'পারলা দয়াল পারলা, এই মরারেই মারলা'

‘পারলা দয়াল পারলা’ গানের ভিডিওতে চিরকুটের সদস্যরা
‘পারলা দয়াল পারলা’ গানের ভিডিওতে চিরকুটের সদস্যরা

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে মারার কষ্ট ছুঁয়ে গেছে চিরকুটের সদস্যদের। নুসরাতের এমন মৃত্যু স্তব্ধ করেছে গানের এই দলের সদস্যদের। তাই তো নুসরাত আর তাঁর মতো এ দেশের অসংখ্য মেয়ের কষ্টের কথা ভেবে গতকাল শনিবার রাতে ইউটিউবে একটা গান ভিডিও প্রকাশ করেছে চিরকুট। গান ভিডিওর শুরুতে লেখা আছে, ‘সব বৈশাখে রঙ থাকে না। নুসরাতের জন্য গাইতে হলো।’ গানটির শিরোনাম ‘পারলা দয়াল পারলা’। গানের কথা, সুর ও সংগীত আর এই সময়ে অন্যরকম একটি ভিডিও প্রকাশের ভাবনাকে সবাই প্রশংসা করেছেন। জানা গেছে, ‘পারলা দয়াল পারলা’ শিরোনামের এই গান এর আগে ‘আসমানি’ নামের একটি সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে।

চিরকুটের অন্যতম সদস্য শারমীন সুলতানা সুমী আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন সংগীতকর্মী হিসেবে সমাজের অনিয়ম ও সমস্যায় গানই আমাদের প্রতিবাদ, প্রতিরোধের ভাষা। আমাদের গানের কথা, সুর আর গায়কি দিয়ে যদি মানুষের ভেতরের চেতনা, মূল্যবোধ ও রুচির সংস্কৃতির জাগরণ ঘটাতে পারি, তাহলে সেটাই সার্থকতা। নুসরাতের ঘটনা সবার মতো আমাদের গানের দলের সদস্যদের তাড়িত করেছে। যন্ত্রণা দিয়েছে। স্তব্ধ করে দিয়েছে। সংবেদনশীলতার জায়গা থেকে মনে হয়েছে, এই ঘটনায় কিছু বলা উচিত। সচেতন মানুষ হিসেবে মনে হয়েছে এটুকু তো করা উচিত। নুসরাত এবং নুসরাতের মতো প্রতিদিন অনাকাঙ্ক্ষিত, পাশবিক ঘটনার শিকার হওয়া এমন অসংখ্য মেয়ের জন্য মনে হয়েছে এটা করা উচিত।’

‘পারলা দয়াল পারলা’ গান নিয়ে সুমী বলেন, ‘গানটা কয়েক মাস আগে করেছিলাম। এবার গানটি ভিন্ন উপস্থাপনার কথা ভাবলাম। পরশু রাতের সিদ্ধান্তে গানটি রেকর্ডিং ও ভিডিও করা হয়। স্থপতি মারুফ খুব ভালো ভিডিও নির্মাণ করেন। তাঁকে সব সময় পাশে পাই। সেদিন আমাদের ফোন পেয়ে তিনি চলে এলেন। গানটির সঙ্গে নীরব বাজিয়েছেন জিওশ্রেড। গাইলাম। এভাবেই হয়ে গেল। আর গান ভিডিওটি সাদাকালো রাখার অন্যতম কারণ, এমন দুঃসহ একটা বেদনাদায়ক ঘটনার পর বৈশাখের রংও ম্লান হয়ে যায়।’

‘পারলা দয়াল পারলা, এই মরারেই মারলা’ গানটি ফেসবুকে প্রকাশ করে সুমী লিখেছেন, ‘বিচার চাইতে গিয়ে আগুনে পোড়ার ঠিক শেষ মুহূর্তে জানি না নুসরাতের এমনটাই মনে হয়েছিল কি না। এপারে জীবন ভার, রূঢ়, বর্বর, অস্বাভাবিক। ওপারে তুমি নিশ্চয় ভালো থাকবে নুসরাত।’

৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় নুসরাত আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা তাঁর গায়ে আগুন দেয়। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ওই দিন রাতে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। গত বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান।

এর আগে গত ২৭ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা। গত রোববার চিকিৎসকদের কাছে দেওয়া শেষ জবানবন্দিতে নুসরাত বলেছিলেন, নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা পরা চারজন তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই চারজনের একজনের নাম শম্পা।