দর্শক চাইলেই থাকবেন রোদেলা

মালয়েশিয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন রোদেলা জান্নাত। সেখানে থাকতেই সিনেমার পোকা তাঁর মাথায় বাসা বাঁধে। কঠিন বিষয় নিয়ে পড়াশোনার ফাঁকে কী করে নাম লেখালেন সিনেমার জগতে—এ গল্প শুনতেই রোদেলার সঙ্গে এফডিসিতে আড্ডা জমে আমাদের। আগামী মাসেই শাকিব খানের বিপরীতে শাহেনশাহ ছবির মধ্য দিয়ে রোদেলার অভিষেক হচ্ছে। নবাগত এ অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন শফিক আল মামুন
রোদেলা জান্নাত। ছবি: খালেদ সরকার
রোদেলা জান্নাত। ছবি: খালেদ সরকার

স্বপ্ন হলো সত্যি
শিকারী বসগিরি ছবি দেখে রোদেলার মনে ইচ্ছা জেগেছিল, ‘ইশ্‌! যদি শাকিব খানের সঙ্গে অন্তত একটি ছবিতে অভিনয় করতে পারতাম!’ রোদেলা তখন সবে মালয়েশিয়ায় গেছেন তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য। বলছি ২০১৬ সালের কথা। সে সময় শিকারী ছবির প্রচারণায় শাকিব খানও গিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। প্রিয় নায়কের সঙ্গে অনেক চড়াই–উতরাই পেরিয়ে দেখা করেন রোদেলা। সেই সাক্ষাতের কথা মনে করে তিনি বলেন, ‘সেদিন শাকিব ভাইকে মনের কথা জানালে তিনি আমার কাছে জানতে চান, আমি নাচ জানি কি না। আমি তো ছোটবেলা থেকেই ক্লাসিক্যাল শিখে আসছি। এটা জানার পর, শাকিব ভাই আমাকে মডার্ন নাচ শেখার পরামর্শ দেন।’ এর বেশ কিছুদিন পর রোদেলা ঢাকায় ফেরেন ছুটি কাটাতে। সেই সময় হঠাৎ একদিন শাকিবের ফোন! রোদেল বলেন, ‘হঠাৎ একদিন শাকিব ভাই জানালেন এক ছবিতে দুজন নায়িকা থাকবে। দুজনেরই ছবিতে সমান গুরুত্ব। আমাকে প্রস্তাব দেন। আমি কোনো কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে যাই।’ এভাবেই শুরু হয় সিনেমার জগতে রোদেলার বিচরণ।

এই ফাঁকে বলে বলে রাখি, রোদেলা এখন মালয়েশিয়ার লিমককউইং বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড ইটস রোল ইন দ্য মডার্ন অর্গানাইজেশন’ বিষয়ে পিএইচডি করছেন। এর আগে বাংলাদেশের দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেছেন তিনি।

ব্যক্তি শাকিব, সহশিল্পী শাকিব
রোদেলার চোখে ঢাকার চলচ্চিত্রে পাহাড়সমান জনপ্রিয় শাকিব খান। সহশিল্পী হিসেবে যেমন গুণী, ব্যক্তি শাকিবও তেমন গুণী। আবার সুদর্শনও। রোদেলা বলেন, ‘সহশিল্পী হিসেবে কাজের সময় দেখেছি, দারুণ সহযোগিতাপূর্ণ মানুষ শাকিব খান।’ তাঁর সঙ্গে শুটিংয়ে একটি অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে রোদেলা বলেন, ‘একটি দৃশ্য ছিল, শাকিব খান আমার গালে ছোট্ট একটা চুমু দেবেন। কিন্তু শুটিংয়ে এত মানুষের সামনে আমি ঘাবড়ে যাই। লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম। কোনোভাবেই দৃশ্যটা করা যাচ্ছিল না। শাকিব ভাই বোঝালেন, এটাই তো সিনেমা। সাধারণ একটা ব্যাপার। তা–ও দৃশ্যটি করতে তিন-চারবার শট দিতে হয়েছিল। শাকিব ভাই না থাকলে হয়তো আরও বেশি সময় লাগত।’

প্রতিযোগিতা নয়, অনুকরণ
এক ছবিতে দুজন নায়িকা থাকলে গল্পে কে কতটুকু জায়গা পেল, কার কয়টি গান থাকছে ছবিতে—এসব বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের গল্প শোনা যায়। কিন্তু শামীম আহমেদ পরিচালিত শাহেনশাহ ছবির এক নায়িকা রোদেলা, আরেক নায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে নিয়ে বললেন উল্টো কথা। প্রতিযোগিতা নয়, ফারিয়াকে অনেকটাই অনুসরণ করে কাজ করেছেন তিনি। বলেন, ‘চলচ্চিত্রে তিনি আমার বড়। তাঁর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করিনি। বরং তাঁকে অনুসরণ করে কাজ করেছি। তিনি বেশ হাসিখুশি ও খোলা মনের মানুষ।’

ফারিয়ার গুণের কথা উল্লেখ করে রোদেলা বলেন, ‘শুটিংয়ে একদম গুরুগম্ভীর থাকেন না। সবার সঙ্গে মজা করেন, গল্প করেন। যে কয়দিন একসঙ্গে কাজ করেছি। বেশ মজা হয়েছে।’

পছন্দ করলে আছি, না করলে বিদায়

শাকিব খানের নায়িকা মানে বাড়তি আলোচনায় থাকা—এটা রোদেলা তাঁর অভিষেক অনুষ্ঠানের পর থেকেই আঁচ করতে শুরু করেছেন। ধুমধাম করেই রোদেলাকে নতুন ছবির নায়িকা হিসেবে সবার সামনে এনেছিলেন শাকিব। এরপর থেকে রোদেলা তাঁর প্রথম ছবি মুক্তির অপেক্ষা করে যাচ্ছেন। কিন্তু এর ফাঁকে আর নতুন কোনো ছবিতে অভিনয় করছেন রোদেলা? এই প্রশ্নের জবাবে রোদেলা জানান, নতুন ছবিতে চুক্তি করবেন প্রথম ছবি মুক্তির পর। তিনি বলেন, ‘শাহেনশাহ মুক্তি পাওয়ার পর দর্শক প্রতিক্রিয়া দেখব। আমার কাজ সবাই পছন্দ করছেন কি না, আমাকে পর্দায় ভালো দেখাচ্ছে কি না—এসব বিষয়ে দর্শকের মন্তব্য নিয়েই পরের ছবিতে কাজের সিদ্ধান্ত নেব। যদি দর্শক পছন্দ করেন, তাহলে আছি; না হলে বিদায়।’