বিয়েতে আমি বিশ্বাস করি না: শাহির শেখ

শাহির শেখ
শাহির শেখ
>
‘মহাভারত’, ‘দস্তান-ই-মহব্বত সেলিম আনারকলি’, ‘কুছ রঙ্গ প্যায়ার কে অ্যায়সা ভি’র মতো সফল সিরিয়ালের পর এবার অন্যরকম একটি কাজ করছেন শাহির শেখ। ভারতের স্টার প্লাস চ্যানেলে গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে নতুন সিরিয়াল ‘ইয়ে রিস্তে হ্যায় প্যায়ার কে’। এখানে মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। মুম্বাইয়ের এক পাঁচ তারকা হোটেলে ছোট পর্দার তারকা শাহির শেখের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি।

‘ইয়ে রিস্তে হ্যায় প্যায়ার কে’ সিরিয়ালে অভিনয় করার কারণ কী?
এ ধরনের সিরিয়ালের এখন খুব অভাব। এখন জাদুটোনা, ভৌতিক আর হেভি ড্রামার সিরিয়াল বেশি চলে। সেদিক থেকে ‘ইয়ে রিস্তে হ্যায় প্যায়ার কে’ সিরিয়ালের গল্প অনেক বাস্তব। আমি নিজেকে এখানে চরিত্রের সঙ্গে কোথাও মেলাতে পেরেছি। চরিত্রটি নিয়ে দারুণ উত্তেজিত। শুধু আমি নই, দর্শকদের মধ্য থেকেও অনেকে এই গল্পের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারবেন। আর ‘ইয়ে রিস্তে হ্যায় প্যায়ার কে’ সিরিয়ালে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। আর আমার মনে হয়, ভারতের টেলিভিশনের জন্য এখন এ ধরনের টেলিসোপ জরুরি।

‘ইয়ে রিস্তে হ্যায় প্যায়ার কে’র আবির কতটা শাহিরের মতো?
আমি আগে কখনো এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করিনি। এর আগে আমি ভালো সন্তান, ভালো স্বামী আর ভালো ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমাকে অধিকাংশ সময় খুব বুঝদার চরিত্রে দেখা গেছে। কিন্তু এখানে আমি অন্য মানুষ। আর আগেই বলেছি, চরিত্রটার সঙ্গে আমি নিজেকে মেলাতে পেরেছি। সিরিয়ালের ‘আবির’ অনেকটা আমারই মতো। আবির প্রাণোচ্ছল এক যুবক। সে নিয়মের ধার ধারে না। সমাজের তথাকথিত নিয়ম ভেঙে এগোতে চায়। সে বিশ্বাস করে, জীবন খুব ছোট। তাই প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ না করলে তা নষ্ট করা হয়। আমি মনেপ্রাণে যা যা বিশ্বাস করি, গল্পে আবিরও তা-ই বিশ্বাস করে। আমাদের দুজনের ভাবনা অনেকটা একই রকম। এমনকি আমাদের জীবনযাত্রারও মিল আছে। আমি যেদিন থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি, সেদিন থেকে নিজের মতো করে চলছি। আমি মনে করি, সমাজের নিয়ম আমাদের জন্য। আমরা নিয়মের জন্য না। সমাজ বিয়ে, সন্তান সবকিছু আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়।

‘ইয়ে রিস্তে হ্যায় প্যায়ার কে’ সিরিয়ালে অভিনয় করছেন শাহির শেখ
‘ইয়ে রিস্তে হ্যায় প্যায়ার কে’ সিরিয়ালে অভিনয় করছেন শাহির শেখ


বিয়ে নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
বিয়েতে আমি খুব একটা বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, মানুষের তখনই বিয়ে করা উচিত, যখন তিনি মন থেকে তা করতে প্রস্তুত থাকবেন। পরিবার বা সমাজ চায় বলেই বিয়ে করতে হবে, তার কোনো মানে নেই। অন্তর থেকে অনুভব করলেই বিয়ে করা উচিত। নিজের অমতে বিয়ে করার ফলে অনেক বিয়ে ভেঙে যেতে দেখেছি। আর একটা বিয়ে ভাঙা মানে অনেকগুলো সম্পর্ক একসঙ্গে ভেঙে যাওয়া। তাই নিজের মন যখন যেটা চায়, সেটাই করা উচিত। তবে এটা শুধুই আমার বিশ্বাস। এখনো নিজের পরিবারকে এসব বোঝাতে পারিনি। অন্যকে কী করে বিশ্বাস করাব?

শাহির শেখ
শাহির শেখ


‘মহাভারত’ সিরিয়ালে অর্জুন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘মহাভারত’ আপনার জীবনে কতখানি প্রভাব ফেলেছে?
আজ পর্যন্ত যা যা শিখেছি, তা কিন্তু নিজের কাজ থেকেই শিখেছি। স্কুলজীবন থেকে কর্মজীবন আমাকে অনেক বেশি কিছু শিখিয়েছে। সিরিয়ালের চরিত্রগুলো আমাকে মানুষ হিসেবে উন্নত করেছে। আমার প্রথম সিরিয়াল সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আর ‘মহাভারত’ যে আমার কত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, তা বলে শেষ করতে পারব না। আজ আমার মধ্যে যে মূল্যবোধ গড়ে উঠেছে, তা ‘মহাভারত’-এর জন্য। আমার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা ছিল যখন আমি তিনটি পর্ব শুধু ‘গীতা’ শুনেছি। আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এই তিনটি পর্ব। ‘মহাভারত’ আমাকে জীবনে অনেক কিছু শিখিয়েছে। তাই এরপর ‘কুছ রঙ্গ প্যায়ার কে’ সিরিয়ালের সময় আমার কাছে সবকিছু সহজ হয়ে যায়। আমি সম্পর্কের টানাপোড়েনকে সহজে উপলব্ধি করতে পেরেছি। আমি সেই সিরিয়ালকে পছন্দ করি, যার মাধ্যমে সমাজকে কিছু বার্তা দেওয়া যায়। একটা সিরিয়াল সমাজের আয়না হিসেবে প্রতিফলিত হয়। তাই আমাদের মাথায় রাখা উচিত, সিরিয়ালগুলো থেকে যেন আমাদের সমাজ উপকৃত হয়। সিনেমার ক্ষেত্রে যেমন রাজকুমার হিরানির মতো কিছু পরিচালক আছেন, যাঁরা এই ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের ছবিতে সমাজের প্রতি কোনো না কোনো বার্তা থাকে।

বলিউড থেকে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন?
প্রস্তাব আসেনি বললে ভুল হবে। তবে আমার মনের মতো চরিত্র ছিল না, তাই করা হয়নি। ‘দস্তান-ই-মহব্বত সেলিম আনারকলি’ সিরিয়ালের সময় আমার কাছে বড় বাজেটের হিন্দি ছবির প্রস্তাব আসে। তবে আমাকে বলা হয়েছিল, দুটোর মধ্যে একটাকে বেছে নিতে হবে। আমি সিরিয়ালের কাজকেই বেছে নিই। কারণ, সিনেমার জন্য আমাকে টানা দুই বছর সময় দিতে হতো। আর এর ভবিষ্যৎ আমার জানা ছিল না।

‘ইয়ে রিস্তে হ্যায় প্যায়ার কে’ সিরিয়ালে শাহির শেখ ও রিয়া শর্মা
‘ইয়ে রিস্তে হ্যায় প্যায়ার কে’ সিরিয়ালে শাহির শেখ ও রিয়া শর্মা


‘দস্তান-ই-মহব্বত সেলিম আনারকলি’ সিরিয়ালটি কিন্তু সেভাবে চলেনি।
এটা অনেক বড় বাজেটের কাজ ছিল। বিশাল দামি সেট বানানো হয়। এ ধরনের সিরিয়াল বেশি দিন চালানো যেকোনো চ্যানেলের পক্ষে কষ্টকর ছিল। আর এখন দর্শকের রুচি বদলেছে। টিভি চ্যানেলগুলোর কর্তৃপক্ষও চেষ্টা করছেন তা বুঝতে। তারা সেভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়।

পৌরাণিক গল্পের সিরিয়ালের পর নিজের ইমেজ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা একজন অভিনেতার জন্য মোটেই সহজ ব্যাপার না। কিন্তু আপনি খুব তাড়াতাড়ি মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন।
অনেক অভিনেতার এই সমস্যা হয়েছে। পৌরাণিক ধারাবাহিকের পর নিজের ইমেজ বদলানো সত্যি খুব বড় চ্যালেঞ্জ। আমি ‘মহাভারত’ সিরিয়ালের পর লম্বা বিরতি নিয়েছি। পরে সম্পূর্ণ অন্য এক লুকে ফিরে এসেছি। আর আমার অভিনীত ‘অর্জুন’ চরিত্রটি অনেকটা এই সময়ের মতো করে উপস্থাপন হয়েছে। আমি এমনভাবে অভিনয় করেছি, যাতে এই প্রজন্ম নিজেদের সঙ্গে অর্জুনকে মেলাতে পারে। সিরিয়ালে আমি, আমার ভাই, মা ও স্ত্রীর সঙ্গে এমনভাবে কথা বলতাম, যা দেখে মনে হতো অর্জুন যেন এ যুগের। তাই ছোটদের কাছে অর্জুন খুব প্রিয় ছিল। চরিত্রটির জন্য আমি সবার অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।