বরুণ-আলিয়া ভবিষ্যতের শাহরুখ-কাজল?

বরুণ ধাওয়ান-আলিয়া ভাট এবং শাহরুখ খান ও কাজল। নতুনেরা এলে পুরোনোদের জায়গা ছেড়ে দিতে হয়
বরুণ ধাওয়ান-আলিয়া ভাট এবং শাহরুখ খান ও কাজল। নতুনেরা এলে পুরোনোদের জায়গা ছেড়ে দিতে হয়

শাহরুখ খান-কাজল জুটির সঙ্গে অন্য কোনো জুটির তুলনা চলে? লোকে কিন্তু তুলনা করতে চায়। নতুনেরা এলে পুরোনোদের জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। সে রকম পুরোনোদের সাফল্যের সঙ্গে নতুনদের সাফল্যের তুলনা করার একটা রেওয়াজ কিন্তু চলেই আসছে। নতুন এক জুটিকে সামনে এনে তাই ভারতীয় এক সংবাদমাধ্যম দেখাতে চেয়েছিল, আসলেই কি শাহরুখ-কাজল জুটির বিকল্প হতে পারেন তাঁরা? ফল ব্যর্থ হয়েছে। তার অবশ্য অনেক কারণ রয়েছে।

গত শতকের নব্বইয়ের দশক কাঁপানো জুটি শাহরুখ খান ও কাজল। একসঙ্গে সাতটি ছবিতে অভিনয় করেছেন তাঁরা। ছবিগুলো ছিল সেই সময়কার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল ছবি। অন্যদিকে এ জুটিকে সত্যিকারের প্রেমিক-প্রেমিকা হিসেবেই হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন দর্শক। বলা যায়, যুগল হিসেবে নজির সৃষ্টি করেছিলেন তাঁরা। এমন সফল জুটি খুব কমই পেয়েছে বলিউড।

সম্প্রতি বলিউডে এসেছে বেশ কিছু নতুন মুখ। তাঁদের মধ্যে বরুণ ধাওয়ান ও আলিয়া ভাট অন্যতম। ইদানীং নানা কারণে আলোচনায় থাকছেন প্রায় দুজনই। সেই ২০১২ সালের ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ ছবির পর আবারও নতুন একটি ছবিতে একসঙ্গে দেখা যাবে তাঁদের। ছবির নাম ‘কলঙ্ক’। ইতিমধ্যে এ জুটিকে নিয়ে ভোটাভুটির আয়োজন করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। প্রশ্ন ছিল, ‘শাহরুখ-কাজলের বিকল্প আইকন হিসেবে দাঁড়াতে পারবেন বরুণ-আলিয়া?’ ৬৭ শতাংশ ভোটার মত দিয়েছেন, অসম্ভব। শাহরুখ-কাজলের জায়গা কখনোই অন্য কোনো জুটি নিতে পারবে না। এক ভক্ত তো লিখেই ফেলেছেন, ‘এই চিরসবুজ জুটির জায়গা কেউ নিতে পারে না।’ অন্য এক মন্তব্যকারী লিখেছেন, ‘কাজলের জায়গা যদিও আলিয়া নিতে পারে, শাহরুখের জায়গা কোনোভাবেই বরুণ ধাওয়ানের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়।’

করণ জোহর পরিচালিত বরুণ-আলিয়ার ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ ছবিটা দর্শকমহলে বেশ প্রশংসিত হয়। পরে এই জুটিকে দেখা গেল ‘বদরিনাথ কি দুলহানিয়া’ এবং ‘হাম্পটি শর্মাকি দুলহানিয়া’ ছবিতে। এ ছবি দুটিও প্রশংসিত হয়। পর্দায় আসছে এ জুটির নতুন চমক, ‘কলঙ্ক’। ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন মাধুরী দীক্ষিত, আদিত্য রায় কাপুর, সোনাক্ষী সিনহা ও সঞ্জয় দত্তর মতো শিল্পীরা। আগামী বুধবার মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি।

শাহরুখ খান ও কাজল বলিউডে তাঁদের যৌথযাত্রা শুরু করেন ১৯৯৫ সালে। ছবির নাম ‘বাজিগর’। বাজিমাত করে দিয়েছিল সেই ছবি। শুধু কি সেটা? ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ মুক্তির পর তো রীতিমতো তাঁরা হয়ে গেলেন মহাতারকা। ছবিতে শাহরুখ-কাজলের চরিত্র দুটির নাম ছিল রাজ-সিমরান। তখনকার দিনের বাস্তব জীবনের প্রেমিক-প্রেমিকারা একে অন্যকে এই নামে ডাকতে শুরু করেছিলেন। তারপর একে একে মুক্তি পেল শাহরুখ-কাজল জুটির ‘কাভি খুশি কাভি গম’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘করণ অর্জুন’ এবং ‘দিলওয়ালে’।

অসম জনপ্রিয় দুই জুটিকে নিয়ে কেন এই তুলনা? দিন কয়েক আগে এক সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বরুণ ধাওয়ান বলেন, তাঁর ও আলিয়ার সঙ্গে নাকি শাহরুখ-কাজল জুটির অনেক মিল। বরুণ বলেন, শাহরুখ-কাজল সাতটি সফল ছবিতে জুটি বেঁধেছিলেন। আমরা তাঁদের কাজ দেখে বেড়ে উঠেছি। আসলে আমরা বিরাট কোহলির সঙ্গে শচীন টেন্ডুলকারের তুলনা করি, শচীনের সঙ্গে করি সুনীল গাভাস্কারের। তুলনায় দোষের কী আছে? বিষয়টি অনেকটা বড় ভাইয়ের সঙ্গে ছোট ভাইয়ের তুলনার মতো। তুলনার ভাসা ভাসা একটা জায়গা রাখলেও আমি কিন্তু বেশ পরিশ্রম করি। একসময় দর্শকেরাই বলবেন যে, বরুণ-আলিয়া আমাদের সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়েছে।’

‘আগামী পাঁচ বছরে যদি শাহরুখ-কাজলের জনপ্রিয়তার স্তরে পৌঁছাতে চান?’ এমন প্রশ্নে বরুণ বলেছেন, ‘সেটা অসম্ভব। তাঁরা অসাধারণ, সে জন্যই আজও তাঁদের নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। ওই স্তরে পৌঁছাতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হবে।’

আর পর্দার রসায়নে? সেখানে কি শাহরুখ-কাজলের স্তরে পৌঁছাতে পারবে বরুণ-আলিয়া? বরুণ বলেন, ‘আমি তো সেই চেষ্টাই করি। সেটা কেমন হয়, একমাত্র পর্দায় বোঝা যায়। আমরা ছোট্ট কোনো কাজ করলেও সেটার একটা প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। আমরা চেষ্টা করি অভিনয় না করে সত্যি সত্যি কাজটা করার। তবে আলিয়ার ক্ষেত্রে যেটা হয়, আমি বোঝার চেষ্টা করি যে কী করতে হবে।’

আলিয়ার কী মত এ ব্যাপারে? আলিয়া বলেছেন, ‘আমার আর বরুণের পর্দার কাজ নিয়ে খুব বেশি ক্রেডিট নেওয়ার কিছু নেই। সত্যি বলতে চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক যা চান, আমরা সেটাই করার চেষ্টা করি। যদিও সেই কাজে যথেষ্ট ভালোবাসা থাকে। কেননা, আমরা সবাই দর্শকদের একটা ব্যতিক্রম কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি, যেটা তাঁরা অনেক দিন মনে রাখবেন।’

মজার কাহিনি হচ্ছে, ১৫ বছর আগে যখন ‘কলঙ্ক’ ছবির পরিকল্পনা করছিল যশরাজ ফিল্মস, তখন ভাবা হয়েছিল শাহরুখ খান-কাজলের কথাই। আর ছবিটা পরিচালনার কথা ছিল করণ জোহরের। নিজের বইতে করণ জোহর লিখেছেন, ‘বাবা জীবিত থাকাকালীন দেশ বিভাগের আগের ঘটনা নিয়ে একটা দারুণ গল্প লিখেছিলাম। পটভূমিটা ছিল অনেক বড়। সেখানে শাহরুখ, অজয়, রানি এবং কাজলের কথা ভেবেছিলাম। সেটার ভেতরে ছিল দেশ, হিন্দু-মুসলিমসহ নানা বিষয়। সেটার নামই রেখেছিলাম ‘কলঙ্ক’।’ হিন্দুস্তান টাইমস