ফেরদৌসের জন্য অপেক্ষা করবেন ঋতুপর্ণারা

ঋতুপর্ণা ও ফেরদৌস
ঋতুপর্ণা ও ফেরদৌস

তৃণমূলের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে বিপাকে পড়া বাংলাদেশের চিত্রনায়ক ফেরদৌসের জন্য অপেক্ষা করবেন ঋতুপর্ণারা। ‘দত্তা’ সিনেমায় ফেরদৌসের সহশিল্পী তিনি।

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় ফেরদৌসকে তাৎক্ষণিক ভারত ছাড়ার আদেশ দেয় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, এমন কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁর মেয়াদ থাকা ভিসাও বাতিল করা হয়েছে। এমনকি দেশটিতে তাঁকে কালো তালিকাভুক্তির খবরও প্রকাশিত হয়েছে।

ফেরদৌসের ভিসা বাতিল ও কালো তালিকাভুক্তির কারণে শুটিং চলতে থাকা ‘দত্তা’ ছবিটি নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে ছবির প্রধান অভিনয়শিল্পী ঋতুপর্ণা আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বললেন, ‘আমরা ফেরদৌসের জন্য অপেক্ষা করব। আশা করছি এই ঝামেলা ফেরদৌস কাটিয়ে উঠে আবার শুটিংয়ে ফিরবেন।’

আজ সকালে সিঙ্গাপুর গেছেন ঋতুপর্ণা। সেখান থেকেই হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। বললেন, ‘ফেরদৌস আমার বহু বছরের বন্ধু। আমাদের সম্পর্কটা পারিবারিকও। আমার চিন্তা, কোনো রকমে ওর যেন কোনো ক্ষতি না হয়।’

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে ‘দত্তা’ নির্মিত হচ্ছে, যেখানে ফেরদৌস বিলাস চরিত্রে আর ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বিজয়ার চরিত্রে অভিনয় করছেন। ছবিটি পরিচালনা করছেন নির্মল চক্রবর্তী। শুটিং নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন এই নায়িকা। তাঁর চিন্তা দীর্ঘদিনের বন্ধু, সহকর্মী এবং ভালো মানের একজন অভিনেতার জন্য। ঋতুপর্ণা বললেন, ‘ছবি নিয়ে কিছুই ভাবছি না। “দত্তা” ছবিটি ফেরদৌসকে নিয়েই হবে, ও–যখন সময় দেবে তখনই হবে। আমার কাছে “দত্তা” কোনো ফ্যাক্টর না, আমার কাছে ফ্যাক্টর হচ্ছে সব জটিলতা থেকে ফেরদৌসের মুক্ত হওয়ার বিষয়টা। খামোখা একজন ভালো শিল্পী, ভালো মানুষ ঝামেলায় পড়ে গেল।’

ঋতুপর্ণার মতে, ‘ফেরদৌস দীর্ঘদিন ধরে এই চলচ্চিত্রশিল্পে কাজ করছে। সমানতালে দুই বাংলায় সমান সম্মান নিয়ে কাজ করেছে। মানুষের ভালোবাসা অর্জনের পাশাপাশি অনেক সম্মাননাও অর্জন করেছে। আমাদের অনেক সুপারহিট ছবিও আছে। আমরা দুজন পারিবারিক বন্ধুও। আমার মনে হয় না, এটার ব্যাপারে ও পুরোপুরি অবগত ছিল। না জেনেই হয়তো কাজটা করেছে। শিল্পী হিসেবে তার হয়তো আবেগ কাজ করেছে। শিল্পী হিসেবেই অনুষ্ঠানে গেছে। আমি নিশ্চিত, ও যদি জানত এ রকম একটি আইন আছে, তাহলে সেখানে মোটেই যেত না। এই ব্যাপারগুলো তার ক্ষেত্রে বিবেচনা করা যেতেই পারে। চলচ্চিত্রশিল্পে ওর ইতিবাচক ভাবমূর্তির কথাটাও ভাবা যেতে পারে। আমি চাইব, ও যাতে আবার দুই বাংলায় অবাধে কাজ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।’

ফেরদৌসের ঘটনাটি ঋতুপর্ণা প্রথম জানতে পারেন টেলিভিশনের খবর থেকে। এর পর থেকে খুব চিন্তায় ছিলেন। গতকাল বন্ধু ফেরদৌসের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথাও হয়েছে। জানালেন, ‘ফেরদৌসের সঙ্গে ১১ এপ্রিল ছবিটির শুটিং করি। গত মঙ্গলবার নির্বাচনী বিতর্কের কথাটি জানতে পারি। এটুকু বলতে পারি, ফেরদৌস টালিউডের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সার্বিকভাবে তাকে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।’

মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় ফিরে বুধবার বিকেলে পুরো বিষয় নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ফেরদৌস। বললেন, ‘একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে অন্য একটি দেশের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ কোনোভাবেই উচিত হয়নি। আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আশা করি, সংশ্লিষ্ট সবাই আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’

গত রোববার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কানহাইয়ালাল আগরওয়ালের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন ফেরদৌস। তিনি রায়গঞ্জ আসনের করণদিঘি থেকে ইসলামপুর পর্যন্ত তৃণমূলের প্রচার মিছিলে অংশ নেন। এলাকাটি বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে। নির্বাচনী ওই প্রচারে ফেরদৌসের সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় বাংলা সিনেমার দুই তারকা অঙ্কুশ হাজরা ও পায়েল।

ফেরদৌসের অংশগ্রহণের পর তীব্র প্রতিবাদ করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘তৃণমূল তো বিদেশি তারকা এনে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে।’ তাঁর এ অংশগ্রহণের বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ করে বিজেপি। এরপর দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে প্রতিবেদন চায়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপরই মঙ্গলবার রাতে বিমানে ঢাকায় ফেরেন ফেরদৌস। এদিন রাত সাড়ে আটটায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে ঢাকায় রওনা হন তিনি।