সুইজারল্যান্ড থেকে ফিরে...

মেহেদী হাসান। ছবি: আনন্দ
মেহেদী হাসান। ছবি: আনন্দ

বাঙালিরা তরকারিতে পাতা খায়, সুইজারল্যান্ডের রাঁধুনিরা এটা জেনেই অবাক। একজন চলচ্চিত্রকারের হাতের রান্না খেয়ে তৃপ্ত তাঁরা। তরকারিতে যে এত দিন ধরে পাতা দিয়ে আসছেন তা খেয়ালই করেননি তরুণ নির্মাতা মেহেদী হাসান! দেশের বাইরে গিয়ে নিজে রান্না করতে গিয় বুঝলেন তা। মনে মনে বললেন, ‘আসলেই তেজপাতা তো একপ্রকার পাতাই।’

আমরা যে জীবন যাপন করি, তাকে বাইরে আলাদা একটি চোখ দিয়ে দেখতে হয়। না হলে সারা জীবন তেজপাতা খেয়ে গেলেও বুঝতে পারব না, এটা যে আসলে একটা পাতাই। চলচ্চিত্রকারের কাজই নাকি তা–ই। জীবনকে অন্য চোখ দিয়ে দেখা। এই উপলব্ধির কথা জানালেন নির্মাতা মেহেদী। দুই মাস সুইজারল্যান্ডে ছিলেন চলচ্চিত্রের কাজ করতে। তারই অভিজ্ঞতা শুনতে যাওয়া নির্মাতার আদাবরের বাসায়। সুইজারল্যান্ডে থাকার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বললেন তাঁর সিনেমা নিয়ে অন্যান্য খবরও।

৭০তম লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবে ওপেন ডোরস হাব থেকে মেহেদী হাসানের চলচ্চিত্র প্রকল্প স্যান্ড সিটি সিএনসি পুরস্কার পায়। সুইজারল্যান্ডের লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসব বিশ্বের নামকরা উৎসবগুলোর একটি। সেখানে বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্রকারদের হারিয়ে বাংলা সিনেমা জিতে নিয়েছিল এই পুরস্কার। এই পুরস্কারের আওতায় ছবিটি বানাতে মেহেদী পেয়েছিলেন আট হাজার ইউরো। সঙ্গে সুযোগ ছিল সুইজারল্যান্ডে দুই মাস থাকার। সেই সুযোগটিই কাজে লাগালেন সম্প্রতি। কথা ছিল, পাণ্ডুলিপি ঘষামাজা করাতেই এই দুই মাস ব্যয় করবেন। কেমন কাটল তাঁর দুই মাস?

মেহেদী বলেন, দুই মাসে আবাসিক থাকার একটা সুযোগ ছিল। ওদের একটা ভিলা আছে। তিনতলা। এটা প্রায় ১০০ বছর পুরোনো। আমরা তিনজন শিল্পী ছিলাম সেখানে। জার্মানির একজন ভাস্কর, একজন ইউক্রেনের ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট ও আমি।

মেহেদী জানান, চারটা অঞ্চল থেকে চারজনকে নেওয়া হয় এখানে দুই মাস থাকার জন্য। লাতিন আমেরিকা, ইস্টার্ন ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়া। এখানে এশিয়া থেকে মেহেদীকে নির্বাচিত করা হয়। দুই মাস ওখানে নিজের প্রস্তাবিত সিনেমার কাজ ছাড়া কোনো কিছুই করতে হবে না। তবে মেহেদী কিন্তু এক সুযোগে দুই কাজ করে ফেলেছেন। থাকার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি উন্নয়নের পাশাপাশি করে ফেলেন সুইজারল্যান্ডের ওই শহরটি নিয়ে একটি ডায়েরি ফিল্ম। সেটি দেখানো হয় সুইজারল্যান্ডেই। তাঁরা বেশ আনন্দিত ও প্রশংসা করেন মেহেদীর।

সুইজারল্যান্ড শিল্পীদের জন্য একটু বন্ধুবৎসলই বলা চলে। এমন ধারণা মেহেদীর। তাঁকে দেওয়া হয়েছিল একটি ‘পাস’। যার মাধ্যমে তিনি সুইজারল্যান্ডের সব জাদুঘর দেখার সুযোগ পান। এর মধ্যে একটি জাদুঘরের কথা জানালেন তিনি। যেখানে দাগি আসামিদের শিল্পকর্ম রাখা। এটা অবাক করে দেয় মেহেদীকে। আলাপ করেন ওখানকার সাংবাদিক ও শিল্পীদের সঙ্গে।

কথা চলে। মাঝেমধ্যে থাকে চায়ের বিরতি। মেহেদী বলে চলেন। তার মধ্যে বলেন আরেকটি সুখবরও। এই প্রকল্পটি কান চলচ্চিত্র উৎসবের একটি বিশেষ আয়োজনে নির্বাচিত হয়েছে। উৎসবের লা ফেব্রিক দ্য সিনেমা দ্য ম্যুন্দ বিভাগে স্থান করে নিয়েছে প্রকল্পটি। এই সুযোগে প্রকল্পটি বিশ্বের নানা প্রযোজকের সামনে উপস্থাপন করার সুযোগ পাবেন তিনি। এ ছাড়া একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্রকারের তত্ত্বাবধানে একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণেরও সুযোগ পাবেন।

একের পর এক সুখবরে মেহেদীর ঘর ভরা। কিন্তু তিনি জানালেন আরেকটি বিষয়। সারা বিশ্বে কো-মার্কেটে নিজের প্রকল্প উপস্থাপনে তরুণ নির্মাতাদের প্রচুর সুযোগ। কিন্তু দেখা যায়, বাংলাদেশে এর ধারাবাহিকতা থাকছে না। একজন এই আসরে যাওয়ার পরে আরেকজন যেতে যেতে অনেক সময় পেরিয়ে যায়। এটা আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের জন্যই ক্ষতির। প্রতিবছরই বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশি তরুণদের অংশগ্রহণ করা উচিত। তাতে বাংলাদেশের নির্মাতাদের প্রতি বিশ্বের চলচ্চিত্র প্রযোজকদের আগ্রহ বাড়ে।