ফেরদৌসের পর ফেঁসে যাচ্ছেন 'রাজা রাজচন্দ্র'

ফেরদৌস ও গাজি আবদুন নূর
ফেরদৌস ও গাজি আবদুন নূর

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে প্রচার অভিযানে অংশ নিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন জি বাংলার জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘রাণী রাসমণি’র অন্যতম চরিত্র ‘রাজা রাজচন্দ্র’। চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের বাগেরহাটের ছেলে গাজি আবদুন নূর। ভারতে বাংলা সিরিয়ালের দর্শকদের কাছে তিনি এখন খুবই জনপ্রিয়। জানা গেছে, গত রোববার ভবানীপুরে তৃণমূলের প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন তিনি। এ ছাড়া দমদম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের নির্বাচনী প্রচারেও ছিলেন তিনি। ওই সময় সৌগত রায়ের সঙ্গে খোলা গাড়িতে দেখা গেছে তাঁকে। এবার তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিচ্ছে বিজেপিসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকেও ভিসা বাতিল করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।

এদিকে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশের চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদের ভিসা বাতিল করে তাঁকে অবিলম্বে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এরপর ফেরদৌস গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশে ফিরে যান। ফেরদৌসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ভিসার শর্ত ভঙ্গ করে গত রোববার উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ আসনের তৃণমূল প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। ফেরদৌসের ভিসার শর্ত ছিল, তিনি ভারতে এসে চলচ্চিত্রে শুটিং করতে পারবেন, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। সেই শর্ত ভেঙে তিনি একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারে যোগ দেন। তাঁর ভিসার মেয়াদ ছিল ২০২২ সাল পর্যন্ত। ১৪ এপ্রিল ফেরদৌস এই ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। ওই দিনই তৃণমূলের একটি নির্বাচনী প্রচার মিছিলে অংশ নেন তিনি।

এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করে বিজেপি। এই রাজনৈতিক দল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, কীভাবে একজন বিদেশি ভারতের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারেন? এরপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় কলকাতার অভিবাসন দপ্তরে এবং বিদেশি নাগরিক নিবন্ধন অফিসে। পাশাপাশি প্রতিবেদন চাওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছেও। অভিবাসন দপ্তর থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর গতকালই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেরদৌসের ভিসা বাতিল করে তাঁকে অবিলম্বে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়। নির্দেশ পাঠানো হয় উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপারকেও। পাশাপাশি তাঁকে ভারতে ‘কালো’ তালিকাভুক্ত করা হয়।

ফেরদৌসকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জে তৃণমূল প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে যোগ দিতে দেখা যায়। তিনি হেমতাবাদ, বাঙালবাড়ি, নওদা, বিষ্ণুপুর, মাড়াইকুড়া ও চইনগরের বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে করে তৃণমূল প্রার্থীর পক্ষে রোড শোতে অংশ নেন। এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কানহাইয়ালাল আগরওয়াল। এরপর ফেরদৌস বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ওই দিন ফেরদৌসের সঙ্গে ছিলেন টালিউডের দুই তারকা অঙ্কুশ হাজরা ও পায়েল। এ ব্যাপারে রাজ্য নির্বাচন কর্মকর্তা আরিজ আফতাবের কাছে অভিযোগ জানায় বিজেপি।

জানা গেছে, রায়গঞ্জ লোকসভা আসনে রয়েছে প্রচুর সংখ্যালঘু মুসলিমের বাস। জনসংখ্যার হারে মুসলিমরা এখানে বেশি। এখানে বিজেপির প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী, কংগ্রেসের প্রার্থী দীপা দাসমুন্সি এবং সিপিএম প্রার্থী বর্তমান বিদায়ী সাংসদ মোহাম্মদ সেলিম।

এই ঘটনার পর তীব্র প্রতিবাদ করেছে বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘তৃণমূল বিদেশি তারকা এনে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে। এমন ঘটনা এর আগে দেখিনি। কাল হয়তো ইমরান খানকে প্রচারে ডাকবে তৃণমূল।’ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এভাবে ভারতের একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারে বিদেশি তারকা আসতে পারেন? তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইন মানেন না। ভোটার কম পড়লে রোহিঙ্গাদের ডেকে আনবেন। এই ঘটনার নিন্দা জানাই।’

এর পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃণমূলের নেতা মদন মিত্র। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অকৃত্রিম বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাই এটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে হয়েছে। এর জন্য নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো প্রশ্ন নেই।’

এই ঘটনার পর নির্বাচন কমিশনে ফেরদৌসের নির্বাচনী প্রচারের ভিডিওসহ অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপির নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, ফেরদৌসের গ্রেপ্তার দাবি করেন বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার।

পশ্চিমবঙ্গের পৌর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘অকারণে জল ঘোলা করছে বিজেপি। কে কার হয়ে প্রচার করছে, তা নিয়ে কারও কিছু আসে–যায় না। কিন্তু বিজেপির পায়ের তলার মাটি সরে গেছে। তাই তারা জল ঘোলা করছে।’

বিজেপি নেতা রাহুল সিনহাও দাবি করেছেন, ভিসার শর্ত ভঙ্গ করার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ এ বিষয়ে তদন্ত করুক। ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস নয়। এই ঘটনায় ভারতের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয়েছে।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয় বর্গীয় বলেছেন, ‘তৃণমূল এবার অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকতে দিচ্ছে। তারা বাংলাদেশের নাগরিকদের নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে। ভারতের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটি একটি অশনিসংকেত।’

কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের প্রেস সচিব মোফাকখারুল ইকবাল প্রথম আলোকে বলেছেন, ফেরদৌসকে বলা হয়েছে, তিনি যেন শুটিং বন্ধ করে অবিলম্বে দেশে ফিরে যান। নির্বাচন শেষ হলে তিনি যেন ফের শুটিংয়ের জন্য কলকাতায় আসেন। যদিও এই নির্দেশের পর ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেরদৌসের ভিসা বাতিল করে, তাঁকে কালো তালিকাভুক্ত করে নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দেয়।