সাম লাইক ইট হটের অজানা দশ

সাম লাইক ইট হট ছবির পোস্টারে মেরিলিন মনরো, টনি কার্টিস ও জ্যাক লেমন
সাম লাইক ইট হট ছবির পোস্টারে মেরিলিন মনরো, টনি কার্টিস ও জ্যাক লেমন

সাম লাইক ইট হট ১৯৫৯ সালের ২৯ মার্চ মুক্তিপ্রাপ্ত ইতিহাস আলোড়ন করা এক চলচ্চিত্রের নাম। বিভিন্ন বিভাগে ছয়টি অস্কার মনোনয়ন পাওয়া এই চলচ্চিত্রকে ২০০০ সালে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মার্কিন কমেডি চলচ্চিত্রের স্বীকৃতি দেয়। এতে অভিনয় করেন মেরিলিন মনরো, টনি কার্টিস ও জ্যাক লেমন। ২০১৭ সালে বিবিসি পরিচালিত ৫২টি দেশের ২৫৩ জন চলচ্চিত্র সমালোচকও এই বিষয়ে একই রায় দেন। এ বছর চলচ্চিত্রটি মুক্তির অর্ধশত বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে।


মেরিলিন মনরো এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেই তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা স্বীকৃতি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার পান। অথচ মনরো প্রথমে শুগার চরিত্রের জন্য রাজি ছিলেন না, পরে কী মনে করে ‘হ্যাঁ’ করে দেন। ভাগ্যিস, রাজি হয়েছিলেন!


এই পুরস্কার আর হাসিমুখের পেছনে ছিল অবিশ্বাস্য সংখ্যক এনজি শট। ‘ইটস মি, শুগার’ তিন শব্দের এই ছোট্ট বাক্য ঠিকঠাক বলতে মেরিলিনের ৪৭টি টেক দিতে হয়েছে। ৩০ বার ‘শুগার, ইটস মি’, ‘ইটস শুগার, মি’ এ রকম উল্টাপাল্টা বলার পর পরিচালক বিলি উইল্ডার বাধ্য হয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে দেন। এখানেই ঘটনার শেষ নয়। ওয়ার্ডরোব তন্নতন্ন করে খুঁজতে খুঁজতে ‘হোয়্যার ইজ দ্য বোরবোন’ (বোরবোন বিশেষ ধরনের হুইস্কির নাম) না বলে মনরো ‘হোয়্যার ইজ দ্য হুইস্কি’ বা ‘হোয়্যার ইজ দ্য বনবন’ বলেছেন ৪০ বার। এরপর বিলি প্রথমে ওয়ার্ডরোবের একটি ড্রয়ারে লিখে দেন। এরপর ‘কোন ড্রয়ারে লেখা’ এটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব শুরু হলে সব কটি ড্রয়ারেই লিখে দেওয়া হয়। অবশেষে ৫৯তম বারে শটটি ‘ওকে’ হয়।


এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সময় মনরো অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, এ জন্য তিনি একটু মুটিয়ে গিয়েছিলেন। এ জন্য প্রচারণার স্থিরচিত্রে মনরোর যে ছবিগুলো দেখা যায়, তাতে মাথা মনরোর হলেও শরীর অন্যের!

সাম লাইক ইট হট-এর প্রথম প্রদর্শনীতে অনেকে দর্শকই বিরক্ত হয়ে হল থেকে বের হয়ে যান। নেতিবাচক রিভিউ আসে। অনেক স্টুডিও পরিচালককে বিভিন্ন শট বদলাতে ও বাদ দিতে পরামর্শ দেয়। কিন্তু বিলি তাঁর চলচ্চিত্রের বিষয়ে ছিলেন অনড়। তাঁর মতে, একটামাত্র শো চলচ্চিত্রের কিছুই নির্ধারণ করতে পারে না। হয়তো প্রথম শোটা ভুল প্রতিবেশীদের দেখানো হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে দ্বিতীয় শো শেষে হলভর্তি মুগ্ধ দর্শকেরা দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানান।


শুগার চরিত্রের জন্য পরিচালক প্রথমে মিটজি গেনরকে চেয়েছিলেন। আর জেরি/ড্যাফনি চরিত্রের জন্য ফ্রাঙ্ক সিনাত্রাকে।


জেরি/ড্যাফনি চরিত্রের জন্য জেরি লুইসকেও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে জ্যাক লেমন এই চরিত্রে অভিনয় করে অস্কার মনোনয়ন পান। লুইসের দাবি, তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে প্রতিবছর লেমনকে চকলেট পাঠান এবং চরিত্রটি ফিরিয়ে দেবার জন্য আফসোস করেন।


দুই পুরুষ অভিনেতা টনি কার্টিস ও জ্যাক লেমন ছবিতে নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। তাঁরা প্রথমে মেয়ের সাজ নিয়ে স্টুডিওর আশপাশে ঘুরঘুর করেন। কেউ সন্দেহ না করায় পরে সোজা ঢুকে পড়েন মেয়েদের জন্য নির্ধারিত মেকআপ রুমে। সেখানেও কেউ তাঁদের পুরুষ বলে সন্দেহ না করলে তাঁরা নিশ্চিত হন এবং শট দেন।


ছবিটি সাদাকালো ফরম্যাটে করার বিষয়ে যখন পরিচালক মোটেই মনরোকে রাজি করাতে পারছিলেন না, তখন হঠাৎ একটা কস্টিউম টেস্টে ধরা পড়ল যে টনি এবং জ্যাক সবুজ রঙের মেকআপ ব্যবহার করেছেন।


নাচের প্রশিক্ষক কার্টিস ও লেমনকে টানা এক সপ্তাহ ধরে হাই হিল পরে মেয়েদের মতো করে হাঁটানোর বৃথা চেষ্টা করে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। এমন সময় লেমন ঘোষণা দেন, তিনি আসলে মেয়েদের মতো হাঁটতে চান না, বরং একজন পুরুষ কীভাবে মেয়েদের মতো হাঁটে, সেটা শিখতে চান।

১০
জন লেমন এই ছবিতে অভিনয়ের সময় মনরো সম্পর্কে মন্তব্য করেন, ‘তিনি কখনোই তৈরি না হয়ে ক্যামেরার সামনে যেতেন না। কোনটি তাঁর জন্য যথাযথ, সেটি তিনি সবার থেকে ভালো বুঝতেন।’

জিনাত শারমিন, 
আইএমডিবি অবলম্বনে