নিজেকে দেখে আঁতকে ওঠেন দীপিকা!

দীপিকা পাডুকোন
দীপিকা পাডুকোন

বলিউডে সাহসী নারীদের তালিকায় নিশ্চিতভাবেই দীপিকা পাড়ুকোনের নাম থাকবে প্রথম সারিতে। এবার বড় পর্দায়েও এ রকম একজন অ্যাসিড আক্রান্ত নারীর চরিত্রে অভিনয় করছেন। সেই ছবির ফার্স্ট লুক প্রকাশ পায় দীপিকা পাড়ুকোনের ইনস্টাগ্রামে। সেখানে দীপিকা পাডুকোনকে দেখে আঁতকে, শিউরে ওঠেন ভক্তরা। প্রথমে নিজেকে দেখে আঁতকে ওঠেন দীপিকা নিজেও। কোথায় সেই চিরচেনা সুন্দর চেহারা? এ যে অ্যাসিড আক্রান্ত বীভৎস এক মুখ! তবে সেই মুখের এক কোণে তখনো লেগে আছে সেই হাসি, যে হাসি কেড়ে নিতে পারেনি অ্যাসিডও। যে হাসি অ্যাসিড–সন্ত্রাসীদের চিৎকার করে বলে, অ্যাসিড মুখ পোড়াতে পারলেও হাসি থামাতে পারে না। জীবন বা স্বপ্ন কোনোটাই পোড়ানো যায় না অ্যাসিডে।

দীপিকা পাডুকোন
দীপিকা পাডুকোন

অ্যাসিড–সন্ত্রাসের শিকার লক্ষ্মী আগরওয়ালের জীবনী নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রের নাম ‘ছপাক’। ক্যামেরার সামনে দীপিকা পাড়ুকোনের চরিত্রের নাম মালতী। আর ক্যামেরার পেছনে আছেন ‘রাজি’ বানিয়ে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারজয়ী নির্মাতা মেঘনা গুলজার। ছবি দেখে ইতিমধ্যে অনেক ভক্ত চলচ্চিত্রটি দেখার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ ধরনের সাহসী আর অনুপ্রেরণাদায়ক চরিত্র বাছাইয়ের জন্য ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছেন দীপিকা পাডুকোনকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে ‘মালতী’র ছবি এখন অনেকের মধ্যেই কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে। দিল্লিতে পুরোদমে ছবির শুটিং চলছে। কুর্তা, পায়জামা পরা দীপিকা করিডরে হাঁটছেন, শুটিংয়ের এ রকম একটি ভিডিও ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি আদালতের একটি দৃশ্য। কেননা ভিডিওতে আইনজীবীর পোশাকে একজন সহকর্মীকেও দেখা যায়।

খুব সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক, কী ঘটেছিল লক্ষ্মী আগারওয়ালের সঙ্গে। ভারতের তরুণদের অনেকেই তাঁকে চেনেন ‘প্রেরণাদায়ক বক্তা’ হিসেবে।

লক্ষ্মী আগারওয়াল দিল্লির একজন সাধারণ নারী, যিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে ভয়ংকরভাবে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের শিকার হন। ‘নাঈম’ নামের প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি বয়সী এক লোক লক্ষ্মীকে প্রথমে প্রেমের ও পরে বিয়ের প্রস্তাব দেন। স্বাভাবিকভাবেই লক্ষ্মী ও তাঁর পরিবার তা প্রত্যাখ্যান করে। ২০০৫ সালের এক সুন্দর সকালে লক্ষ্মী যখন হেঁটে বাজারে যাচ্ছিলেন, তখন বিয়ারের বোতলভর্তি অ্যাসিড ছুড়ে দেওয়া হয় তাঁর দিকে। অ্যাসিডে পুড়ে যায় লক্ষ্মীর মুখ, হাত। মুহূর্তেই সুন্দর মুখ হারিয়ে যায় অ্যাসিডের বীভৎসতার আড়ালে। রাস্তায় গড়িয়ে পড়ে চিৎকার করতে থাকেন লক্ষ্মী, আশপাশের মানুষগুলো তখনো হতভম্ব হয়ে দেখেছে সেই দৃশ্য! প্রায় পাঁচ মিনিট পর এক ট্যাক্সিওয়ালা এগিয়ে আসেন। পাঁজাকোলা করে তাঁকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যান। শুরু হয় যমে মানুষে টানাটানি। সেবার ডাক্তারদের হার না মানা মানসিকতা লক্ষ্মীকে ফিরিয়ে আনে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে।

দীপিকা পাডুকোন
দীপিকা পাডুকোন

লক্ষ্মীর গল্পটা হয়তো শেষ হয়ে যেত এখানেই। যেমন শেষ হয়ে যায় অন্যান্য হাজারো অ্যাসিডদগ্ধ নারীর। স্বাভাবিক জীবন শেষ হয়ে যেত ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে জীবনকে বয়ে একটা স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত টেনে নেওয়ার এক যন্ত্রণাদায়ক ক্লান্তিকর যাত্রায়। কিন্তু দ্বিতীয়বার জীবন পেয়ে হার মানেননি লক্ষ্মী। ২০০৬ সালেই হাইকোর্টে পিআইএল দাখিল করেন, বেআইনিভাবে রাস্তায় অ্যাসিড বিক্রি করা যাবে না। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের স্বাক্ষর নিয়েছেন এই আইন পাস করতে আবেদনের জন্য। দীর্ঘ সাত বছরের সংগ্রাম শেষ হয় ২০১৩ সালে। অবশেষে আদালত রায় দেন, ‘প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ছাড়া অ্যাসিড কেনাবেচা করা যাবে না, পুরো ব্যাপারটাতে সরকারের নজরদারি থাকতে হবে।’

এর মধ্যে নিজের পড়াশোনা শেষ করেছেন। অ্যাসিড আক্রান্ত নারীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে খুলেছেন এনজিও। এই হার না মানা মনোভাবের জন্য সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা লক্ষ্মীকে পুরস্কৃত করেছেন। তা ছাড়া ভারত সরকারও তাঁকে ভূষিত করেছে নানা পুরস্কারে। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্মাননা।

বর্তমানে এক কন্যাসন্তানের জননী লক্ষ্মী একটা টিভি চ্যানেলে উপস্থাপিকা হিসেবে যুক্ত আছেন। সেই লক্ষ্মীই ‘মালতী’ হয়ে বড় পর্দায় হাজির হবেন দীপিকার এই নতুন ছবিতে। অ্যাসিড আক্রান্ত দীপিকা কী করেন, তা দেখতে যদিও তর সইছে না দীপিকার ভক্তদের। তবে সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে অন্তত ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। চমৎকার একটি চলচ্চিত্রের জন্য এটুকু সময় তো অপেক্ষা করাই যায়, তা–ই না?