উদ্যাপিত হচ্ছে বাংলাদেশেও

এমন জাতি–গোষ্ঠী–ধর্ম–বর্ণের মানুষ পাওয়া দুষ্কর, যাঁরা শিশুর হাতে পুতুল তুলে দেন না তাদের কান্না থামিয়ে মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। মানব সভ্যতার সমান বয়সী এই পুতুল হাত দিয়ে অথবা সুতা বা কাঠির সাহায্যে নড়াচড়া করিয়ে বিনোদন ও লোকশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে আসছে মানুষ। সেই ইতিহাস-ঐতিহ্যও হাজার বছরের। ভারতবর্ষ পুতুলনাট্যের আদিভূমি এবং বাংলাদেশে পুতুলনাট্যের ঐতিহ্য হাজার বছরের—এটি এর মধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। এই শিল্প আঙ্গিক এ অঞ্চলে পরিচিতি পেয়েছে ‘পুতুলনাচ’ পরিভাষায়। আর আঙ্গিকশৈলী, পরিবেশনা, শিল্পকুশলতা ইত্যাদি বিবেচনায় এটি পরিপূর্ণভাবে থিয়েটারের একটি সমৃদ্ধ শাখা বিধায় বর্তমানে এর পরিচিতি ‘পুতুলনাট্য’ হিসেবে।
আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পুতুলনাট্য দিবস। ২০০৩ সাল থেকে বিশ্ব পুতুলনাট্য সংস্থা দিবসটি পালন করে আসছে। আনন্দের কথা এই যে ২০১৩ সাল থেকে শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে বিশ্ব পুতুলনাট্য দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে বাংলাদেশে।
প্রায় সব দেশেই পুতুলনাট্যের প্রসার ঘটেছে। এটি জনিপ্রয়তা পেয়েছে বাংলাদেশেও। বর্তমানে শিশুশিক্ষা, তথ্যপ্রচার, গণসচেতনতা, বিজ্ঞাপন, পরিবেশ-উন্নয়ন, সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে পুতুলনাট্য শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম। যদিও আমাদের দেশে এ শিল্পের অবস্থা তেমন ভালো নয়, তারপরও প্রান্তিক পর্যায়ে এখনো রয়েছে প্রায় ৫০টি পুতুলনাট্য সংগঠন, যার মধ্যে বাস্তবক্ষেত্রে সক্রিয় আছে মাত্র ১২–১৫টি সংগঠন। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অতি পুরানো, জীর্ণ কিছু পুতুল দিয়ে খণ্ড কিছু কথাবার্তা, হাস্যকৌতুক-নকশা, সিনেমার গান ইত্যাদি পরিবেশন করে তারা। আর এদের বেশির ভাগ পরিবেশনা অনিয়মিত, মূলত মেলাকেন্দ্রিক। তবে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সংক্ষিপ্ত পরিসরে সে কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত বলার সুযোগ না থাকলেও এটা বলতেই হবে যে এসব কর্মসূচির ফলে পুতুলনাট্যের ক্রমোন্নতি হবে।
গত ২১ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছে ‘পুতুলনাট্যশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০১৮’ গেজেট। ‘পুতুলনাট্যশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা’ প্রাপ্তি উপলক্ষে এবার বড় পরিসরে নেওয়া হয়েছে পুতুলনাট্য দিবস উদ্যাপনের উদ্যোগ। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ১৯ থেকে ২৩ মার্চ পাঁচ দিনব্যাপী চলছে বিশ্ব পুতুলনাট্য দিবস ২০১৯। এতে থাকছে দেশের ২২টি পুতুলনাট্য দলের পরিবেশনা নিয়ে ঢাকা পুতুলনাট্য উৎসব, আলোচনা অনুষ্ঠান, গুণীজন সম্মাননাসহ নানা আয়োজন।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশের পুতুলনাট্য গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র’–এর ব্যবস্থাপনায় আজ অনুষ্ঠিত হবে আনন্দ শোভাযাত্রা। তা ছাড়া শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠানে এ সংগঠন পরিবেশন করবে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী রচিত পুতুলনাট্য কুঁজা বুড়ি।