আমি আগে স্টান্টম্যান পরে অভিনেতা

অক্ষয় কুমার
অক্ষয় কুমার
সব সময় ঝুঁকি নিতে ভালোবাসেন বলিউড সুপারস্টার অক্ষয় কুমার। ‘দ্য এন্ড’ নামের ওয়েব সিরিজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গায়ে আগুন লাগিয়ে মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন এই বলিউড তারকা। এবার কেশরি ছবিতে তাঁকে দেখা যাবে এক শিখ যোদ্ধার চরিত্রে। ছবি মুক্তির আগে ধর্ম প্রডাকশনসের অফিসে বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমার মুখোমুখি হন সাংবাদিকদের সঙ্গে। সেখানে ছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য

এর আগে আপনি অনেক স্টান্ট করেছেন। কিন্তু এবার মঞ্চে এলেন গায়ে আগুন লাগিয়ে। এতটা ঝুঁকি নিলেন?

আমি ছোটবেলা থেকে স্টান্ট করে আসছি। আর স্টান্টের ক্ষেত্রে আমার কখনো ঝুঁকি বা বিপদ আছে বলে মনে হয়নি। তবে আমি সবাইকে সব সময় বলে এসেছি যে বাড়িতে কেউ যেন এসব কিছু করার চেষ্টা না করেন। কারণ, অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে এসব করতে হয়। আমার বাবা-মা আমাকে সব সময় সহযোগিতা করে এসেছেন। আমি আগে স্টান্টম্যান, পরে অভিনেতা। ম্যায় খিলাড়ি তু আনাড়ি ছবিতে স্টান্ট করেই আমি কাজের সুযোগ পেয়েছি। এখানে আমার কোনো গডফাদার ছিল না যে যার জন্য আমি কাজের সুযোগ পেয়েছি। স্টান্টম্যান হয়েই আমি আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি।

কেশরি ছবিতে অক্ষয় কুমার
কেশরি ছবিতে অক্ষয় কুমার

সারাগড়ির যুদ্ধ নিয়ে আগে টিভি ধারাবাহিক হয়েছে। ‘কেশরি’ তা থেকে কতটা আলাদা?
ইতিহাসকে তো আমরা বদলাতে পারি না। ইতিহাসে যা আছে, তা–ই এই ছবিতে দেখানো হয়েছে। আমাদের পাঠ্যপুস্তকে এই যুদ্ধের কথা উল্লেখ নেই। তাই সবাই এই ২১ জন শিখের লড়াইয়ের ব্যাপারে সেরকমভাবে জানে না। মাত্র ২১ জন শিখ ১০ হাজার আফগান সৈনিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। গুগলে খুঁজলে দেখতে পাবেন, বিশ্বের সেরা পাঁচ যুদ্ধের মধ্যে এই যুদ্ধ দ্বিতীয় স্থানে আছে। আমরা অন্যান্য দেশের যুদ্ধের বিষয়ে জানি। কিন্তু আমাদের এত বড় যুদ্ধের বিষয়ে কিছু জানি না। আমি তাই মনে করি, কেশরি ছবিটা স্কুলে স্কুলে দেখানো উচিত। পড়ুয়াদের এই যুদ্ধের সম্পর্কে জানা উচিত। আমাদের দেশের এত বড় গর্বের কাহিনি সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের জানা প্রয়োজন।
আপনি নিজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কতটা জানতেন?
আমিও আগে সেভাবে এই যুদ্ধের কথা জানতাম না। শুধু এইটুকু জানতাম, ২১ জন শিখ রেজিমেন্ট ১০ হাজার আফগান সৈনিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন।
এই ছবিতে আপনাকে অন্য লুকে দেখা গেছে। আপনি নিজে একজন পাঞ্জাবি। তাই এই লুক কতটা উপভোগ করেছেন?
আমার মা পাঞ্জাবির লুকে দেখে খুব খুশি হয়েছেন। আর আমিও এই লুক খুব উপভোগ করেছি৷ মাথায় যখন পাগড়ি বেঁধেছি, তখন নিজের মধ্যে আপনা থেকেই এক দায়িত্ববোধ জেগে উঠেছিল। পিঠের শিরদাঁড়া সোজা হয়ে গিয়েছিল। আমি জানি না এই পাগড়ির মধ্যে কী রহস্য লুকিয়ে আছে। একবার মাথায় দিলেই অদ্ভুত একটা অনুভব হতো। সে সময় সবাই এক থেকে দেড় কিলো ওজনের পাগড়ি বাঁধত। আমার পাগড়ির ওজন ছিল দেড় কিলো। এত ভারী পাগড়ি বেঁধে লাফানো ঝাঁপানো সহজ কথা ছিল না। তলোয়ারের ওজন তখন ৩০ কিলোর মতো হতো। আসলে তখনকার মানুষ আসল ঘি খেত। তাই এত ভারী তলোয়ার নিয়ে লড়াই করার শক্তি তারা পেত। এখনকার মতো স্টেরয়েড নিত না। সত্যি বলতে কেশরির মতো ছবির অংশীদার হতে পেরে আমি গর্বিত। আমি আর করণ (জোহর) মিলে ছবিটা প্রযোজনা করেছি। আমি করণকেও বলেছি যে গর্ব হওয়া উচিত আমরা কেশরির মতো ছবি বানিয়েছি।
ব্যক্তিগত জীবনে কখনো কি এমন মুহূর্ত এসেছে যে ‘কেশরি’র মতো গর্ব অনুভব করেছেন?
কেশরির মতো গর্ব অনুভব করা কখনোই সম্ভব নয়। এখানে ২১ জন শিখের এক বিশাল সংগ্রাম ছিল। সেখানে আমার সংগ্রাম তুচ্ছ। আমি ভাগ্যের জোরে এখানে পৌঁছেছি। আমার সাফল্যের ৭০ শতাংশ ভাগ্য। আর ৩০ শতাংশ আমার পরিশ্রম। তাই কেউ যখন আমার আত্মজীবনী লেখার কথা বলেন, আমি না করে দিই। আমার মনে হয় না যে আমার জীবন নিয়ে লেখার কিছু আছে।
আপনার ও টুইঙ্কেল খান্নার সুখী দাম্পত্যের রহস্য কী?
আমরা একে অপরের কাজের জগতে কখনো নাক গলাই না। আমরা একে অপরকে সম্মান করি। আর সম্পর্কের মধ্যে স্পেস দিই। এর ফলে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীরতা পেয়েছে।
আপনার ছেলে আরভ এখন বয়ঃসন্ধিকাল পার করছে। অভিভাবক হিসেবে তাকে কীভাবে পথ দেখান?
আমি আর টুইঙ্কেল দুজনেই ওকে বাজে দিকগুলো সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছি। আজকালকার ছেলেমেয়েরা খুবই সচেতন। তারা ভালো-মন্দ খুব ভালো বোঝে। আমার বাবা আমাকে সব রকম স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি যেন কোনো বাজে কাজ লুকিয়ে না করি। তাই আমাকে কখনো বাজে দিকগুলো আকর্ষণ করত না। সে জন্য কোনো কু–অভ্যাসের শিকার আমি হইনি।