঁর কবিতায় প্রথম আমরা পরিবেশ বিপর্যয় বা জয়বায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি দেখতে পাই। বাংলাদেশ পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে, তা তিনি নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বলে গেছেন।

সভাপতি ও কবি রবিউল হোসাইন বলেন, তাঁরাই কবি যাঁরা শব্দকে শাসন করতে জানেন। আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ অবলীলায় শব্দকে শাসন করতেন। তিনি নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলেছেন। পরে দেখা গেছে সেটা কবিতা গেছে। আর সেই কবিতা পড়ে পাঠক ভেবেছেন, এ তো তাঁরই কথা।