আমি আর এই ধরনের প্রেমের ছবি করতে পারি না: সালমান খান

সালমান খান
সালমান খান
সালমান খানের হাত ধরে বলিউডে পা রাখতে চলেছেন দুই নবাগত—প্রনুতন ও জহির ইকবাল। নিতীন কক্কর পরিচালিত নোটবুক ছবিতে দেখা যাবে এই তাজা জুটিকে। ভারতের মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে এই ছবির প্রযোজক হিসেবে বলিউড তারকা সালমান খান মুখোমুখি হন ভারতীয় গণমাধ্যমের। সেখানে প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্যও ছিলেন। আলাপচারিতার ফাঁকে আমাদের কিছু প্রশ্নেরও জবাব দেন সালমান।

‘নোটবুক’ ছবির সঙ্গে থাইল্যান্ডের ছবি ‘টিচার্স ডায়েরি’র কতটা মিল আছে?

মিল আবার কিসের? আমরা আমাদের পরিশ্রম, সততা দিয়ে সম্পূর্ণ অন্য ধাঁচে ছবিটি বানিয়েছি। ছবির মূল চিন্তাভাবনা শুধু টিচার্স ডায়েরি থেকে নেওয়া। বাকিটা সম্পূর্ণ নিজেদের মতো করে বানানো। এই ছবির প্রেম আমরা ভিন্নভাবে পরিবেশন করেছি। কাশ্মীরের অপার সৌন্দর্যের মধ্যে এই প্রেমের জন্ম নিয়েছে। ছবির শুটিং পুরোটাই কাশ্মীরে হয়েছে। সেখানে আমরা খুব সুন্দর একটি প্রেমের গল্প বুনেছি।

এই সিনেমাটি প্রযোজনা করার কারণ কী?

আমার কাছে আগে এই ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু এখন আমার ইমেজ বদলে গেছে। আমি আর এই ধরনের প্রেমের ছবি করতে পারি না।

প্রযোজনার ক্ষেত্রে আপনার বাবা গুণী প্রযোজক সেলিম খানের কোনো টিপস নিয়েছেন কি?

তিনি আমার সব চিত্রনাট্য সম্পর্কে জানেন। আমরা যা ছবি নির্মাণ করি তা নিয়ে সবার আগে তাঁর সঙ্গে বসে আলোচনা করি। ছবির পটভূমি সম্পর্কে তাঁকে জানাই। ছবিটা বানানোর পর আমরা একসঙ্গে বসে দেখি। এরপর তিনি তাঁর মতামত দেন। ছবিতে নতুন কিছু যুক্ত করব কি না, কোন দৃশ্য বাদ দেব, তার পরামর্শ তিনিই দেন।

আপনার হাত ধরে আবার দুই নবীন প্রতিভার অভিষেক হচ্ছে বলিউডে। ছবির নায়িকা প্রনুতন তো আপনার বন্ধু অভিনেতা মনীষ বেহেলের কন্যা। এখানে কি স্বজনপ্রীতি কাজ করেছে?

মনীষের রাজকন্যা প্রনুতন—তাই বলে যে আমি ওকে ছবিতে নিয়েছি এমনটা নয়। আমি কিন্তু বাইরে ওর (প্রনুতন) একটা অডিশন দেখেছি আগে। প্রনুতনকে তখন দারুণ লেগেছিল। আমি মনীষকে ফোন করে বলি, ‘প্রনুতন আইন নিয়ে পড়াশোনা করছে না?’ বন্ধু মনীশ আমাকে বলে, ‘ওর পড়াশোনা শেষ হয়ে গেছে। আর ও এখন অভিনয় করতে চায়। আমি ওকে অভিনয় করতে কীভাবে নিষেধ করতে পারি। ওর দাদি (নুতন) অনেক বড়মাপের অভিনেত্রী ছিলেন। অভিনয়ের টান তো ওর থাকবেই।’ জাহীর, প্রনুতন এরা দুজনেই নিজেদের যোগ্যতায় সুযোগ পেয়েছে। এই ছবিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য এদের একাধিক অডিশন দিতে হয়েছে। খুবই পরিশ্রম করেছে ওরা।

এ প্রজন্মের অভিনেতাদের কী পরামর্শ দিতে চান?

একটা কথাই বলব, যেকোনো ধরনের ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে। যদিও মানুষ জানে না তাদের জীবনে কখন কোন দিক থেকে ঝামেলা আসবে।

অভিনয়, না প্রযোজনা কোনটা বেশি উপভোগ করেন আপনি?

দুটোই উপভোগ করি। তবে প্রযোজক হিসেবে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়, দায়িত্ব নিতে হয়। আর্থিক দিকটা অবশ্য আমার প্রযোজনা টিমের অন্যরা দেখে নেয়। কিন্তু আমাকে ছবির চিত্রনাট্য, মিউজিক সবকিছুর দিকে খেয়াল রাখতে হয়।

পরিচালনার কথা কি কখনো ভেবেছেন?

অভিনয়জীবনের শুরুর দিকে পরিচালক হওয়ার ইচ্ছে ছিল। তবে যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। যা হয়নি, সেটাও ভালো হয়েছে। হা হা হা।

আপনি জীবনে কখনো ‘নোটবুকে’ নিজের কথা লিখেছেন?

একবার আমি ডায়েরি লেখা শুরু করেছিলাম৷ শুরুর দিকে আমি সব সত্যি কথা লিখতাম। আর আমার এই সত্যি লেখার জন্য অন্যদের জীবনে নানান সমস্যা চলে আসত। হা হা হা।

নোটবুক ছবিতে প্রনুতন ও জহির ইকবাল
নোটবুক ছবিতে প্রনুতন ও জহির ইকবাল


‘নোটবুক’ ছবিতে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। ছোটবেলায় আপনার প্রিয় শিক্ষক কে ছিলেন? এখনো কি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ আছে?
ফাদার হেনরি। তিনি একজন পাদরি। এখন ফাদার তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। এখনো আমার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে। আর একজন শিক্ষক ছিলেন ডি’সুজা বলে। পান্ডে স্যার আমাদের পিটি টিচার ছিলেন। তাঁদের প্রত্যকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয় এখনো। যেই শিক্ষকেরা আমাকে পেটাতেন, তাঁরা আমার খুব প্রিয় ছিলেন। শিক্ষকদের থেকে আমি শিখেছি কীভাবে পরিস্থিতিকে সামাল দিতে হয়। চতুর্থ শ্রেণি থেকে আমার মার খাওয়ার পর্ব শুরু হয়, তা কলেজ অবধি গড়ায়। ফাদার এলবু আমাদের প্রিন্সিপাল ছিলেন। সব সময় আমাকে তাঁর সংস্পর্শে থাকতে হতো। সম্প্রতি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। আজ আমি যা কিছু হয়েছি তা ফাদার হেনরি আর ফাদার এলবুর মারের জন্য।

জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্রের এই রমরমার সময় কি আপনার জীবনের ওপর বায়োপিক নির্মাণ করতে চাইবেন?
ওরে বাবা, আমার বায়োপিক! আমার জীবন অত বড় মাপের হলে তো আমি কারাগারে থাকতাম না। আমাকে সত্যিকারের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। জীবন যদি সত্যিই লার্জার দ্যান লাইফ হতো তাহলে ওখানে আমার যাওয়ার প্রয়োজন হতো না।